করোনাকালে এইচএসসি পরীক্ষা গ্রহণের সম্ভাব্য পন্থা - দৈনিকশিক্ষা

করোনাকালে এইচএসসি পরীক্ষা গ্রহণের সম্ভাব্য পন্থা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

করোনা আমাদের নানাভাবে দুশ্চিন্তায় ফেলেছে, ক্ষতিগ্রস্ত করেছে জীবনের সব ক্ষেত্রকে। স্বাস্থ্য, জীবন-জীবিকা, শিক্ষাব্যবস্থা কিছুই এর পরিধি থেকে রক্ষা পায়নি। করোনা মানুষকে নতুন করে বেঁচে থাকার ধরন নিয়ে ভাবতে বাধ্য করেছে। বর্তমানে সরকার, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক এইচএসসি পরীক্ষা কিভাবে নেওয়া যায় বা বিকল্প কী হতে পারে সেসব নিয়ে ভাবছেন। এইচএসসি পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল এপ্রিল মাসে; কিন্তু করোনার কারণে তা আর অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। প্রায় ১৪ লাখ পরীক্ষার্থী পরীক্ষা নিয়ে চরম সংকটে সময় পার করছে। ফেসবুকে সময় দিচ্ছে এবং অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের গেম খেলছে। সুতরাং আর দেরি না করে বিকল্প উপায়ে পরীক্ষা নেওয়া জরুরি হয়ে পড়ছে। শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। 

নিবন্ধে আরও জানা যায়, যদি করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয় পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বিকল্প মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের একটি প্রস্তাবনা তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছেন। এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা তাদের সব সিলেবাস ও কারিকুলাম এরই মধ্যে সম্পন্ন করছে। তার পরও করোনাকালে সিলেবাস একটু কমিয়ে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। পাশাপাশি পরীক্ষার কাঠামোগত কিছু পরিবর্তন করে পরীক্ষার ব্যাপ্তি ও পরিধিবিষয়ক আনুষঙ্গিক প্রস্তাবনা এখানে তুলে ধরা প্রাসঙ্গিক মনে করি। 

পদ্ধতি-১ : এইচএসসি পরীক্ষায় ১৩টি বিষয়ে পরীক্ষা গ্রহণ করতে হয়। পরীক্ষার সংখ্যা কমানো উচিত, যেহেতু করোনার সংক্রমণ কমে যায়নি। ১৩টি বিষয়ে সাত দিন পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব। যেমন—বাংলা প্রথম পত্র ও দ্বিতীয় পত্র মিলে একটি পরীক্ষা হবে এবং একটি প্রশ্নেই ১০০ মার্ক থাকবে, প্রথম পত্রে ৫০ এবং দ্বিতীয় পত্রে ৫০। পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন করে যে মার্ক পাবে পরে তা আলাদাভাবে ১০০-তে কনভার্ট করবে। এভাবে যে বিষয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র আছে, সেগুলো এক দিনে তিন ঘণ্টায় পরীক্ষা শেষ করা সম্ভব। শুধু আইসিটি পরীক্ষা ১০০ মার্কে হবে। কারণ এর দ্বিতীয় পত্র নেই। কোনো কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী বেশি হলে পার্শ্ববর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে কেন্দ্র হিসেবে নির্বাচন করা যেতে পারে। করোনার কারণে পরীক্ষার কেন্দ্র বৃদ্ধি করতে হবে।

এই পদ্ধতিতে প্রত্যেক জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি মূল কেন্দ্র থাকবে এবং এর অধীনে প্রতিটি উপজেলায় ইউনিয়নভিত্তিক অনেকগুলো উপকেন্দ্র থাকবে। যার নেতৃত্বে থাকবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এতে জনসমাগম বা ব্যাপক হারে স্থান পরিবর্তন হবে না বললেই চলে। ফলে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা কমে আসবে। সামাজিক দূরত্বসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে। প্রশ্ন ও উত্তরপত্র যথারীতি অতীতের ন্যায় বণ্টন এবং পরীক্ষার কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতে পারে। পরীক্ষার গোপনীয়তা রক্ষা করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে একটু বেশি তৎপর থাকতে হবে। পরীক্ষা শুরু হওয়ার ১৫-২০ দিন আগে পরীক্ষার রুটিন, অন্যান্য পরিকল্পনা ও নির্দেশনা শিক্ষার্থীদের জানাতে হবে।

