করোনা : লকডাউনে যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি শিক্ষার্থীরা বিপাকে - দৈনিকশিক্ষা

করোনা : লকডাউনে যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি শিক্ষার্থীরা বিপাকে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

নতুন করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় শিক্ষার্থীরা বাড়িতে ফিরে যেতে পারলেও বিদেশি শিক্ষার্থীরা পড়েছেন বিপাকে।

নিজ দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে আসা এ শিক্ষার্থীদের অনেকেই ক্যাম্পাসের ডর্মগুলোতে অনিশ্চিত জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন, শেষ হয়ে এসেছে হাতে থাকা অর্থ; বিদেশি হওয়ার কারণে ক্যাম্পাসের বাইরে কাজ করার সুযোগও নেই। অনেকে এমনকি ভিসার মেয়াদ নিয়েও পড়েছেন জটিলতায়।

যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়তে আসা এমন বিদেশি শিক্ষার্থীরা সংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।

স্থানীয়দের তুলনায় এ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি’ও তুলনামূলক অনেক বেশি। বিদেশি এ শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা বিভিন্ন দেশের ধনী পরিবারগুলো থেকে এসেছেন, তারা হয়তো কোনোরকমে উৎরে যেতে পারবেন। কিন্তু যারা নিজেদের আয়ে পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছিলেন, তারা পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।

কোভিড-১৯ ও লকডাউনের কারণে এ বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর অর্থনৈতিক নিরাপত্তা তছনছ হয়ে গেছে। খাবারের জন্য অনেককে তাই নির্ভর করতে হচ্ছে ফুড ব্যাংকগুলোর ওপর। কারও কারও সহপাঠীদের বাড়িতে ঠাঁই হলেও আর বেশিদিন এভাবে থাকা যাবে কি না, সেই সন্দেহ রয়ে যাচ্ছে।

কেবল আটকে পড়া এ শিক্ষার্থীরাই নন, যারা তড়িঘড়ি করে শেষ মুহূর্তে দেশে ফেরার ফ্লাইট ধরতে পেরেছেন তারা কবে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরতে পারবেন তা নিয়েও বাড়ছে অনিশ্চয়তা।

“আমার পৃথিবী টুকরো টুকরো হয়ে গেছে,” বলছিলেন নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী এলিনা মারিউতসা।

রুশ এ শিক্ষার্থীর আগের সেমিস্টারের ফি দিতে তার বাবা-মাকে একটি অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি করে দিতে হয়েছে, ধার নিতে হয়েছে বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে।

চলমান অর্থনৈতিক মন্দার কারণে রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের ব্যাপক দরপতনের কারণে এলিনার বাবা-মা এখন আর মেয়ের শেষ সেমিস্টারের খরচ ২৭ হাজার ডলারই দিতে পারছেন না। রুশ এ শিক্ষার্থীকে এখন নিজের খরচ নিজেকেই বহন করতে হচ্ছে।

“জানি না, আমি স্নাতক শেষ করতে পারবো কি না। এখন পর্যন্ত যা অবস্থা, তাতে কোনোভাবেই শেষ সেমিস্টারের খরচ দিতে পারবো না। অথচ আর মাত্র চারটা কোর্স বাকি ছিল,” বলেছেন চিন্তিত এলিনা।

বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া অর্থেই বাজেটের বেশিরভাগ অংশ পূরণ করা যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অবশ্য আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের সহায়তায় তাৎক্ষণিক কিছু পদক্ষেপও নিয়েছিল। সুযোগ পাওয়া মাত্র কিছু ডর্মেটরি খুলে দিয়েছিল তারা; শিক্ষার্থীদের সামান্য অংশকে তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়তা আদায়ে লবিংও করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী থাকা নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য জরুরি অনুদানেরও ব্যবস্থা করেছে।

