করোনাকালে দেশে কোটিপতি বেড়েছে ১১৬৪৭ জন - দৈনিকশিক্ষা

করোনাকালে দেশে কোটিপতি বেড়েছে ১১৬৪৭ জন

নিজস্ব প্রতিবেদক |

করোনাকালে দেশের বেশির ভাগ মানুষের আয় কমলেও একটা শ্রেণির আয় উল্টো বেড়েছে, যাঁরা নতুন করে কোটিপতির খাতায় নাম লিখিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, করোনার মহামারি চলাকালে গত এক বছরে দেশে কোটিপতি আমানতকারীর ব্যাংক হিসাব বেড়েছে সাড়ে ১১ হাজারেরও অধিক, যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়েও বেশি।

করোনাকালে এত বেশি কোটিপতির সংখ্যা বৃদ্ধিকে অস্বাভাবিক মনে করা হচ্ছে। সব মিলে গত মার্চ শেষে দেশের ব্যাংকগুলোতে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৪ হাজার ২৭২, যার মধ্যে ৭২ হাজার ৭৮০ জন বা ৭৭ শতাংশই বেড়েছে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১২ বছরে। কোটিপতির সংখ্যা বৃদ্ধি সমাজে আয়-বৈষম্য বাড়াচ্ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

করোনাকালে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছেন অর্থনীতিবিদরা। এগুলো হলো করোনায় বিভিন্ন ছাড়ের কারণে অনেক খাতের ব্যবসায়ীরা ভালো ব্যবসা করেছেন এবং লাভের টাকা আমানত হিসেবে ব্যাংকে রেখেছেন। আবার এই সময়ে ধনী ও সচ্ছল পরিবারের দেশে-বিদেশে ভ্রমণসহ ভোগবিলাস প্রায় বন্ধ রয়েছে। মধ্যবিত্তরা ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার কথা ভেবে জীবনযাত্রার ব্যয় কমিয়ে সঞ্চয়ে মনোযোগী হয়েছেন। এ ছাড়া করোনার ক্ষতি মোকাবেলায় সরকারঘোষিত প্রণোদনা ঋণের একটি অংশ সুবিধাভোগীরা ব্যবসায় না খাটিয়ে আমানত হিসেবে ব্যাংকে রাখতে পারেন বলেও আশঙ্কা তাঁদের। সব মিলে কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে। 

আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম  বলেন, ‘করোনার সময়ে এত বেশি কোটিপতি আমানতকারীর হিসাব (অ্যাকাউন্ট) বৃদ্ধি অস্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে। বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের খতিয়ে দেখা উচিত। তবে আমার মনে হয়, বিকল্প উেসর চেয়ে ব্যাংকে টাকা রাখাকেই বেশি নিরাপদ মনে করছেন অনেকেই। যাঁরা হুন্ডি করে বিদেশে টাকা পাঠাতেন, করোনায় সেটাও কমে এসেছে।’

কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বাড়লে দেশের জন্য সেটা কতটা ভালো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এক দিক থেকে এটা ভালো, তা হলো টাকাটা ব্যাংকে এলে সেটা বিনিয়োগে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। যদিও এখন ঋণের চাহিদা নেই। বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। কাজেই ব্যাংকের হাতে তহবিল গেলেও সেটা কাজে আসছে না। তবে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে ভবিষ্যতে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন বিনিয়োগ প্রকল্পে এই টাকা ঋণ হিসেবে দিতে পারবে।’ ধনী-গরিবের বৈষম্য বাড়ছে কি না এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বৈষম্য তো অবশ্যই বাড়ে। এটা অলরেডি বেড়েছে বলেই এত বেশি নতুন কোটিপতি হয়েছে।’   

