রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে টেকনাফ বন্দরের সাবেক কম্পিউটার অপারেটর নুরুল ইসলামকে জাল টাকা, ইয়াবা, বৈদেশিক মুদ্রাসহ গ্রেফতার করেছে র্যাব। গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। চাকরিরত অবস্থায় নুরুল বন্দরকেন্দ্রিক প্রভাবশালী দালাল চক্র গড়ে তুলে বিপুল অর্থের মালিক বনে যান। বর্তমানে তাঁর সম্পদের পরিমাণ ৪৬০ কোটি টাকা।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে আজ মঙ্গলবার এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
নুরুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি ভোলার ধুনিয়া গ্রামে। তাঁর কাছ থেকে ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৫০০ টাকার জাল নোট, ৩ লাখ ৮০ হাজার মিয়ানমারের মুদ্রা উদ্ধার করা হয় বলে র্যাব জানিয়েছে।
র্যাব কর্মকর্তা কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ২০০১ সালে নুরুল টেকনাফ বন্দরে চুক্তিভিত্তিক দৈনিক ১৩০ টাকা বেতনে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর বন্দরে নিজের অবস্থান কাজে লাগিয়ে অল্প সময়ের ব্যবধানে তিনি চোরা কারবারি, শুল্ক ফাঁকি, অবৈধ পণ্য খালাস, দালালির কাজে জড়িয়ে পড়েন।
এরপর তিনি বন্দরে অসাধু একটি দালাল চক্র তৈরি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। তাঁর সিন্ডিকেটের সদস্যসংখ্যা ১০ থেকে ১৫। সিন্ডিকেটের সহায়তায় নুরুলের নেতৃত্বে চক্রের সদস্যরা পাশের দেশ থেকে কাঠ, শুঁটকি মাছ, বরই আচার, মাছ আনার আড়ালে অবৈধ পণ্য নিয়ে আসতেন। এর বাইরে টেকনাফ বন্দর, ট্রাকস্ট্যান্ড, বন্দরে জাহাজের আসা–যাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি।
র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, টেকনাফ বন্দরের একসময়কার সামান্য কম্পিউটার অপারেটর থেকে ৪৬০ কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া নুরুল ইসলামের ঢাকায় ৬টি বাড়ি রয়েছে, যার আনুমানিক মূল্য ৭৩ কোটি টাকা। বাড়ির পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ১৩টি প্লট আছে, যার মূল্য ১৬৫ কোটি টাকা। ৪টি রিকশার গ্যারেজ আছে, যার মূল্য ৩১ কোটি টাকা। সাভারে আছে ৭টি জমি, যার মূল্য ১১৮ কোটি টাকা। টেকনাফ শহরে আছে জমিসহ বাগানবাড়ি, যার দাম ২০ কোটি টাকা। এ ছাড়া ভালো ২টি জমি আছে, যার দাম ১২ কোটি টাকা। সেন্ট মার্টিনে নুরুলের যে জমি রয়েছে তার দাম ১২ কোটি টাকা। নুরুলের স্ত্রীর রয়েছে একটি ব্যক্তিগত গাড়ি। আর নুরুলের ব্যাংকে জমা আছে ১ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
কীভাবে এত সম্পদের মালিক হলেন নুরুল
সামান্য কম্পিউটার অপারেটর থেকে কীভাবে এত বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেন নুরুল, সে ব্যাপারে র্যাবের কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের বলেন, ‘কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি করার সময় বড় বড় ব্যবসায়ী, বন্দরে যাঁরা কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন, তাঁদের সঙ্গে তিনি সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন। এ সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে তিনি তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট কাজ আদায় করেন। কীভাবে শুল্ক ফাঁকি দেওয়া যায়, সেসব কৌশল তিনি ভালোভাবে জানেন। চাকরিরত অবস্থায় নামে-বেনামে বিভিন্ন সিন্ডিকেটের হয়ে কাজ করতেন নুরুল। ওই সময়ই তিনি ভোলা, টেকনাফ, সেন্ট মার্টিনে জমি কেনেন। তখন থেকে তিনি জমি কেনাবেচার ব্যবসা করতেন। মূলত অবৈধ সম্পদকে বৈধ হিসেবে দেখানোর জন্য ২০০৯ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি পাঁচটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এ প্রতিষ্ঠানগুলো আমদানি-রপ্তানি ব্যবসায় জড়িত। গত বছর তিনি নাম লেখান রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়।
কাদের সহযোগিতায় নুরুল অল্প সময়ের ব্যবধানে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন, সে ব্যাপারে র্যাবের কর্মকর্তা কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সাংবাকিদকের বলেন, প্রাথমিকভাবে নুরুল সিন্ডিকেটের কোনো সদস্যের নাম এখনো জানাননি। জিজ্ঞাসাবাদে নিশ্চয়ই এসব তথ্য বেরিয়ে আসবে। এ বিষয়ে যাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন, র্যাব পরবর্তী সময়ে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে।
বাসায় পাওয়া যায় চার হাজার ইয়াবা
টেকনাফকেন্দ্রিক ইয়াবা ব্যবসায় নুরুল জড়িত বলে জানান র্যাব কর্মকর্তা কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, ‘নুরুল ইসলাম টেকনাফকেন্দ্রিক ইয়াবা বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত বলে আমরা জানতে পেরেছি। তাঁর বাসা থেকে সাড়ে চার হাজার ইয়াবা জব্দ করা হয়েছে। ঢাকার মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাঁর সখ্য রয়েছে।’
নুরুলের বেশির ভাগ সম্পদ স্ত্রী ও ভাইয়ের নামে
র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নুরুল ইসলাম কম সম্পদ রেখেছেন নিজের নামে। বেশির ভাগ সম্পদ রেখেছেন তাঁর স্ত্রী ও ভাইয়ের নামে। নুরুল বন্দরের যে পদে চাকরি করতেন, এখন সেই পদে চাকরি করেন তাঁর সৎভাই রনি। এখনো নুরুল টেকনাফ বন্দরের দালালি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন। সম্প্রতি নুরুল ঢাকার সাভারে তিন একর জমির ওপর একটি পার্ক বানানোর কাজে হাত দেন। একটি জাহাজও কেনার চেষ্টা করেছিলেন।