করোনার চেয়েও ভয়াবহ ডেঙ্গু - দৈনিকশিক্ষা

করোনার চেয়েও ভয়াবহ ডেঙ্গু

সন্তোষ দাস |
প্রায় দুই বছর তাণ্ডব চালিয়ে করোনার প্রকোপ কিছুটা কমেছে বলা যায়। তবে এখনো দুয়েকজন যে আক্রান্ত হন না বা মৃত্যুবরণ করেন না এমন নয়। তবে মানুষ এটা নিয়ে এখন আর মোটেও আতঙ্কিত নয়। গত দুই বছরে বিশেষ করে বাংলাদেশে করোনার জায়গাটি দখল করেছে ডেঙ্গু। শুধু দখলই করেনি, এই মুহূর্তে তার রূপ ভয়বহ। আমার মনে হয় করোনার থেকেও ডেঙ্গু মারাত্মক। এই অর্থে যে, কিছু স্বাস্থ্যবিধি যেমন-সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পরিধান করা, হ্যান্ড সেনিটাইজার ব্যবহার করা বা নির্দিষ্ট সময় পর পর সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, খুব জরুরি না হলে ঘরে থাকা ইত্যাদি মানলে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম থাকে। কিন্তু যেহেতু, ছোট্ট একটা প্রাণী মশার কামড়ে ডেঙ্গু হয়। তাই যেকোনো সময় যেকোনো স্থানে যেকোনো ব্যক্তিকে মশায় কামড়াতে পারে। সেই মশাটি যদি হয় এডিস মশা তাহলে ওই ব্যক্তি ডেঙ্গু হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেলেন এবং এতে তার মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। কোনো অবস্থাতেই মশা কামড়াবে না, এমন গ্যারান্টি কেউ দিতে পারে না। গত জুলাই এবং চলতি আগস্ট মাসে বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটেছে। গড়ে প্রতিদিন দশ-বারো জন নিহত হচ্ছে এবং দুই হাজার থেকে আড়াই হাজারের মতো আক্রান্ত হচ্ছে। ডেঙ্গুতে নিহত এবং আক্রান্ত হওয়ার অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে এ বছর। ডেঙ্গু নিয়ে মানুষ ভীষণ আতঙ্কিত, উদ্বিগ্ন, উৎকন্ঠিত।
 
ডেঙ্গুর বাহক এডিস জাতীয় এক প্রকার স্ত্রী মশা। আগে এরা সকালে বা সন্ধ্যায় স্বল্প আলোতে চলাচল করতো এবং মানুষকে কামড়াতো। কিন্তু এখন দিন রাতের যেকোনো সময়ই এদের দাপট দেখা যায়। করোনার মতো এরাও রূপ বদলে অবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে, যেটা মানুষের জন্য আরো বিপদজনক অবস্থার সৃষ্টি করছে। এডিস মশা ডিম পাড়ে জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে। এই এডিস মশার কামড়ে মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়। এই জ্বরের উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে-প্রচণ্ড জ্বর, মাথাব্যথা, বমি, পেশিতে ও গাঁটে ব্যথা, পেটে ব্যথা, চোখে ব্যথা, চামড়ায় ফুসকুড়ি ইত্যাদি। হাড়ের সংযোগস্থলে প্রচণ্ড ব্যাথা হয় বলে একে হাড় ভাঙা জ্বরও বলে। সাধারণ ডেঙ্গু জ্বর ৩-৪ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। কিন্তু হেমোরেজিক ফিভার বা রক্তক্ষয়ী জ্বর মারাত্মক। এর ফলে দাঁতের মাড়ি বা নাক দিয়ে রক্তপাত হয়। রক্তে অনুচক্রিকার মাত্রা কমে যায়। এতে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে থাকে।
 
ডেঙ্গু জ্বরের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় এটি একটি প্রাচীন রোগ। চীনের চিকিৎসা সংক্রান্ত নথি পত্রে এই রোগের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। ৯৯২ খৃষ্টাব্দে এই রোগটি প্রথম শনাক্ত হয়েছিলো বলে জানা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের মতে আঠারো এবং উনিশ শতকের দিকে বিশ্বব্যাপী যখন জাহাজ শিল্পের বিকাশ ঘটতে থাকে, তখন এই রোগের বাহক এডিস মশা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। ১৭৭৯ খ্রিষ্টাব্দে ডেঙ্গু জ্বর শনাক্ত হয় এবং এর এরূপ নামকরণ করা হয়। এর পরের বছর প্রায় একই সময়ে এশিয়া, আফ্রিকা ও উত্তর আমেরিকায় এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ডেঙ্গু রোগের বিস্তার ঘটে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে মহামারি আকারে প্রথম ডেঙ্গু শনাক্ত হয় ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ফিলিপিন্স এবং থাইল্যান্ডে। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের আগে মাত্র নয়টি দেশে ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা গেলেও বর্তমানে এটি একশোটিরও বেশি দেশে ছড়িয়েছে। এই দেশগুলির অধিকাংশ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে অবস্থিত। বাংলাদেশে প্রথম ডেঙ্গু জ্বর শনাক্ত হয় ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকাতে। পরবর্তী বছরগুলোতে এটা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং গত দুই বছর এর প্রকোপ খুব বৃদ্ধি পেয়েছে। 
 
কয়েক প্রকার স্ত্রী এডিস মশার মধ্যে এডিস ইজিপ্টি প্রধানতম। এর পাঁচটি সেরোটাইপ রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে ভাইরাসটির একটি সেরোটাইপ সংক্রমণ করলে সেই সেরোটাইপের বিরুদ্ধে রোগী আজীবন প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করে, কিন্তু ভিন্ন সেরোটাইপের বিরুদ্ধে সাময়িক প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করে। পরবর্তীকালে ভিন্ন সেরোটাইপের ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমিত হলে রোগীর মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে। ডেঙ্গু জ্বর ছোঁয়াচে নয়। তবে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তিকে মশায় কামড়ালে সেই মশাটি ডেঙ্গু জ্বরের জীবানু দ্বারা আক্রান্ত হয়। তখন ওই মশাটি যাকে কামড়ায় সেও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন। 
 
সম্প্রতি ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের দেশে টিকা নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে। এখনো কোনো টিকা অনুমোদিত হয়ে বাজারে এসেছে এমনটি জানা যায়নি। অবশ্য বিশ্বের কয়েকটি দেশে টিকা অনুমোদিত হয়েছে। যদিও এই টিকা শুধু একবার সংক্রমিত হয়েছে এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে কার্যকর। ডেঙ্গু জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ ছাড়া অন্য কোনো ওষুধও নেই। তাই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এবং প্রতিরোধে এডিস মশার কামড় এড়িয়ে চলাই শ্রেয়। এ জন্য মশার আবাসস্থল ধ্বংস করে এর বংশবিস্তার রোধ করতে হবে। এ মশার উল্লেখযোগ্য আবাসস্থল হলো ফুলের টব, টায়ার, ডাবের খোলা, গর্ত, নালা, ডোবা, নর্দমা ইত্যাদিতে আটকে থাকা স্বচ্ছ পানি। এগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। মশারি টানিয়ে শুতে হবে এবং শরীরের বেশির ভাগ অংশ ঢেকে রাখতে হবে। এভাবে সার্বক্ষণিক সচেতন থেকে এ কাজগুলো করার মাধ্যমে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
 
লেখক : সন্তোষ দাস, প্রভাষক সরকারি ফজিলাতুন নেছা মুজিব মহিলা ডিগ্রি কলেজ, ফকিরহাট, বাগেরহাট

 

 

 

শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036239624023438