“এটা জটিল এবং ক্রমশই আরও জটিল হচ্ছে। এই সময়ে প্রত্যেকে তার সাধ্য অনুযায়ী এগিয়ে এসেছে,” বলেছেন নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের প্রধান উপদেষ্টা জিগিশা বি প্যাটেল।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারও কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছিল। কিন্তু বুধবার ‘যুক্তরাষ্ট্রই প্রথম’ নীতি নেওয়া ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন আন্তর্জাতিক ও বৈধ কাগজপত্র নেই এমন শিক্ষার্থীরা ৬ বিলিয়ন ডলারের সাহায্য তহবিলে প্রবেশাধিকার পাবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছে।

কেন্দ্রীয় ওই তহবিলের অর্থ শিক্ষার্থীদের খাবার ও বাসস্থানের বিল মেটানোর জন্য রাখা হয়েছে।

আটকে পড়া বিদেশি শিক্ষার্থীদের অনেকেই জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তারা যে সহযোগিতা পেয়েছেন তা যথেষ্ট নয়।

“এটা ছিল এমনই এক অস্থির সময় যে কোথায় যেতে পারি সে সম্বন্ধে আমার কোনো ধারণাই ছিল না,” নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন ইতালি থেকে পড়তে আসা শিক্ষার্থী আনা স্কারলেটো।

শিকাগো ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসা এ শিক্ষার্থী মার্চেই জানতে পারেন তাদের ডর্মেটরি শিগগিরই বন্ধ হয়ে যাবে। কোথাও যাওয়ার জায়গা না পেয়ে আনা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া তার এক বন্ধুর ডর্মে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ক’দিন পর জানতে পারেন, বন্ধুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ওই আবাসনও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

এরপর শিকাগোর একটি অ্যাপার্টমেন্টে সাবলেট থাকার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কিন্তু লকডাউনের কারণে ইতালিতে ঘরবন্দি বাবা-মা ব্যাংকে যেতে পারছেন না শুনে ওই পরিকল্পনাও বাদ দেন।

একেবারে শেষ মুহুর্তে বন্ধুর মা স্কারলেটোকে নিজেদের বাড়ি ক্যালিফোর্নিয়ার অরেঞ্জ কাউন্টিতে নিয়ে যান।

“পরবর্তী দুই সপ্তাহ, মাস কিংবা দুই মাস আমি কোথায় যাবো, কোথায় থাকবো, সে সম্বন্ধে কোনো ধারণাই নেই আমার। নিজেকে এক ধরনের পরজীবী মনে হচ্ছে,” বলেন এ শিক্ষার্থী।

স্কারলেটোর মতো এতটা দুর্ভাগা নন জিম্বাবুয়ে থেকে পড়তে আসা স্যাম ব্রাকার্শ। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মার কাছে ভাইরাসটি ‘নিয়ে যেতে পারেন’ কিংবা বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞায় আটকে পড়তে পারেন, এমন শঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্রেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ইয়েল ইউনিভার্সিটির এ শিক্ষার্থী।

বাবা-মার বাড়িতে ইন্টারনেট দিনে মাত্র তিনঘণ্টা কাজ করে, এটাও তার জিম্বাবুয়ে না ফেরার অন্যতম কারণ। এর বদলে স্যাম এক বন্ধু ও তার ছোট ভাইয়ের সঙ্গে তাদের ম্যাসাচুসেটসের আমহার্স্টের বাড়িতে চলে যান।

অস্থায়ী এ আবাসে বেশিদিন থাকা যাবে না এবং শিক্ষার্থী হিসেবে যে স্বাস্থ্য বীমা সুবিধা পেতেন, তা ক্যাম্পাসের আশপাশ ছাড়া কাজ করবে না বুঝতে পেরে ইয়েলের এ শিক্ষার্থী এক অধ্যাপকের এক্সট্রা বেডরুমে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন।

“এখনো নিশ্চিত নই,” বলেছেন স্যাম।

আটকে পড়া এ শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্টেফানি দা সিলভা ত্রিস্কার মতো এমন অনেকেই আছেন, যারা নিজেদের দুরাবস্থার কথা বাড়িতে বাবা-মাকে জানাতেও পারছেন না।

