করোনাকালে অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষা ও মূল্যায়ন পদ্ধতি - দৈনিকশিক্ষা

করোনাকালে অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষা ও মূল্যায়ন পদ্ধতি

মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক |

করোনার এই মহামারীর মধ্যেও কিছু কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্বপ্রণোদিত অনলাইন ক্লাস কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মঙ্গল কামনায় নিহিত রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিকূল অবস্থায়ও শিক্ষা কার্যক্রমকে স্বাভাবিক রাখতে সকলে নিজ নিজ অবস্থান থেকে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে পাঠদান কতটুকু সার্থক হলো তার সার্থকতা নির্ভর করে একটি সুষ্ঠু মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার ওপর। স্বাভাবিক অবস্থায় মূল্যায়ন পদ্ধতি আর বর্তমান পরিবর্তিত অবস্থায় মূল্যায়নের মধ্যে বিশাল ব্যবধান রয়েছে। যদি আগে থেকেই আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শতভাগ ডিজিটালাইজড হতো তাহলে আজকের বর্তমান প্রতিকূল প্রেক্ষাপটে মূল্যায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে এতটা উদ্বিগ্ন হতে হতো না। পাঠদান যতই ইতিবাচক হোক তা দেখে পাঠদান কতটুকু ফলপ্রসূ হয়েছে তা ধারণা করার সুযোগ নেই। এর জন্য একটি মূল্যায়ন প্রক্রিয়া অবশ্যই অবলম্বন করতে হবে। তবে পরিস্থিতি প্রেক্ষাপট বিবেচনায় মূল্যায়ন ভিন্ন হবে এতে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই।

আজকের বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে আমাদের কিছু দূরদর্শী সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও সেগুলো পরিকল্পিত উপায়ে বাস্তবায়ন জরুরি। মূল্যায়ন পদ্ধতির অন্যতম মাধ্যম হলো নিরিবিলি পরিবেশে পরীক্ষা গ্রহণ প্রক্রিয়া। এর বিকল্প এখনো খুঁজে নেয়া সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন প্রক্রিয়া অবলম্বন করে এই পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। আমাদের দেশে যে পরীক্ষা পদ্ধতি তা একেবারেই প্রথাগত ও আনুষ্ঠানিক। সুতরাং তার মূল্যায়ন পদ্ধতিও কাঠামোবদ্ধ। এই প্রক্রিয়া সারাদেশে একই রকম তা হলো- প্রশ্নের মাধ্যমে খাতায় লিখে প্রশ্নোত্তর পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে পাঠদান কতটুকু ফলপ্রসূ হলো এই দিকটি মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে।

আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা এমনিতেই পরীক্ষাভীতিতে ভোগে। তারা পরীক্ষার কথা শুনলে নানা উপসর্গে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এই মুহূর্তে দীর্ঘ ছুটি পেয়ে আনন্দের সাগরে ভাসছে কেউ কেউ। যার যেমন খুশি সময় পার করছে। যার ফলে তারা ভীষণভাবে পড়াশোনা বিমুখ। এমন অবস্থায় শুধু পাঠদান করে মূল্যায়নের ব্যবস্থা না করলে পাঠদান উদ্দেশ্য সফল হবে না। পড়ালেখার প্রতি চাপ ও মূল্যায়নের সুষ্ঠু ব্যবস্থা না থাকলে শিক্ষার্থীরা আরও বেশি পড়ালেখা বিমুখ হয়ে পড়বে। এতে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিপথগামী হওয়ার আশঙ্কা অধিকহারে বেড়ে যাবে। তাই শিক্ষার্থীদের বই-পুস্তকমুখী করতে কিছু দূরদর্শী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার বিকল্প নেই। অন্তত পরীক্ষা পদ্ধতি ও মূল্যায়নে কিছু বাস্তবভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা অতীব জরুরি।

