দেশে করোনা টিকার নিবন্ধন বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। টিকার মজুদ কমে আসায় এবং নতুন টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে গতকাল বুধবার থেকে নিবন্ধন বন্ধ করা হয়। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিবন্ধন বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর আগে টিকার মজুদ কমে আসায় গত ২৬ এপ্রিল থেকে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ করে দেয় সরকার।
এ ব্যাপারে অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান গতকাল রাতে বলেন, আজ (গতকাল) থেকে নিবন্ধন বন্ধ করা হয়েছে। কবে নাগাদ আবার নিবন্ধন চালু হবে, সেটা জানিয়ে দেওয়া হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, কয়েক দিনের মধ্যেই টিকার মজুদ শেষ হচ্ছে। নতুন টিকা পাওয়ার ব্যাপারে এখনো কোনো নিশ্চয়তা নেই। ফলে নতুন নিবন্ধন দরকার নেই। টিকা এলে আবার নিবন্ধন শুরু করা হবে।
গত ২৭ জানুয়ারি দেশে টিকাদান কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের দিন থেকে টিকার নিবন্ধন শুরু হয়। সেদিন থেকে ‘সুরক্ষা’ নামে অ্যাপে করোনার সম্মুখসারির ১৮ শ্রেণির মানুষ নিবন্ধন করতে পারে। এর মধ্যে সাধারণ নাগরিকদের জন্য ৫০ ঊর্ধ্ব বয়সী মানুষও নিবন্ধনের সুযোগ পায়। প্রথম এক সপ্তাহে নিবন্ধনে অনাগ্রহ দেখা যায়। পরে বয়স শিথিল করে ৪০ ঊর্ধ্ব করা হলে নিবন্ধনে বেশ সাড়া পড়ে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বিকেল ৫টা পর্যন্ত টিকার জন্য মোট নিবন্ধন করেছেন ৭২ লাখ ৪৮ হাজার ৮২৯ জন। এর মধ্যে প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৮১১ জন। তার মধ্যে ৩৬ লাখ ৮ হাজার ৮৮৪ জন পুরুষ, ২২ লাখ ১০ হাজার ৯২৭ জন নারী রয়েছেন। অর্থাৎ নিবন্ধন করেও টিকা পাননি ১৩ লাখ ২৯ হাজার ১৮ জন। নতুন টিকা না আসা পর্যন্ত এসব নিবন্ধিতরা টিকা পাবেন না। কারণ ইতিমধ্যেই টিকার প্রথম ডোজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
গতকাল বুধবার এক দিনে দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ৮০০ জন। এর মধ্যে নারী ৩৮ হাজার ৯৮৩ ও পুরুষ টিকাগ্রহীতা ৬৪ হাজার ৮১৭ জন। গতকাল পর্যন্ত মোট দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিলে ৩২ লাখ ১০ হাজার ৫০৯ জন। এ পর্যন্ত টিকাগ্রহীতাদের মধ্যে পাশর্^ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে ৯৯৮ জনের। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় টিকাগ্রহীতাদের মধ্যে পার্শ¦প্রতিক্রিয়ার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনার টিকা ‘কভিশিল্ড’ দিয়ে দেশব্যাপী গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু করে সরকার। গত বছর চুক্তি হওয়ার পর গত জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে ভারত থেকে দুই চালানে ৭০ লাখ ডোজ টিকা দেশে এসেছে। এছাড়া ভারত সরকার উপহার হিসেবে দিয়েছে ৩২ লাখ ডোজ। সবমিলিয়ে মোট ১ কোটি ২ লাখ ডোজ টিকা পায় সরকার। সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী প্রতিমাসে ৫০ লাখ ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আসার কথা থাকলেও গত দুই মাসে কোনো চালান আসেনি। এই টিকার ওপর নির্ভর করেই দেশে টিকা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু সম্প্রতি ভারতে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় অদূর ভবিষ্যতে দেশটি থেকে টিকা আসার সম্ভাবনাও নাকচ করে দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, সরকার বিভিন্ন উৎস থেকে টিকা পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে আগামী মাসের প্রথম দিকে চীনের কিছু টিকা পাওয়া যাবে। এ ছাড়া জুনের মধ্যে ভারতও টিকা দিতে পারে।