ত্রিস্কা জানান, লং বিচের ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিতে তার পড়ার খরচ চালাতে ব্রাজিলে থাকা তার মা রেস্তোঁরায় খাওয়া ও বাইরে ঘুরতে যাওয়া বন্ধ রেখেছে, বদলাচ্ছে না পুরনো গাড়িও।

মায়ের ত্যাগের কথা মনে রেখে পড়াশোনায় ভালো করতে ব্যাপক পরিশ্রমও করছেন ত্রিস্কা। এরই মধ্যে এর ফলও পেয়েছেন তিনি, জিতে নিয়েছেন মর্যাদাপূর্ণ ইন্টারন্যাশনাল পলিসি ফেলোশিপ।

কিন্তু করোনা ভাইরাসজনিত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার অর্জন উদযাপনের অনুষ্ঠান বাতিল করার পাশাপাশি ফেলোশিপও স্থগিত রেখেছে।

কেবল বৃত্তির টাকায় নয়, ত্রিস্কার পড়াশোনার অর্থের একটা অংশ আসতো মায়ের ইন্টেরিয়র ডিজাইন ব্যবসা থেকে। ওই ব্যবসার অবস্থাও এখন তথৈবচ আর এদিকে ফাইনাল সেমিস্টারের খরচ বাবদ তাকে দিতে হবে আরও ৬০০ ডলার।

“যতবারই আমি স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্টে ঢুকি দেখি ৬০০ ডলার লাগবে। আমি জানি না, এ অর্থ নিয়ে দরকষাকষির জন্য আমার কার কাছে যাওয়া উচিত,” বলেছেন তিনি।

ত্রিস্কার মতো যুক্তরাষ্ট্রে আটকে না থেকে যারা শেষ মুহুর্তে হলেও বাড়ি ফিরতে পেরেছেন তাদের দুশ্চিন্তাও কম নয়। শিক্ষাজীবন শেষ করতে হলে তাদের যুক্তরাষ্ট্রে ফিরতে হবে, কিন্তু তখন কী ধরনের আইনি জটিলতায় পড়তে হয়, তা নিয়ে এখনি তারা উদ্বিগ্ন বলেও নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে।

এদেরই একজন ইয়েলে পরিসংখ্যান পড়তে আসা মার্সি ইদিনদিল। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বল্প সংখ্যককে রাখতে পারবে, এমন একের পর এক ইমেইল পেয়ে তড়িঘড়ি করে তানজানিয়ায় ফিরতে হয় তাকে।

প্রধমে যদিও জর্জিয়ায় এক বন্ধুর বাড়িতে থাকবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, কিন্তু মহামারিজনিত  পরিস্থিতি কতদিন বিরাজ করে তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় শেষ পর্যন্ত দেশে ফেরারই সিদ্ধান্ত নেন মার্সি।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বাড়ি ফেরার টিকেট নেয়ার আগে এ শিক্ষার্থী তার অধ্যাপককে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তানজানিয়ার সময়ের পার্থক্য এবং বাড়িতে নিয়মিত লোডশেডিংয়ের কারণে ইন্টারনেটে ঠিকঠাক ক্লাস চালিয়ে যেতে পারবেন কি না তা নিয়ে সন্দেহের কথা জানান।

বাড়ি ফেরার পর প্রথম কয়েকদিন তাকে ভোর ৩টার সময় জাগতে হতো লিনিয়ার অ্যালজেব্রার অনলাইন ক্লাস ধরতে। অধ্যাপক অবশ্য পরে তার কষ্টের বিষয়টি মাথায় রেখে লেকচারের রেকর্ড করা শুরু করেন।

ভিসার মেয়াদ জুলাই পর্যন্ত থাকায় যুক্তরাষ্ট্রে ফেরা নিয়েই এখন দুশ্চিন্তা হচ্ছে মার্সির।

কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশে তাদের কনসুলেটগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রেখেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সব ধরনের ভিসা প্রসেসিং স্থগিত রাখার কথাও জানিয়েছে।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0040748119354248