পদ্ধতি-২ : অনেক অভিভাবক ও শিক্ষক মনে করছেন, অটো পাস দিয়ে পরীক্ষা শেষ করা যায়, কিন্তু বোর্ড পরীক্ষায় তা নিয়ে অনেক জটিলতা ও নীতিগত সমস্যা রয়েছে। যদিও অন্য দেশ অটো পাস দিয়েছে। কারণ ওই সব দেশে শিক্ষাব্যবস্থা শুধু পরীক্ষাকেন্দ্রিক না। আমি মনে করি, ভবিষ্যতে পরীক্ষাকেন্দ্রিক পদ্ধতি বাদ দিয়ে অন্যান্য উন্নত দেশের মতো ছাত্র-ছাত্রী মূল্যায়নের পন্থা বের করতে হবে। আমি দ্বিতীয় প্রস্তাবের কথা বলছি, যেখানে প্রতিটি বিষয়ে দুই সেট প্রশ্ন করা হবে। কারণ দুই শিফটে পরীক্ষা গ্রহণ করতে হবে। জোড় রোল সংখ্যায় সকালে এবং বিজোড় রোল সংখ্যায় বিকেলে পরীক্ষা হবে, যা জনসমাগম কমাতে কাজ করবে এবং এতে বর্তমান যে পরিমাণ পরীক্ষার কেন্দ্র রয়েছে তা দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব। যদিও অনেকেই বলবেন, দুই শিফটে দুই প্রশ্নে পরীক্ষা নিলে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নে বৈষম্য হতে পারে। কিন্তু প্রশ্নকর্তারা যদি সমান স্ট্যান্ডার্ড অনুসারে প্রশ্ন করেন সমস্যা হবে না। তার পরও যদি বৈষম্য হওয়ার আশঙ্কা থাকে সেটুকু করোনা দুর্যোগে মেনে নিতে হবে।

পদ্ধতি-৩ : প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে যে কয়জন শিক্ষক পাঠদান করিয়েছেন, তাঁরা ১০০ মার্ক স্ট্যান্ডার্ড ধরে প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীকে মার্ক দেবেন। ধরা যাক, ১৩ জন শিক্ষক ক্লাস নিয়েছেন। ১৩ জন শিক্ষক তাদের বিগত এক বছরের অভিজ্ঞতা, ধারণা, ক্লাসে উপস্থিতি এবং বিশ্লেষণপূর্বক নিরপেক্ষভাবে প্রত্যেক কোর্সের মার্ক প্রদান করবেন এবং ওই সাবজেক্টে টেস্ট পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা যে মার্ক পেয়েছে তার রেকর্ডকেই মূলত মান হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। পরে দুই ধরনের মার্ক যোগ করার পর যে গড় মার্ক আসবে, সেটাই হবে ওই সাবজেক্টের ফলাফল। এভাবে সব সাবজেক্টের মার্ক হিসাব করে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জিপিএ বের করা সম্ভব। এতে পরীক্ষা হলে আর কোনো পরীক্ষা নিতে হবে না। উল্লেখ্য যে পরীক্ষার ফরম পূরণের শর্ত রয়েছে, তাকে বিশেষ করে টেস্ট পরীক্ষায় পাস করতে হয়। এ ছাড়া এই পদ্ধতিতে বোর্ড থেকে প্রত্যেক কলেজে একজন পরিদর্শক নিয়োগ দিতে পারে। যাতে রেজাল্ট তৈরি করতে তিনি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন।

পদ্ধতি-৪ : করোনা মহামারিতে সম্পূর্ণ পরীক্ষা এমসিকিউ পদ্ধতিতে হতে পারে। ১০০ নম্বরের পরীক্ষা ৯০ মিনিটে শেষ করবে এবং এর সবচেয়ে ভালো দিক পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে সময় কম লাগবে এবং এক সপ্তাহে ফলাফল প্রকাশ করা যাবে। অর্থাৎ করোনায় যে সময় পরীক্ষা নিতে বিলম্ব হয়েছে, এই পদ্ধতিতে সেই সময় বা ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। এতেও প্রয়োজন হলে দুই শিফটে পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করতে পারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এই পদ্ধতিতে পরীক্ষা হলে প্রতি বেঞ্চে একজন করে পরীক্ষার্থী এবং একটি কক্ষে যতগুলো বেঞ্চ থাকবে, ততজন পরীক্ষার্থীর আসন নির্ধারণ করে দিতে হবে।

সব ক্ষেত্রেই পরীক্ষাকেন্দ্রের পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থা ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিয়ে আলাদা কর্মপরিকল্পনা করে চূড়ান্ত সতর্কতা মেনে কাজ করতে হবে। সার্বিকভাবে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের এবং শিক্ষাব্যবস্থার বাস্তবতার কথা বিবেচনা করে শিগগিরই সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে এ প্রসঙ্গে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত; সবার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে পারলে পরীক্ষাবিষয়ক এই আপৎকালীন সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে মনে করি।

লেখক : মো. শফিকুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি, শিক্ষক সমিতি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ

উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ - dainik shiksha স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে - dainik shiksha শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0070040225982666