বিগত বছরের এই সময়গুলোতে শিক্ষার্থীদের ক্লাস টেস্ট, অ্যাসাইনমেন্ট, বার্ষিক পরীক্ষার ধুম পড়ে যেত। শিক্ষার্থীদের চাঞ্চল্য বেড়ে যেত কয়েক গুণ। রেজাল্ট ভালো করতেই হবে। পরীক্ষা শেষে শীতের ছুটিতে সবাই কত না মজা করত। সবাই যার যার মতো করে শীতের ছুটি কাটাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ত। ছিল বছর শেষে অবসরে শীতের একটা আমেজ। এবার যেন সবকিছুরই ছন্দপতন ঘটেছে। কেউ আর খুব সকালে বই হাতে বাইরে বের হয় না। কর্মচঞ্চলতাও কমে গেছে প্রতিটি শিক্ষার্থীর। কেমন কাটছে তাদের দিনগুলো..! সোমবার (৩০ নভেম্বর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
নিবন্ধে আরও জানা যায়, চলতি বছরের মার্চ মাসেই বন্ধ হয়ে যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব প্রতিষ্ঠান। লকডাউন করে দেওয়া হয় পুরো দেশকে। ধাপে ধাপে বৃদ্ধি করা হয় এর মেয়াদ। অন্য সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের ছন্দপতন ঘটলেও সেগুলো ধীরে ধীরে প্রাণ ফিরে পায় পুরোদমে। সময় গড়িয়ে যায়। শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই বন্ধ আছে। যার দরুন শিক্ষাব্যবস্থার বেহাল দশা। শিক্ষার্থীরাও যেন নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে পুরোপুরি।
বাসায় নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে থাকতে থাকতে শিক্ষার্থীরা মানসিক সমস্যাসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছে। কর্মহীন সময়টায় বেড়ে চলছে গ্যাং কালচারসহ বিভিন্ন অপসংস্কৃতি। চিন্তিত হয়ে পড়ছে অভিভাবকগণ। আসলে এই সময়টা শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে? প্রশ্নটা সবারই।
দীর্ঘদিন বাসায় সঙ্গহীন বসে থাকতে থাকতে শিক্ষার্থীরা হতাশায় ভুগছে। তার ফলে আত্মহত্যা বেড়েই চলেছে ক্রমশ। আমরা হারিয়ে ফেলছি মেধাবীদের। বর্তমান সময়ে এটি খুব বড় এক চিন্তার বিষয়।
অনেক শিক্ষার্থী তাদের পড়াশোনা থেকে শুরু করে পরিবারের খরচ চালাত টিউশনি করে। আবার কেউ পার্টটাইম জব করে নিজের ব্যয়ভার বহন করত কিন্তু তারা আজকে খুবই আর্থিক সংকটে দিন পার করছে। তাই হতাশা আরো বেশি করে বাড়ছে দিনকে দিন।
এই মহামারিতে কেউ কেউ আবার নিজেকে একজন দক্ষ উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে চেষ্টা করছেন। তাই বাসায় বসে বসে খুলে ফেলেছেন অনলাইন শপিং প্ল্যাটফরম। আবার কেউ পশুপালন, মাছ চাষ ও অন্যান্য কৃষি কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। লড়াই করছে প্রতিনিয়ত। শ্রম ও সাধনায় যাদের প্রচেষ্টা নিয়মিত তাদের আবির্ভাব ঘটছে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে।
পড়াশোনার পাশাপাশি একেক জন শিক্ষার্থী নিজেকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যায়। একজন শিক্ষার্থী পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলায়ও হয়ে ওঠে অনন্য। শিক্ষার্থীদের মনন বিকাশের পাশাপাশি শারীরিক দিক দিয়ে অনেক ক্ষিপ্র হয়ে ওঠে। বাসায় তারা নিজেকে নিয়ে আর কতটুকুই বা ঝালিয়ে নিতে পারে।
করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ প্রায় আট মাস। এই সময়ে একজন শিক্ষার্থী ছিটকে পড়ছে না তো শিক্ষার সিঁড়ি থেকে? প্রত্যেক সচেতন অভিভাবকেরই এই সময়ে সর্বদা সন্তানদের খোঁজখবর নেওয়া উচিত। তাই সন্তানকে নিয়মিত সময় দেওয়া এবং পারিবারিক শিক্ষার ওপর জোর দিলে করোনার প্রভাব অনেকটা স্তিমিত হবে আশা করা যায়।
লেখক : আব্দুর রউফ খন্দকার, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়