করোনার প্রভাবে সেশনজটে পড়তে হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে - দৈনিকশিক্ষা

করোনার প্রভাবে সেশনজটে পড়তে হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

করোনাভাইরাসের কারণে গত মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এই সময়ে টেলিভিশন ও অনলাইনে ক্লাস প্রচারিত হলেও তাতে অংশ নিতে পারেনি বেশির ভাগ শিক্ষার্থী। বিশেষ করে দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা পুরোপুরিই ছিল পড়ালেখার বাইরে। অস্বাভাবিক এই পরিস্থিতিতে কোনো ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই পরবর্তী শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়েছে শিক্ষার্থীদের। মূলত অসম্পূর্ণ ও অপূর্ণাঙ্গ শিক্ষা নিয়েই একটি বছর পার করেছে তারা। সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শরীফুল আলম সুমন।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, করোনার জন্য বাতিল করা হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি), জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও উচ্চ মাধ্যমিকের (এইচএসসি) মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। এ বছর স্কুলে প্রথম সাময়িক, দ্বিতীয় সাময়িক, অর্ধবার্ষিক বা বার্ষিক পরীক্ষাও হয়নি। তবে সব শিক্ষার্থীই পরের শ্রেণিতে উন্নীত হয়েছে। কিন্তু এতে বড় ধরনের অপূর্ণাঙ্গতা থেকে যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় শিখনফল অর্জন না করায় পরের শ্রেণিতে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর তাল মেলানো বড় কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

করোনায় শুধু চলতি শিক্ষাবর্ষই নয়, আগামী শিক্ষাবর্ষও ক্ষতিগ্রস্ত হতে যাচ্ছে। আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাও নির্ধারিত সময়ে হচ্ছে না বলে জানা গেছে। আগামী শিক্ষাবর্ষের স্কুল ভর্তি পরীক্ষাও এবার হয়নি, লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে। কিন্তু কবে এসব শিক্ষার্থী ক্লাসে যেতে পারবে এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। এমনকি একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হলেও তারা এখনো কলেজে যেতে পারেনি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রমেও নেমে এসেছে স্থবিরতা।   

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘করোনায় সবচেয়ে বড় ক্ষতিতে যে শিক্ষাব্যবস্থাই, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। আমার মত হচ্ছে, না পড়িয়ে একজন শিক্ষার্থীকে কোনো অবস্থাতেই ওপরের ক্লাসে ওঠানো ঠিক না। কারণ লেখাপড়া একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। যদি একজন শিক্ষার্থী সপ্তম শ্রেণিতে ভালোভাবে টেনস না শিখতে পারে, তাহলে অষ্টম শ্রেণিতে গিয়ে সে ন্যারেশন পারবে না। অর্থাৎ প্রতি শ্রেণির পড়া সে ঠিকমতো পড়তে না পারলে তার শিখনশূন্যতা থেকে যাবে। তাই আমার প্রস্তাব বর্তমান সেশনটাকে বৃদ্ধি করে জুন পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া। এতে শিক্ষার্থীরা কিছুটা পড়তে পারবে, পরীক্ষাও নেওয়া যাবে। প্রয়োজনে পরবর্তী সেশন জুলাই থেকে শুরু করতে হবে।’   

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সাধারণত বছরের শুরুর দিকে স্কুলগুলোতে তেমন একটা লেখাপড়া হয় না। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে নানা ধরনের খেলাধুলা, পিকনিক, স্পোর্টস ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা থাকে। সেগুলোর পেছনেই ব্যস্ত থাকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তাই গত ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের আগে খুব একটা লেখাপড়া হয়নি। কয়েক দফা ছুটি বাড়িয়ে তা আগামী ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত করা হয়েছে।

সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ হয়ে যায়। মে মাস থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা এবং জুলাই মাস থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাস শুরু হয়। কিন্তু সব শিক্ষার্থীর কাছে প্রয়োজনীয় ডিভাইস না থাকা, দুর্বল ও ধীরগতির ইন্টারনেট এবং ইন্টারনেটের উচ্চমূল্যের কারণে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর পক্ষেই অনলাইন ক্লাস করা সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া পরীক্ষা না হওয়ায় অনলাইন ক্লাসেও আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় না খুললেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে এরই মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা শুরু করেছে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু এর পরও বড় ধরনের সেশনজটে পড়তে হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘আমি মনে করি, অর্থনীতির ক্ষতি সরকার মোকাবেলা করতে পেরেছে। কিন্তু শিক্ষায় বড় ক্ষতি হয়ে গেছে, যদিও এতে কারো হাত নেই। শিক্ষার ক্ষতি সঙ্গে সঙ্গে বোঝা যায় না। তাই হয়তো এখনই আমরা বুঝতে পারছি না। তবে পশ্চিমা বিশ্ব ভার্চুয়াল লেখাপড়ায় বেশ এগিয়ে, সে জন্য তাদের ক্ষতি কিছুটা কম। আমাদের অনলাইন শিক্ষাও আরো জোরদার করতে হবে।’ 

করোনাকালে শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে প্রচণ্ড বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে গ্রাম-শহর ও ধনী-দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে। শহরের শিক্ষার্থীরা টেলিভিশনের ক্লাস না দেখলেও অনলাইনে নিয়মিত ক্লাস করছে। এমনকি ধনী পরিবারের সন্তানরা অনলাইন বা সরাসরি প্রাইভেট পড়ছে। কিন্তু দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা পুরোপুরিই পড়ালেখার বাইরে রয়েছে। গ্রামাঞ্চলের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী বা অভিভাবকের টেলিভিশন, স্মার্টফোন বা অনলাইন ক্লাসের জন্য অন্য কোনো ডিভাইসই নেই।

এক দশক ধরে পূর্বনির্ধারিত শিক্ষাসূচি অনুযায়ীই চলছে শিক্ষাব্যবস্থা। নির্দিষ্ট সময়ে অনুষ্ঠিত হয় পাবলিক পরীক্ষা। প্রতিবছর ১ ফেব্রুয়ারি এসএসসি ও ১ এপ্রিল এইচএসসির সূচি ছিল সব শিক্ষার্থীরই জানা। যথাসময়ে ফলাফল প্রকাশ শেষে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় শিক্ষার্থীরা। প্রতিবছর যথাযথভাবে সিলেবাস শেষ করেই নেওয়া হতো বিভিন্ন শ্রেণির পরীক্ষা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেশনজট নেমে এসেছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পাঁচ কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষাসূচিই এলোমেলো হয়ে গেছে।

প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ - dainik shiksha প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার - dainik shiksha তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার - dainik shiksha স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন - dainik shiksha নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.006721019744873