দেশে করোনা সংক্রমণ গেল সপ্তাহের চেয়ে এখন কিছুটা কম। প্রথম দফার সংক্রমণের চেয়েও শক্তিশালী ছিল এবারের আক্রমণ। মৃত্যু বেশি হয়েছে, আক্রান্তও ছিল বেশি। এবারের সংক্রমণ বিস্তারের ক্ষেত্রে ইউকে ভেরিয়েন্টের পাশাপাশি বেশি দায়ী করা হয় দক্ষিণ আফ্রিকান ভেরিয়েন্টকে। এখন আবার আশঙ্কা বাড়ছে ভারতীয় ভেরিয়েন্ট ঘিরে। ভেরিয়েন্ট বিস্তারের ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন তথ্য জানিয়েছেন এ বছরই একুশে পদক পাওয়া অণুজীববিজ্ঞানী ও বাংলাদেশ চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. সমীর কুমার সাহা। শুক্রবার (৩০ এপ্রিল) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানা যায়। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তৌফিক মারুফ।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে আপনার সর্বশেষ পর্যবেক্ষণ কী?
ড. সমীর সাহা : এখন তো সংক্রমণ কমতির দিকে, তবে সতর্ক না থাকলে আবারও ভয়ের ব্যাপার হতে পারে। কারণ নিত্যনতুন যে ভেরিয়েন্ট মিলছে, এর মধ্যে কোনো কোনোটি ভয়ের উদ্রেক করে। যদিও ভেরিয়েন্ট নিয়ে আবার অনেকের মধ্যে বিভ্রান্তিও আছে। সব কিছুই যতটা সম্ভব পর্যবেক্ষণ করছি।
প্রশ্ন : আমাদের পাশের দেশ ভারতে ডাবল ভেরিয়েন্ট কিংবা বেঙ্গল ভেরিয়েন্ট থেকে যেভাবে বিপর্যস্ত অবস্থা তৈরি হয়েছে, আমাদের এখানে কি এর প্রভাব পড়তে পারে?
ড. সমীর সাহা : দেখুন এখন পর্যন্ত যতগুলো ভেরিয়েন্ট তৈরি হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে ব্রাজিলিয়ান ভেরিয়েন্ট সবচেয়ে বিপজ্জনক। ভারতে দুটি রাজ্যে সবচেয়ে ভয়ানক অবস্থা হয়েছে। কিন্তু সেখানে যে ওই ভারতীয় ভেরিয়েন্টই এমন বিপর্যয় ঘটিয়েছে, সেটাও কিন্তু বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হচ্ছে না। ওই সব জায়গায় আরো অন্যান্য ভেরিয়েন্টও আছে, যেগুলো তুলনামূলক কম ছড়ালেও ক্ষতি বেশি করে। সব মিলিয়ে অনেক ভেরিয়েন্টের আক্রমণে ভারতের দুটি রাজ্যে এত বেশি খারাপ অবস্থা হয়েছে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে পশ্চিমবঙ্গের ব্যাপারে। সেখানে যে বেঙ্গল ভেরিয়েন্ট থেকে সংক্রমণ বিস্তার ঘটছে, সেটা আমাদের জন্য শঙ্কার ব্যাপার।
প্রশ্ন : ভারতীয় বা বেঙ্গল ভেরিয়েন্ট কি আমাদের দেশে ঢুকেছে?
ড. সমীর সাহা : এখনো শনাক্ত হয়নি, শনাক্ত না হওয়া পর্যন্ত বলা ঠিক নয়। তবে যারা দেশে ঢুকেছে তাদের মাধ্যমে ছড়াতেই পারে। কারণ আমরা আগে ইউকে ভেরিয়েন্ট ও সাউথ আফ্রিকার ভেরিয়েন্ট তো এভাবেই ছড়াতে দেখেছি।
প্রশ্ন : ইউকে ভেরিয়েন্ট ও সাউথ আফ্রিকান ভেরিয়েন্ট কি এখনো দেশে আছে?
ড. সমীর সাহা : ইউকে ভেরিয়েন্ট দেশে প্রবেশ করলেও সেটা শুরুতেই ধরে ফেলা গিয়েছিল বলে ঠেকানো গেছে দ্রুত সময়ের মধ্যে। এ ছাড়া আফ্রিকান ভেরিয়েন্ট এসে ইউকে ভেরিয়েন্ট এক রকম দমিয়ে সে নিজে ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা দেখলাম, মাত্র দুই-তিনজনের মাধ্যমে দেশে আফ্রিকান ভেরিয়েন্ট ছড়িয়েছে, তারা বিভিন্ন জায়গায় হয়তো ঘুরে বেরিয়েছে। হয়তো সমুদ্র সৈকতে গেছে এবং অন্যান্য জায়গায়ও গেছে।
প্রশ্ন : ভারতে এভাবে ছড়ানোর কারণ কী?
ড. সমীর সাহা : সেখানে যেভাবে নির্বাচনী হৈ-হুল্লোড় হয়েছে, বিভিন্ন উৎসব হয়েছে, মানুষ যেভাবে অসতর্কভাবে জীবন যাপন করেছে, তাতে তো এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক। আমাদের এখানেও তো তেমনটা হয়েছে, আবারও হওয়ার আশঙ্কা আছে। এ জন্যই বলছি, ভেরিয়েন্ট যেটাই হোক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা একই।