বর্তমান সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষা সম্পাদনের লক্ষ্য স্থির করা হয়েছিল। কিন্তু সময় ও পরিবেশ একটি অপরটির পরিপূরক হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ সময় পরিবেশগত কারণে বিরুদ্ধ আচরণ করছে। শিক্ষার্থীদের তাদের নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বসিয়ে পরীক্ষা গ্রহণ করার অবস্থা এই মুহূর্তে নেই। তাই পরীক্ষা গ্রহণ পদ্ধতি ভিন্ন আঙ্গিকে হতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে দীর্ঘদিন যাবত অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিনিয়ত এই কার্যক্রমের পক্ষে বিপক্ষে যুক্তিতর্কের অবতারণা হচ্ছে। তবে এই উদ্যোগকে বাস্তবে রূপ দেয়ার ক্ষেত্রে মূল্যায়নের ব্যবস্থা করে ইতিবাচক কিছু করা যায়। যেমন- অনলাইন ক্লাসের প্রতিটি পাঠ শেষে বিষয়ভিত্তিক বাড়ির কাজ প্রদান করা হচ্ছে। বিষয়ভিত্তিক সকল পাঠের বাড়ির কাজকে পঞ্চাশ নম্বরে মার্কিং করে একটি মূল্যায়ন করা যেতে পারে। তারপর সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমেই বিষয়ভিত্তিক বিশ নম্বরের এসাইনমেন্ট প্রদান করা যায়। সবশেষে একই প্রক্রিয়ায় সারা দেশব্যাপী প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকদের দায়িত্ব প্রদান করে মোবাইলের মাধ্যমে প্রত্যেক বিষয়ের জন্য বিষয়ভিত্তিক ত্রিশ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা নেয়া যেতে পারে। তাহলে বাড়ির কাজ, এসাইনমেন্ট ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে একশত নম্বরের মূল্যায়ন পরীক্ষা গ্রহণ সম্পন্ন হবে। এই মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বর্তমান প্রতিকূল অবস্থায় শিক্ষার্থীদের অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে পরীক্ষার রুটিন প্রণয়ন, সময় নির্ধারণসহ পরিকল্পিত পরিকল্পনা ও নির্দেশনার মাধ্যমে কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যেতে পারে। যেহেতু শিক্ষকরা মোবাইল ব্যবহার করবেন, তাই উক্ত সময়ে তাদের ব্যবহৃত নেটওয়ার্ক কেবল তাদের জন্য ফ্রি করে দিতে হবে।

পরিশেষে বলতে চাই, শুধু অনলাইনভিত্তিক পাঠদান করলে শিক্ষার্থীরা খুব একটা মনোযোগী হবে না। তাদের পরীক্ষা কেন্দ্রিক মূল্যায়নের মাধ্যমে পাঠ্যপুস্তকের প্রতি জোর দেয়া অত্যাবশ্যক। অন্যথায় লাগাতার পড়াশোনা বিমুখ থাকার ফলে তাদের ভেতরের অন্তর্নিহিত প্রতিভার বিকাশ বাধাগ্রস্থ হবে এবং ধারাবাহিকতা না থাকলে পরবর্তী সময়ে পড়াশোনার প্রতি অনীহা সৃষ্টি হবে। তাই নির্দিষ্ট সিলেবাসের ভিত্তিতে একটি মূল্যায়ন ব্যবস্থা দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। যখন নীতিমালার অধীনে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হবে। তখন সকলের মধ্যে মূল্যায়নের প্রতি তাড়না সৃষ্টি হবে। কেবল তখন একটি অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থার সময়োপযোগী সমাধান সর্বমহলে ইতিবাচক ফল আনবে। এই বিষয়ে কালক্ষেপণ না করে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা গেলে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকলে উপকৃত হবেন বলে আশা করা যায়।

লেখক : মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি।

[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন।]

প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ - dainik shiksha প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার - dainik shiksha তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার - dainik shiksha স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন - dainik shiksha নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0048198699951172