করোনার কারণে ভবিষ্যৎ কর্ম নিয়ে ৬৩ শতাংশ মানুষ হতাশ। শহরের ৫৩ শতাংশ তরুণ-তরুণী এই হতাশায় ভুগছে। গ্রামে এই সংখ্যা ৬৭ শতাংশ।
গতকাল রবিবার সকালে ‘কভিড-১৯ ও বাংলাদেশ : আর্থ-সামাজিক পুনরুজ্জীবনে যুব এজেন্ডা’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংলাপে এ তথ্য তুলে ধরে বেসরকারি সংগঠন এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ। সংগঠনটি ১৮ থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত এক হাজার ১৬৩ জনের ওপর অনলাইনে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে এই জরিপ চালায়। ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৮৬৩ জন পুরুষ, ২৯৯ জন নারী এবং একজন তৃতীয় লিঙ্গের।
করোনায় যুবসমাজের জন্য তৈরি হওয়া চ্যালেঞ্জগুলো কী এবং কিভাবে তা মোকাবেলা করা যায় এ বিষয়ে আয়োজিত ভার্চুয়াল সংলাপে করোনার কারণে পিছিয়ে পড়া যুবসমাজকে ভবিষ্যতে তৈরি হওয়া শ্রমবাজারে জায়গা করে নিতে হবে বলে জানান বক্তারা। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য খাতে তৈরি হওয়া শ্রমবাজারটাই গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্য খাতের আন্তর্জাতিক শ্রমবাজার ধরতে হলে প্রয়োজনীয় দক্ষতা থাকতে হবে। এ জন্য আমাদের যুবক ও যুব মহিলাদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনার তাগিদ দেন তাঁরা। প্রয়োজনে প্রণোদনার টাকা থেকে বরাদ্দ দিয়ে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
জরিপে বলা হয়, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ৩৫ শতাংশ মানুষ কাজ করছে। ৩৩ শতাংশ মানুষ কাজে ঢুকতে পারেনি। তারা কাজ খুঁজছে। এ ছাড়া ১৫ শতাংশ শিক্ষা ও কাজ একসঙ্গে করছে। ৩ শতাংশ মানুষ কোনো কাজ, প্রশিক্ষণ কিংবা শিক্ষা কিছুই করছে না।
করোনার কারণে প্রযুক্তিগত বৈষম্য, শিক্ষা, দক্ষতা ও কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে বলা হয়, জরিপে অংশ নেওয়া ৮০ শতাংশই জানিয়েছে করোনা পরিস্থিতিতে তাদের আয় কমে গেছে। ৬৯ শতাংশ মানুষ জানিয়েছে তাদের আয় উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। তবে মাত্র ১ শতাংশ মানুষ অর্থাৎ এক হাজার ১৬৮ জনের মধ্যে ১২ জন বলেছে তাদের আয় বেড়েছে।
করোনার কারণে ২৮ শতাংশ মানুষ শিক্ষা ছেড়ে কাজে নেমেছে তাদের পরিবারকে সহায়তা করতে। শিক্ষা থেকে ফিরে আসা এই সংখ্যার মধ্যে ৭ শতাংশ শহর বা নগরের। ২৫ শতাংশ রয়েছে গ্রামের। এ ছাড়া আরো ৮ শতাংশ মেয়ে শিক্ষাজীবন ছেড়েছে বিয়ে হয়ে যাওয়ার কারণে।
করোনার কারণে ৬৩ শতাংশ মানুষ হতাশা বা দুশ্চিন্তায় রয়েছে ভবিষ্যৎ আয়-রোজগার বা কাজের সুযোগ পাওয়ার বিষয়ে। শহরের ৫৩ শতাংশ তরুণ-তরুণী এই একই দুশ্চিন্তায় রয়েছে। গ্রামে এই সংখ্যা ৬৭ শতাংশ।
জরিপে অংশ নেওয়া ৯৬ শতাংশ মানুষ জানিয়েছে, করোনার মধ্যে তারা বিভিন্ন ধরনের মানসিক অবসাদে ভুগছে। এর মধ্যে ৫৯ শতাংশ মানুষের অবসাদ গুরুতরভাবে বেড়েছে।
করোনায় অনলাইন শিক্ষা বিষয়ে জরিপে বলা হয়, ৫৮ শতাংশ মানুষ কোনো ডিজিটাল সুবিধার আওতায় আসতে পারেনি। তারা কোনো অনলাইন শিক্ষা বা প্রশিক্ষণে অংশ নিতে পারেনি। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬৩ শতাংশই জানিয়েছে তারা কোনো অনলাইন শিক্ষা বা প্রশিক্ষণে নেই। ৩৬ শতাংশ জানিয়েছে তারা অনলাইনে শিক্ষা নিচ্ছে।
জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় ৮০ শতাংশই জানিয়েছে, করোনা পরিস্থিতিতে তারা সরকারি কোনো সহযোগিতা পায়নি।
জরিপ বলছে, ৭০ শতাংশ মানুষই চায় দেশে বেকার ভাতা চালু হোক। প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে দেওয়া হোক। ২৩ শতাংশ বলছে এটি তিন হাজার টাকা হলেও চলে।
অনুষ্ঠানের সহ-আয়োজক ছিল জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশ, একশনএইড বাংলাদেশ, ফ্রেডরিক ইবার্ট স্টিফটুং বাংলাদেশ, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, ওয়াটার এইড বাংলাদেশ এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। জরিপ প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন সিপিডির কর্মসূচি সহযোগী তামারা-ই-তাবাসসুম।
বিশেষ অতিথির ভাষণে সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ধারণা করা যাচ্ছে করোনার সময়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পলিটেকনিক, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। ১০-১৫ শতাংশের পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তাঁর মতে, দক্ষ কর্মশক্তি তৈরির জন্য কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারে নিয়ে আসতে হবে। সংকটকালে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ দিতে তরুণ-যুবকদের শর্ত সাপেক্ষে আগামী ছয় মাস বেকার ভাতা দেওয়া যেতে পারে।
আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক ও সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, যুবসমাজের একটি অংশ শিক্ষা, প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন তৎপরতায় সক্রিয়। অন্য একটি অংশ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। কেউ মাদকে যুক্ত, কেউ অবসাদে ভুগছে। তাই অখণ্ড নয়, বিভাজিতভাবেই যুবাদের দেখতে হবে এবং তাদের কিভাবে সক্রিয়ভাবে কর্মসংস্থানে যুক্ত করা যায়, তা নিয়ে চিন্তা করতে হবে।