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘যাঁরা নতুন করে কোটিপতি হয়েছেন তাঁরা হয়তো আগে থেকেই স্বাবলম্বী ও ব্যবসায়ী দিক থেকেও প্রতিষ্ঠিত। করোনার সময়ে তাঁরাও অন্য সব খাতের ন্যায় ঋণের কিস্তি পরিশোধে ছাড়ও পেয়েছেন। আবার করোনার কারণে তাঁদের দেশে-বিদেশে ভ্রমণসহ ভোগবিলাস বন্ধ রয়েছে। এতে তাঁদের হাতে যে অতিরিক্ত অর্থ রয়ে যাচ্ছে, সেটা হয়তো আমানত হিসেবে ব্যাংকে রাখছেন। অনেকের শেয়ারবাজারে মৌলভিত্তির শেয়ারে বিনিয়োগ থাকায় সেখান থেকেও আয় হচ্ছে, যা ব্যাংকে রাখছেন। আবার প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় নেওয়া ঋণের একটা অংশও ব্যাংকে আমানত হিসেবে রাখা হতে পারে। বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের খতিয়ে দেখা উচিত। সাবেক এই গভর্নর মনে করেন, কোটিপতির সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে দেশে আয় বৈষম্যও বাড়ছে। করোনায় অনেকের বেতন কমে গেছে। চাকরি হারিয়েছেন অনেকেই। ছোট উদ্যোক্তারা ঋণ চেয়েও পাচ্ছেন না। এটা দীর্ঘ মেয়াদের জন্য ভালো নয়।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর আগে গত বছরের মার্চ পর্যন্ত দেশে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক কোটিপতি আমানতকারীর হিসাব সংখ্যা ছিল ৮২ হাজার ৬২৫ জন। চলতি বছরের মার্চ শেষে তা বেড়ে হয়েছে ৯৪ হাজার ২৭২ জন। ফলে করোনার গত এক বছরে দেশে নতুন কোটিপতি আমানতকারী বেড়েছে ১১ হাজার ৬৪৭ জন। এর মধ্যে চলতি মাসের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) বেড়েছে ৩৮২ জন।

আর স্বাভাবিক সময়ে ২০১৯ সালের মার্চ থেকে ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশে কোটিপতি আমানতকারী বেড়েছিল মাত্র ছয় হাজার ৩৪৯ জন। আর ২০২০ সালের পুরো সময়ে বেড়েছিল এক হাজার ৫১ জন। এর মানে করোনাকালেই কোটিপতি আমানতকারীর হিসাবের প্রবৃদ্ধি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে ২০০৯ সালে দেশে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল মাত্র ২১ হাজার ৪৯২ জন। এ হিসাবে গত ১২ বছরে দেশে নতুন কোটিপতি বেড়েছে ৭২ হাজার ৭৮০ জন।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই সময়ে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে এক কোটি এক টাকা থেকে পাঁচ কোটি টাকার আমানতকারীর সংখ্যা। মার্চ শেষে যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭২ হাজার ২২৯টি। গত বছরের মার্চে যা ছিল ৬৪ হাজার ৭২৬টি। ফলে এক বছরের ব্যবধানে এক কোটি এক টাকা থেকে পাঁচ কোটি টাকার অ্যাকাউন্ট বেড়েছে তিন হাজার ১৫৬টি। এ ছাড়া গত মার্চ শেষে পাঁচ কোটি এক টাকা থেকে ১০ কোটির মধ্যে ১০ হাজার ৪৯৯ জন, ১০ কোটি এক টাকা থেকে ১৫ কোটির মধ্যে তিন হাজার ৪৪৬ জন, ১৫ কোটি এক টাকা থেকে ২০ কোটির মধ্যে এক হাজার ৬৯৩ জন, ২০ কোটি এক টাকা থেকে ২৫ কোটির মধ্যে এক হাজার ৮১ জন, ২৫ কোটি এক টাকা থেকে ৩০ কোটির মধ্যে ৭৬৬ জন, ৩০ কোটি এক টাকা থেকে ৩৫ কোটি টাকার মধ্যে ৩৮৮ জন, ৩৫ কোটি এক টাকা থেকে ৪০ কোটির মধ্যে ২৯৬ জন, ৪০ কোটি এক টাকা থেকে ৫০ কোটি টাকার মধ্যে ৫০৪ জন এবং ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা ব্যক্তির সংখ্যা এক হাজার ৩৭০ জন। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরো দেখা যায়, গত মার্চ শেষে দেশে মোট আমানত হিসাব দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ৮৫ লাখ ৫২ হাজার ৩৩৭টি। এসব হিসাবের বিপরীতে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৮৪ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা।

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.006972074508667