করোনাকালীন শিক্ষাব্যবস্থা ও শিশুর মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ - দৈনিকশিক্ষা

করোনাকালীন শিক্ষাব্যবস্থা ও শিশুর মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

সাম্প্রতিক বিশ্বের বহুল আলোচিত শব্দ বা বিষয় হলো করোনা। আবালবৃদ্ধবনিতার মুখে এই শব্দটি উচ্চারিত হয়েছে ভয়-আতঙ্ক-দ্বিধা ও নৈরাশ্য নিয়ে। পৃথিবীবাসী এখনও জানে না এর শেষ কোথায় বা কিসে এর থেকে মুক্তি। প্রায় অর্ধবর্ষ যাবত এই করোনার করাল থাবায় বিশ্ব-অর্থনীতি আজ হুমকির মুখে। বিশ্বের বাঘা-বাঘা দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে ব্যাপকভাবে। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে চাষাবাদ, চিকিৎসাব্যবস্থা, সামাজিক বৈষম্য সব কিছু আজ হুমকির মুখে। তবে বলাই বাহুল্য যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা। আর এর সঙ্গে জড়িত কয়েক লাখ শিক্ষার্থী। রোববার (৬ সেপ্টেম্বর) জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত উপসম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।

উপসম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, শিক্ষাবর্ষের শুরুতে নতুন বই হাতে পেয়ে বাংলা মাধ্যমের শিশুরা যখন মাত্র ক্লাস শুরু করেছে তখনই হঠাৎ ছন্দপতন। অন্য দিকে ইংরেজী মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা সেশনের শেষাংশে এসে নতুন ক্লাসে ওঠার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ঠিক যেন চলমান নদীর গতিপথ বিশাল এক বাঁধ দিয়ে আটকে দেয়া হলো– আটকে দেয়া হলো শিশুর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা, বিকাশ ও গতিময়তা। এর কারণ আমরা সকলেই জানি। পরিস্থিতি ও পারিপার্শ্বিকতার প্রভাবে সরকারের এহেন সিদ্ধান্ত। আর এই সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী, মানতেই হবে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাধারণ ছুটির শুরুর দিকে এর ভয়াবহতা ঠিক বোঝা যায়নি। শিশুরাও হঠাৎ ছুটি পেয়ে খেলাধুলা, টিভি দেখা ও গেইম খেলায় ব্যস্ত হয়ে পরল। কিন্তু একসময় সেটাও বোরিং হয়ে উঠল। ছাদে ওঠা যায় না, গ্যারেজেও যাওয়া নিষেধ। গৃহবন্দী শিশুরা যখন মানসিক বৈকল্যতা নিয়ে জর্জরিত, ঠিক তখনই সাম্প্রতিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের ইংরেজী মাধ্যম স্কুলগুলো শুরু করল অনলাইনভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম, যেখানে বাংলা মাধ্যমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অনেকটাই পিছিয়ে।

বাংলা মাধ্যমের অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম নগর কেন্দ্রিক। আর এর শুরুটাও একটু দেরিতে। বাংলাদেশ টেলিভিশনে একতরফা পাঠদান শুরু হলেও পরীক্ষার কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি এতে। কিছু কিছু স্কুল অবশ্য সাম্প্রতিককালে জুম এ্যাপের মাধ্যমে পাঠদান শুরু করেছে। কিন্তু দীর্ঘ ৩-৪ মাস শিক্ষার্থীরা ছিল সকল যোগাযোগের বাইরে। মোহাম্মাদপুর প্রিপারেটরি স্কুল গুগুলের মাধ্যমে পাঠাদান করছে যেখানে মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় একটি নির্দিষ্ট টিভি চ্যানেলের মাধ্যমের ক্লাস দান করছে যা প্রশংসার দাবিদার। অন্যদিকে দক্ষিণ বনশ্রী উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে পড়া মাশুকার অভিমতÑ স্কুল থেকে ফোন করে কেবল বিটিভির ক্লাস ফলো করতে বলা হয়েছে, নিজেরা কোন উদ্যোগ নেয়নি, যা মাশুকার শিক্ষা কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে। অন্যদিকে সপ্তম শ্রেণীতে পড়া সিয়াম মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রশংসা করে বলে, এপ্রিল থেকেই মোহনা টিভির মাধ্যমে তার স্কুল পাঠদান করে চলেছে এবং বাড়ির কাজের ভিত্তিতে পরীক্ষার নম্বর প্রদান করবে। এর ফলে সিয়াম নিজেকে কিছুটা হলেও ব্যস্ত রাখতে পেরেছে। আদমজী ক্যান্টনমেন্ট স্কুল শুরু থেকেই হোয়াটসএ্যাপের মাধ্যমে শিক্ষাদান অব্যাহত রেখেছে এবং ঢাকার বেশ কিছু প্রতিঠিত স্কুল কেবল সরকারী পাঠদানের ওপর নির্ভর না করে চালিয়ে যাচ্ছে নিজস্ব শিক্ষা কার্যক্রম। অন্যদিকে ঢাকার বাইরের স্কুলগুলো শুধুমাত্র নির্ভর করছে সরকারী পাঠদানের ওপর। ফলে দেশের সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম বৈষম্য।

