ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার আছিম শাহাবুদ্দিন ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কলেজ পরিচালনা কমিটি গঠনের নামে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। এক বছর ধরে কলেজের আয়-ব্যয়ের টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে অনুমোদন ছাড়াই তিনি কোটি টাকা নয় ছয় করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন নির্বাচিত কমিটির সদস্যরা।
এর জেরে কলেজের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নাহিদুল করিম অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পেলেই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সুপারিশ পাঠাবেন বলে জানিয়েছেন ইউএনও।
নির্বাচিত সদস্যদের অভিযোগ, কলেজ কর্তৃপক্ষ গত নভেম্বরে নিয়মিত কলেজ পরিচালনা কমিটি নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করে। ওই নির্বাচনে আবু সাইদ চৌধুরী, আবুল বাশার, নজরুল ইসলাম অভিভাবকদের ভোটে নির্বাচিত হন। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা ক্লাসের সময় তাদেরকে পরিচয় করিয়ে দেন কলেজের অধ্যক্ষ মকবুল হোসেন। কিন্তু ওই কমিটি নিয়ে অধ্যক্ষ তালবাহানা শুরু করেন। তাদেরকে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিয়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসে অ্যাডহক কমিটি গঠন করেন। এ নিয়ে নির্বাচিত কমিটির সদস্য ও শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হলে কলেজে আসায় অনিয়মিত হয়ে যান অধ্যক্ষ। এক বছরের কলেজের ফরম ফিলাপ, ভর্তি ফিসহ অন্যান্য খাতের প্রায় কোটি টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে অধ্যক্ষের কাছেই রেখে দেন। বিনা অনুমোদনে সেই টাকা থেকে শিক্ষক কর্মচারীদের ৬ মাসের বেতন ও দুটি বোনাস বাবদ প্রায় ৪০ লাখ টাকা বিতরণ করেন। এক বছরের কলেজের অন্যান্য খাতের বড় অঙ্কের টাকা শুধু একটি ভাউচার মূলে তছরূপ করেন। শিক্ষক ও কর্মচারীর বেতনের ৪০ লাখ টাকা ও ভাউচার মূলে খরচ করা মোটা অঙ্কের টাকার জন্য অ্যাডহক কমিটির আহ্বায়ক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অনুমোদন নেয়া হয়নি। এক বছরে অ্যাডহক কমিটির কোন মিটিং করেননি কলেজের অধ্যক্ষ।
নির্বাচিত অভিভাবক প্রতিনিধি আবু সাইদ চৌধুরী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে, আমরা ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। আমাদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিচয় করে দিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ। এক বছর ধরে কমিটি অনুমোদনের জন্য দিনের পর দিন আমাদের হয়রানি করে গোপনে গত ফেব্রুয়ারি মাসে অ্যাডহক কমিটি গঠন করে। নিয়মিত কমিটি কলেজের দায়িত্ব বুঝে নিলে তার অনিয়ম দুর্নীতি প্রকাশ পেয়ে যাবে এই ভয়েই তড়িঘড়ি করে অ্যাডহক কমিটি গঠন করেন। আমরা আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছি। সুষ্ঠু তদন্ত হলে সব দুর্নীতি প্রকাশ পাবে।
কলেজের অধ্যক্ষ মকবুল হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, কলেজ পরিচালনা কমিটির নির্বাচন সঠিকভাবে না হওয়ায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দেয়নি। অনুমোদন না হওয়ার বিষয়টি তিনি কেন গোপন করলেন জানতে চাইলে তিনি কোন কথা বলেননি। কলেজের এক বছরের টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে তিনি কিভাবে খরচ করলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ভুল হয়ে গেছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নাহিদুল করিম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমি যত দিন ধরে ওই কলেজের অ্যাডহক কমিটির দায়িত্বে আছি সরকারি অংশের বিল ছাড়া আমি কোন কাগজে স্বাক্ষর করিনি। কলেজের অধ্যক্ষ আমার সঙ্গে পরামর্শ না করেই ব্যাংকে টাকা জমা না দিয়ে কোটি টাকা কিভাবে খরচ করলেন তা আমার বোধগম্য নয়। কলেজ পরিচালনা কমিটির নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা ও ব্যাংকে টাকা জমা না দিয়ে কিভাবে টাকা খরচ করলেন জানতে আলাদা দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হবে।