জাতীয় জীবনে অগ্রগতির মূল চালিকাশক্তি শিক্ষা। শিক্ষা যেমন ব্যক্তিজীবনকে আলোকিত এবং উন্নত করে, তেমনি দেশ ও জাতিকে সমৃদ্ধ ও সমুন্নত করে। কারিগরি বা কর্মমুখী শিক্ষা এমন এক ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা, যা গ্রহণ করলে শিক্ষার্থীরা দেশে-বিদেশে, যে কোনো পেশায় অতি দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার যোগ্যতা লাভ করে। কারিগরি/কর্মমুখী শিক্ষার ধারণা মূলত পেশাগত কর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এটি এক ধরনের বিশেষায়িত শিক্ষা, যা শিক্ষার্থীর কর্মদক্ষতা সৃষ্টি করে এবং শিক্ষার্থীকে সৃজনশীল ও উত্পাদনমুখী করে তোলে। কর্মমুখী শিক্ষার উদ্দেশ্য কর্মক্ষমতা সৃষ্টি করে শিক্ষার্থীকে উপার্জনমূলক জনশক্তিতে রূপান্তর করা, জ্ঞান-বিজ্ঞানের সঙ্গে শিক্ষার্থীকে পরিচয় করানো এবং তার সুপ্ত গুণাবলিকে জাগ্রত করা। পাশাপাশি শিক্ষার্থীকে নৈতিক, সামাজিক এবং মানবিক-সাংস্কৃতিক মূল্যবোধে উজ্জীবিত করা। কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে জটিল সমস্যা সমাধানের মনোভাব ও দক্ষতা তৈরি হয়। বিজ্ঞান সম্পর্কে তাদের জানাশোনা তৈরি হয় এবং শিক্ষার্থীরা আবিষ্কারক ও উদ্ভাবক হয়ে উঠতে পারে। সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
নিবন্ধে আরও জানা যায়, আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে স্বল্পতম সময়ে দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে শ্রমবাজারের মূল স্রোতে নিয়ে আসা সম্ভব। দেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশই তরুণ, আর এই ডেমোগ্রাফিক ডেভিডেন্টকে কাজে লাগাতে হলে কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নাই। আমাদের দেশের বিদেশগামী লোকের অধিকাংশই অনভিজ্ঞ থাকে, এতে করে তারা নিম্ন বেতনে কর্মরত হয়। এই অভিবাসী শ্রমিকদের কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের জীবন-জীবিকার আয় উন্নতির ব্যাপক পরিবর্তন করা সম্ভব। দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ধরে রাখতে হলে কর্মমুখী শিক্ষা অতি প্রয়োজনীয় বিষয়। যেসব দেশ কর্মমুখী শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে তারা এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুত গতিতে। আমাদেরও কর্মমুখী শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে, দেশের জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তর করতে।
তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ যখন কর্মমুখী শিক্ষার দিকে ঝুঁকছে, তখন আমরা পিছিয়ে রয়েছি। কর্মমুখী শিক্ষার অভাবে চাহিদানুযায়ী দক্ষ জনবল পাওয়া যাচ্ছে না কার্যক্ষেত্রে। অথচ দেশের সর্বোচ্চ সার্টিফিকেট নিয়েও অসংখ্য শিক্ষিত যুবক ঘুরছে চাকরির বাজারে। কর্মমুখী শিক্ষার অভাবে তাদের থাকতে হচ্ছে বেকার। রয়েছে নতুন পদ সৃষ্টি করতে না পারার ব্যর্থতাও। ফলে দেশের শিক্ষিত বেকাররা ব্যর্থতা ও হতাশায় আক্রান্ত হয়ে বিপথে যাচ্ছেন। এর ফলে বাড়ছে অপরাধের সংখ্যাও। গতানুগতিক গ্রন্থনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা ডিগ্রিধারী শিক্ষিত ব্যক্তি তৈরি করছে বটে; কিন্তু তা কর্মভিত্তিক না হওয়ায় ফলপ্রসূ হয়ে উঠছে না। কর্মমুখী শিক্ষা বেকারত্বের নিদারুণ অভিশাপ থেকে দেশকে মুক্ত করে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্যবিমোচনে এ শিক্ষা সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।
শিক্ষার মধ্য দিয়েই দেশের অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত হতে পারে। কর্মমুখী শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের মধ্য দিয়েই এ দেশ হতে পারে স্বনির্ভর। জাতীয় জীবনের উন্নতির স্বার্থে সাধারণ শিক্ষার মাধ্যমে ডিগ্রি অর্জনের মোহ কাটাতে হবে। দেশের বিপুলসংখ্যক জনসংখ্যাকে উপযুক্ত কর্মমুখী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মধ্যমে উত্পাদনমুখী কাজে ব্যবহার করে জনশক্তিতে রূপান্তর করতে হবে।
লেখক : সুরাইয়া ইয়াসমিন তিথী, শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।