বাংলা মাধ্যমের অনলাইন পাঠদানে বৈষম্য দেখা গেলেও ইংরেজী মাধ্যম স্কুলগুলো এপ্রিল থেকেই শুরু করে অনলাইন ভিত্তিক কার্যক্রম। স্কুলগুলো জুন-জুলাই সেশনে তাদের ফাইনাল পরীক্ষাও নিয়েছে অনলাইনের মাধ্যমে। কতিপয় বেসরকারী স্কুল কিছু কিছু ক্লাসে অটো প্রমোশন দিলেও বেশির ভাগ স্কুলই অনলাইনের মাধ্যমে পরীক্ষা নিয়েছে। অন্যদিকে অনেক স্কুল এখন পর্যন্ত তাদের অনলাইন ক্লাস শুরু করতে পারেনি। প্রতিষ্ঠিত স্কুলের তুলনায় ঢাকার ছোট স্কুলগুলো বরং অনেকটাই এগিয়ে। তারা সাধারণ ছুটির শুরুর দিকেই জুমের মাধ্যমে ক্লাস শুরু করেছে যেখানে শিক্ষার্থীর পাশাপাশি অভিভাবকরাও ব্যস্ত থেকেছে সমান তালে।

ঢাকার গুলশানে অবস্থিত স্বনামধন্য একটি বেসরকারী স্কুল সাধারণ ছুটির শুরু থেকেই অনলাইনভিত্তিক পাঠদান শুরু করেছে এবং ফাইনাল পরীক্ষা ও ফল প্রদানও করেছে অনলাইনে। নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই তারা বিশেষ বিশেষ চমক নিয়ে সপ্তাহে ৫ দিনই অনলাইন ক্লাস শুরু করেছে। শিক্ষার্থীরা স্কুল ইউনিফরম পরে অনলাইনেই ক্লাস উপভোগ করছে। কিন্তু খুব কম প্রতিষ্ঠানই শিশুদের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে যথাযথ উদ্যোগ নেয়।

এ প্রসঙ্গে চাইল্ড কনসাল্ট্যান্ট ও চাইল্ড বিহেভিয়ার থেরাপিস্ট হাবিবা হাসান জয়া বলেন - ‘অনলাইনে ক্লাস করে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হচ্ছে সন্দেহ নেই, কিন্তু তারা ক্রমশ বিভিন্ন গ্যাজেটে অভ্যস্ত হয়ে পরছে যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশে অন্তরায় হয়ে পরছে। গৃহবন্দী শিশু-কিশোররা মোবাইল, ট্যাব, ল্যাপটপে বেশি সময় কাটাচ্ছে এবং ডিপ্রেশনসহ নিত্য-নতুন ট্রেন্ড এ অভ্যস্থ হয়ে পড়ছে। এইসব শিক্ষার্থীরা যখন আবার স্বাভাবিক জীবনে প্রবেশ করবে, তখন হয়ত অনেকেরই মানসিক বৈকল্য দেখা দিবে এবং স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হতে পারে।’

তাই আমাদের এর থেকে উত্তরণের চেষ্টা করতে হবে। শিশুরা যাতে নিয়মিত ও বরাদ্দকৃত সময়টুকু ছাড়া অন্য সময় ইন্টারনেট কম ব্যবহার করে, সেদিকে নজর রাখতে হবে। পাশাপাশি পরিবারের সকলে একসঙ্গে সময় কাটানো, মুভি দেখা, বাড়ির কাজে সহায়তা করার দিকে উৎসাহিত করতে হবে যাতে করে আমাদের শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও গতিময়তা নিয়ে করোনা জয় করে ফিরে আসতে পারে নতুন উদ্যমে।

লেখক : শিক্ষিকা ও ফ্রিল্যান্স রাইটার

প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের - dainik shiksha পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার - dainik shiksha ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035738945007324