করোনাকালে শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা - দৈনিকশিক্ষা

করোনাকালে শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

আমরা জানি, বাংলাদেশে প্রথম ৮ মার্চ ২০২০ তারিখে তিন জন করোনা রোগী শনাক্তের মাধ্যমে বাংলাদেশে ১৮ মার্চ ২০২০ থেকে লকডাউনের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় এ প্রবন্ধ লেখার সময় পর্যন্ত (২৩ অক্টোবর ২০২০) আমাদের নিকট চলতি ৩১ অক্টোবর ২০২০ তারিখ পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ছুটির নোটিশ রয়েছে। এখানে করোনাকাল শুরুর দিককার কিছু বিষয় তুলে ধরতে চাই। আমরা জানি, বাংলাদেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে পহেলা জানুয়ারি থেকে শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়ে থাকে। সোমবার (৯ নভেম্বর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এতথ্য জানা যায়। 

নিবন্ধে আরও জানা যায়, বর্তমান সরকার বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন পাঠ্যবই তুলে দিয়ে শিক্ষাবর্ষের শুভসূচনা করে থাকে। উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগও (বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে) জানুয়ারি থেকে সর্বোচ্চ মার্চ, এপ্রিল, মে মাসের দিকে সেশন শুরু হয়ে যায়। আবার এ সরকারের আমলে শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সেশনজট কমানোর অংশ হিসেবে পিইসি, জেএসসি, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক এবং তাদের সমমান পাবলিক পরীক্ষাগুলোর তারিখসহ রুটিন আগেই নির্ধারিত থাকত।

স্কুল-কলেজ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সাধারণত কখনোই বাসায় বসে থাকে না। তাদের চঞ্চল মন। সারাক্ষণ এদিক-ওদিক ছোটছুটি করে বেড়ানোই তাদের স্বভাব। সারাক্ষণই নিয়মিত প্রাতিষ্ঠানিক ক্লাস, পরীক্ষা, কোচিং, মডেল টেস্ট, ভর্তি পরীক্ষা, প্রাইভেট পড়া, পড়ানো, প্রাইভেট টিউশন করা, করানো—ইত্যাদি কার্যক্রমে সর্বদাই শিক্ষার্থীরা ব্যস্ত থাকত। কিন্তু এখন কার্যত এর সবই বন্ধ রয়েছে। সেজন্য শিক্ষার্থীরা হতভম্ব ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছে। দিশেহারা হয়ে পড়েছে তাদের ভবিষ্যত্ ভাবনায়। শুরুর দিকে করোনার আতঙ্কের মধ্যেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে লেখাপড়ার বাইরে থাকতে পেরে অনেক খুশি হয়েছিল তারা। কিন্তু দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এখন তাদের আর ভালো লাগছে না, যা প্রতিনিয়ত প্রতীয়মান। তারা না পারছে কোথাও বেড়াতে যেতে, না পারছে বন্ধুবান্ধব ও সহপাঠীদের সঙ্গে মিশে সময় কাটাতে। সেজন্য তারা একগুঁয়ে ও বোরিং হয়ে পড়ছে।

তবে সরকারি নির্দেশে সব না হলেও কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনলাইন-ভিত্তিক ক্লাস নেওয়া শুরু করেছে। তবে এর সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এখন অবশ্য অনলাইন ক্লাসের বাইরে আর কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। ডিজিটাল প্রযুক্তির কল্যাণে গ্রামীণ পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও এখন অনলাইন ক্লাসের আওতায় চলে এসেছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে জুম অ্যাপ, গুগল মিট, বিডিরেনসহ আরো অনেক অ্যাপের মাধ্যমে এসব অনলাইন কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখন অনলাইন ক্লাসের পাশাপাশি সীমিত আকারে কুইজভিত্তিক মূল্যায়ন হিসেবে পরীক্ষাও শুরু করেছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি ইতিমধ্যে সরকার এইচএসসি পরীক্ষার বিশেষ পদ্ধতিতে ফলাফল প্রকাশের পাশাপাশি মাধ্যমিক পর্যায়ে বিশেষভাবে মূল্যায়নের ভিত্তিতে অটো প্রমোশন দেওয়ার নির্দেশনা জারি করেছে।

অনলাইন ক্লাস একদিকে যেমন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আধুনিক ডিজিটাল ডিভাইস হিসেবে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ডেস্কটপ কম্পিউটার ব্যবহারে অভ্যস্ত হচ্ছে, অপরদিকে তারা এসব ডিজিটাল ডিভাইসে আসক্ত হয়ে পড়ছে। এটি একদিকে সুবিধা এবং অপরদিকে অসুবিধা। সুবিধা হলো—সবাই এসব ডিজিটাল ডিভাইসে অভ্যস্ত হলে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার উদ্যোগ আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে। অপরদিকে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রত্যেকের নিজ নিজ নামে ইমেইল আইডি, ফেসবুক আইডি খুলে চ্যাটিংয়ে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। অবসরের বেশির ভাগ সময় তারা এসব ডিভাইসে আটকে থাকছে। আর সব অভিভাবকের সংগতি একরকম নয়। সবার একটি স্মার্টফোন কিংবা ল্যাপটপ, ডেস্কটপ ক্রয়ের জন্য সংগতি বা সচ্ছলতা নেই। আবার এগুলো ক্রয়ের ব্যবস্থা করতে পারলেও নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট ব্যবস্থা রাখা সম্ভবপর হচ্ছে না। এতে যাদের সংগতি নেই তারা এসব সুযোগসুবিধা হতে বঞ্চিত হচ্ছে। অর্থাত্ সবার সমান অধিকারের বিষয়টি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। তাতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকে মানসিকভাবে হতাশ হয়ে পড়ছে। সংগতিহীনরা নিজেদেরকে ছোট ও বঞ্চিত মনে করে হীনম্মন্যতায় মানসিকভাবে কষ্ট পাচ্ছে।

তবে মন্দের ভালো যে শিক্ষার্থীদের অলস সময় কিছুটা হলেও কাজে লাগছে, উপরন্তু বিষয়টি শুধু যেহেতু আমাদের দেশের একার নয়। আর এমন পরিস্থিতি মোকাবিলার অভিজ্ঞাও আমাদের কারো নেই। সেজন্য বিজ্ঞানী থর্ন ডাইকের প্রচেষ্টা ও ভ্রম সংশোধন (Trial and error) নীতির মাধ্যমেই এগুলো ছাড়া গত্যন্তর নেই। তবে প্রত্যাশা করি যেন এমন পরিস্থিতি আর প্রলম্বিত না হয়। আর হলেও যেন তা আমরা কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে পারি এবং সে বিষয়েও গবেষণা পরিচালনা করা প্রয়োজন। এমনিভাবেই হয়তো আমরা অন্য মহামারির মতো করোনাকেও জয় করব ইনশাল্লাহ। এমন প্রত্যাশার মাধ্যমেই আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মানসিক শক্তি ফিরে আসবে।

লেখক : ড. মো. হুমায়ুন কবীর, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032229423522949