করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ঠেকাতে সীমান্ত বন্ধ চান বিশেষজ্ঞরা - দৈনিকশিক্ষা

করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ঠেকাতে সীমান্ত বন্ধ চান বিশেষজ্ঞরা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের উচ্চ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে। আজ থেকে দোকানপাট ও শপিং মল খুলছে। আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে গণপরিবহন খোলার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে সরকার পক্ষ থেকে। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে অনেকটাই আগের অবস্থায় ফিরবে দেশ। ১৪ এপ্রিল থেকে চলমান কঠোর বিধিনিষেধে দেশে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা অনেকটাই  নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আবার ব্যবসায়ী, শ্রমজীবী মানুষ এবং প্রায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষই মনে করছে, এভাবে লকডাউন বা কঠোর বিধিনিষেধে দেশের অর্থনীতির চাকা বন্ধ হয়ে যাবে। তাই সরকার কঠোর বিধিনিষেদের সময়সীমার মধ্যেই ধীরে ধীরে সবকিছু খুলে দিচ্ছে।

এদিকে প্রতিবেশী দেশ ভারতে করোনা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দেশটির সরকার এটি মোকাবিলা করতে হিমশিম খাচ্ছে। গতকাল দেশটিতে তিন লাখের কাছাকাছি আক্রান্ত হয়েছে আর মারা গেছে ১৭৩২। ভারতে আশঙ্কাজনক হারে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ছড়াচ্ছে। ডাবল ও ট্রিপল মিউট্যান্ট ভাইরাসের কথা শোনা যাচ্ছে। নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশে চলে আসার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। আর যদি এ ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশে চলেই আসে তাহলে আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে।

করোনার ভারতীয় নতুন ভ্যারিয়েন্ট যেন বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সে জন্য সীমান্ত বন্ধ বা কঠোর সতর্কতার জারির সুপারিশ করেন জনস্বাস্থ্যবিদ ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, দেশে এখনো ভারতের নতুন ভ্যারিয়েন্ট রিপোর্টেড হয়নি। কিন্তু যেহেতু ভারত একেবারেই কাছের দেশ, সীমান্তগুলোও সীমিতভাবে চালু রয়েছে, স্থলবন্দর দিয়ে যাতায়াতও রয়েছে, তাই দেশে এই ভ্যারিয়েন্ট আসা সময়ে ব্যাপার। আর দেশে যদি এই ভ্যারিয়েন্ট এসে যায়, তবে ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগবে না। তাই এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

কভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেছেন, একেবারেই জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভারতের সঙ্গে যাতায়াত বন্ধ করা দরকার। তিনি বলেন, জাতীয় কমিটি এ নিয়ে কিছুটা উদ্বিগ্ন। কমিটিতে বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। আজকালের মধ্যে সরকারকে সুপারিশ করা হবে।  অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, সীমান্তের যাতায়াত খুব সীমিত করতে হবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যাতায়াত বন্ধ করে দিতে হবে। ভারত থেকে যারা আসবে তাদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক করতে হবে। সেটা স্থল হোক আর আকাশপথ হোক প্রত্যেককে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন দিতে হবে। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. বে-নজীর আহমেদ বলেন, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট আমাদের জন্য নতুন হুমকি। তিনবার রূপ পাল্টাতে সক্ষম এ নতুন ধরন ছড়াচ্ছে অতি দ্রুত। সেই সঙ্গে এটি তিনগুণ বেশি শক্তিশালী। দেশে এর সংক্রমণ রোধে আপাতত ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধের পরামর্শ  দেন এই বিশেষজ্ঞ। আর তা সম্ভব না হলে ডাবল ডোজ টিকার সনদ নিয়ে যেন তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করে এটি নিশ্চিত করতে হবে। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং কভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম, ভারত থেকে যদি চলেই আসে তবে তা আমাদের জন্য অনেক ঝুঁকির হবে, আর এটা যে আসবেই তা সহজে ধরে নেওয়া যায়। ভারত থেকে আসা যাত্রীদের সর্বোচ্চ কোয়ারেন্টাইনের জন্য টেকনিক্যাল কমিটি সুপারিশ করেছে। কিন্তু আমরা সেটাও করতে ব্যর্থ হয়েছি। তিনি বলেন, ভারতের নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট মোকাবিলা করা আমাদের জন্য কঠিন হবে। তাই এখনই ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ভারতের এই ভাইরাস আমাদের দেশে ছড়ানোর সমূহ আশঙ্কা আছে। একে তো আমাদের প্রতিবেশী দেশ, তার ওপর স্থলবন্দর দিয়ে প্রচুর মানুষ যাতায়াত করছে। তিনি ভাইরাস মিউটেশন নিয়ে গবেষণা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, ভারতের ভ্যারিয়েন্টটি সত্যিই বেশি বিপজ্জনক কি না তা এখনো প্রমাণ হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে বলেছে, ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট, অর্থাৎ একে খতিয়ে দেখা হবে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, ‘কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে আমাদের হয়তো সীমান্তে যোগাযোগ একেবারে বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব নয়। তাই বন্দরগুলোতে অ্যান্টিজেন টেস্ট চালু করা উচিত। এতে ২০ মিনিটের মধ্যে ফলাফল জানা যাবে। কোয়ারেন্টাইনও সেরা উপায়। কিন্তু যদি সেটা সম্ভব না হয়, তবে পরীক্ষা করিয়ে দেশে ঢোকাতে হবে। এতে অন্তত ৯০ শতাংশ শনাক্ত করা যাবে।’

জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ডাবল ও ট্রিপল মিউট্যান্ট করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে এখনো শনাক্ত হয়নি। এগুলো দেশে প্রবেশ করলে মহাবিপর্যয় দেখা দেবে। এই মিউট্যান্ট দুটির প্রবেশ ঠেকাতে হলে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের জল, স্থল ও বিমানপথ অনতিবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। এ ব্যাপারে অন্য কোনো বিকল্প উপায় অবলম্বন করা সম্ভব নয়। ইউকে, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিল ভ্যারিয়েন্ট বিমানবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। আমরা সেগুলো ঠেকাতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে সমর্থ হইনি। ২০২০ সালে ইতালি থেকে আসা একটি ফ্লাইটের যাত্রীদের কোয়ারেন্টাইনে রাখতে আমরা ব্যর্থ হয়েছিলাম। সে সব ব্যর্থতার দায় দেশকে চড়া মূল্যে পরিশোধ করতে হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। এবার ডাবল ও ট্রিপল মিউট্যান্ট করোনাভাইরাসের প্রবেশ ঠেকাতে ব্যর্থ হলে, আমাদের প্রিয় স্বদেশকে মানবিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করা কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠবে। ভারতের সঙ্গে জল, স্থল ও বিমানপথ বন্ধে আমরা যত দেরি করব বিপদ তত বাড়বে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেছেন, ভারতের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর থেকেই সীমান্তে সতর্কতা দেওয়া হয়েছে। যাতায়াতের সময় করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। আবার কোয়ারেন্টাইনেরও ব্যবস্থা রয়েছে। কারিগরি কমিটির সুপারিশ অবশ্যই আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

‘মিউটেশন’ ও ‘ভ্যারিয়েন্ট’

বিশেষজ্ঞরা বলেন, করোনা একটি বৈশ্বিক মহামারী। এক দেশ থেকে আরেক দেশে মানুষের মাধ্যমে বিস্তৃত হয়। করোনাভাইরাসের জিন বিন্যাসে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। এই পরিবর্তনকে ইংরেজিতে ‘মিউটেশন’ বলা হয়। মিউটেশনের মাধ্যমে ভাইরাস যে নতুন রূপ পরিগ্রহ করে তাকে বলা হয় ভ্যারিয়েন্ট। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মিউটেশনের পরে ভাইরাসটি দুর্বল হয়ে যায়। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশি শক্তিশালী হয়ে আরও ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। তখন এদের সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঘটনার ক্ষমতা বেড়ে যায়। ইউকে, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল ইত্যাদি নামের ভ্যারিয়েন্টগুলো এরকম ক্ষতিকর মিউটেশনের উদাহরণ।

ভারতে এখন চলছে তিনটি ভ্যারিয়েন্ট

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আরেকটি নতুন ভ্যারিয়েন্টের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। তিন ধরনের করোনাভাইরাস মিলে এটির উদ্ভব হয়েছে। তাই একে বলা হচ্ছে ট্রিপল মিউট্যান্ট। অনেকে এটির নাম দিয়েছে বেঙ্গল ভ্যারিয়েন্ট। এরমধ্যে বেঙ্গল ভ্যারিয়েন্টকে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণশীল বলা হচ্ছে। করোনার টিকা দ্বারা এটিকে প্রতিরোধ করা যায় না বলে অনেকে মনে করছেন। বিজ্ঞানীরা বেঙ্গল ভ্যারিয়েন্টকে অধিকতর গবেষণার জন্য তালিকাভুক্ত করেছে। ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গসহ দেশটির অন্তত চারটি রাজ্যে এ ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। বাকি রাজ্যগুলো হচ্ছে দিল্লি, মহারাষ্ট্র ও ছত্তিশগড়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কভিড-১৯ ভাইরাসের তিনটি আলাদা স্ট্রেইন মিলে তৈরি নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণের ক্ষমতা তিনগুণ বেশি। নতুন এই স্ট্রেইনে আক্রান্তদের শারীরিক অবস্থারও দ্রুত অবনতি ঘটছে।

ভারতে আগে থেকে বিদ্যমান অতিসংক্রমণশীল ইউকে, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিল ভ্যারিয়েন্টের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন ডাবল মিউট্যান্ট ভ্যারিয়েন্ট। দুই ধরনের করোনাভাইরাসের সমন্বয়ে ডাবল মিউট্যান্ট ভ্যারিয়েন্ট জন্ম নেয়। এটি আগের যে-কোনো ভাইরাসের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি সংক্রামক। এই ভ্যারিয়েন্টটির জন্যই মূলত ভারতের বর্তমান অবস্থা তৈরি হয়েছে।

ভারতীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে জানা গেছে, ভারতে করোনাভাইরাসের ‘ডাবল মিউট্যান্ট’ ধরন শনাক্তের পর থেকেই এ নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। জিনোম বিজ্ঞানীরা করোনাভাইরাসের যে ‘ডাবল মিউট্যান্ট ভ্যারিয়েন্ট’ চিহ্নিত করেছেন, সেটি নিয়েও উদ্বেগ আছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই ডাবল মিউটেশনের কারণে ভাইরাসটি মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে। টিকা তখন কাজ করে না। তবে ভারতের গবেষকরাও বলছেন ওয়েস্ট বেঙ্গল ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ প্রবণতা বা রোগের তীব্রতা সৃষ্টির প্রবণতা নিয়ে বলার মতো তথ্য এখনো অজানা।

প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের - dainik shiksha পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার - dainik shiksha ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034871101379395