কলেজছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার, বসুন্ধরার এমডির বিরুদ্ধে মামলা - দৈনিকশিক্ষা

কলেজছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার, বসুন্ধরার এমডির বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

রাজধানীতে নিজ ফ্ল্যাট থেকে কলেজ পড়ুয়া এক তরুণীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে মামলা করেছে তরুণীর পরিবার। 

মোসারাত জাহান মুনিয়া। ছবি : সংগৃহীত

ঘটনাটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে পুলিশ। সব রকম আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন গুলশান বিভাগের পুলিশের ডিসি সুদীপ কুমার চক্রবর্তী।

কুমিল্লার কোতয়ালীর থানার বীর মুক্তিযোদ্ধা সফিকুর রহমানের ছোটো মেয়ে মোসারাত জাহান মুনিয়া রাজধানীর একটি কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়াশুনা করতেন। রাজধানীর গুলশান-২ এর ১২০ নম্বর বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। বাসা ভাড়া এক লাখ টাকা। দুই লাখ টাকা আগাম দেয়া হয়েছে। 

সায়েম সোবহান আনভীর ও মোসারাত জাহান মুনিয়া। ছবি : সংগৃহীত

জানা গেছে, মেয়েটি একাই বাসায় থাকতেন। তবে শিল্পপতি প্রায়ই যাতায়াত করতেন। রবিবার মোশরাত জাহান তার পরিবারকে জানায়, তিনি ঢাকায় ঝামেলায় পড়েছেন, তাকে যেনো নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তার বোন ঢাকায় আসেন, মুনিয়ার ফ্ল্যাটে গিয়ে দরজা বন্ধ পান। সাড়া শব্দ না পেয়ে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকলে ফ্যানের সাথে ওড়না দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় ছোট বোনকে দেখতে পান। 

পরে পুলিশ মরদেহ গুলশান থানায় নিয়ে যায়। এরপর পাঠানো হয় ঢাকা মেডিক্যালের মর্গে। 

পুলিশ ধারণা করেছে, মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে। তার বড় বোন নুসরাত জাহান বাদী হয়ে, মঙ্গলবার রাত দেড়টায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ বসুন্ধরার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা করেন। 

গুলশান বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী জানান, রাতে মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান বাদী হয়ে ৩০৬ ধারায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে গুলশান থানায় মামলা করেন। মামলা নম্বর-২৭।  

বাদী মামলার এজাহারে বলেন, মোসারাত জাহান (২১) মিরপুর ক্যান্ট. পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। দুই বছর আগে মামলার আসামি সায়েম সোবহান আনভীরের (৪২) সঙ্গে মোসারাতের পরিচয় হয়। পরিচয়ের পর থেকে তাঁরা বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় দেখা করতেন এবং সব সময় মোবাইলে কথা বলতেন। একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

এজাহারে বলা হয়, ২০১৯ সালে মোসারাতকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে আসামি রাজধানীর বনানীতে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। সেখানে তাঁরা বসবাস করতে শুরু করেন। ২০২০ সালে আসামির পরিবার এক নারীর মাধ্যমে এই প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারে। এরপর আসামির মা মোসারাতকে ডেকে ভয়ভীতি দেখান এবং তাঁকে ঢাকা থেকে চলে যেতে বলেন। আসামি কৌশলে তাঁর (বাদী নুসরাতের) বোনকে কুমিল্লায় পাঠিয়ে দেন এবং পরে বিয়ে করবেন বলে আশ্বাস দেন।

এজাহারে আরও বলা হয়, সবশেষ গত ১ মার্চ মোসারাতকে প্ররোচিত করেন আসামি। তিনি বাসা ভাড়া নিতে বাদী নুসরাত ও তাঁর স্বামীর পরিচয়পত্র নেন। ফুসলিয়ে তিনি মোসারাতকে ঢাকায় আনেন। তিনি গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কে বাসা (ফ্ল্যাট-বি-৩) ভাড়া নেন। ফ্ল্যাটের একটি কক্ষে আসামি ও তাঁর (বাদীর) বোনের স্বামী-স্ত্রীর মতো ছবি তুলে তা বাঁধিয়ে রাখা হয়। আসামি বাসায় এলে কক্ষটি পরিপাটি করে রাখা হতো।

বাদী নুসরাত এজাহারে বলেন, বোনের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, আসামি তাঁকে বিয়ে করে বিদেশে স্থায়ী হবেন। কারণ, দেশে থাকলে আসামির মা–বাবা আসামিকে কিছু না করলেও তাঁর বোনকে মেরে ফেলবেন। গত ১ মার্চ থেকে আসামি মাঝেমধ্যে ফ্ল্যাটে আসা-যাওয়া করতেন।

বাদী এজাহারে বলেন, ২৩ এপ্রিল মোসারাত তাঁকে ফোন করেন। মোসারাত তাঁকে বলেছেন, আনভীর তাঁকে বকা দিয়ে বলেছেন, কেন তিনি (মোসারাত) ফ্ল্যাটের মালিকের বাসায় গিয়ে ইফতার করেছেন, ছবি তুলেছেন। ফ্ল্যাটের মালিকের স্ত্রী ফেসবুকে ছবি পোস্ট করেছেন। এ ছবি ‌পিয়াসা দেখেছেন। পিয়াসা মালিকের স্ত্রীর ফেসবুক বন্ধু। এখন পিয়াসা তাঁর মাকে সবকিছু জানিয়ে দেবেন। তিনি (আসামি) দুবাই যাচ্ছেন, মোসারাত যেন কুমিল্লায় চলে যান। আসামির মা জানতে পারলে তাঁকে (মোসারাত) মেরে ফেলবেন। 

এজাহারে নুসরাত বলেন, দুদিন পর ২৫ এপ্রিল মোসারাত তাঁকে ফোন করেন। ওই সময় তিনি কান্নাকাটি করে বলেন, আনভীর তাঁকে বিয়ে করবেন না, শুধু ভোগ করেছেন। আসামিকে উদ্ধৃত করে মোসারাত বলেন, আসামি তাঁকে বলেছেন, তিনি (মোসারাত) তাঁর শত্রুর সঙ্গে দেখা করেছেন। মোসারাতকে তিনি ছাড়বেন না। মোসারাত চিৎকার করে বলেন, আসামি তাঁকে ধোঁকা দিয়েছেন। যেকোনো সময় তাঁর বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাঁরা (বাদী নুসরাতের পরিবার) যেন দ্রুত ঢাকায় আসেন।

এজাহারে আরও বলা হয়, নুসরাত তাঁর আত্মীয়স্বজন নিয়ে বেলা দুইটার দিকে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় রওনা দেন। আসার পথে বারবার মোসারাতের ফোনে ফোন করেন, কিন্তু তিনি আর ফোন ধরেননি। গুলশানের বাসায় পৌঁছে দরজায় নক করলে ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে নিচে নেমে আসেন। তাঁরা নিরাপত্তারক্ষীর কক্ষ থেকে বাসার ইন্টারকমে ফোন করেন। পরে ফ্ল্যাটের মালিকের নম্বরে ফোন দিলে মিস্ত্রি এনে তালা ভেঙে ঘরে ঢোকার পরামর্শ দেন। মিস্ত্রি ডেকে তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকার পর তিনি দেখেন, তাঁর বোন ওড়না পেঁচিয়ে শোয়ার ঘরের সিলিংয়ে ঝুলে আছেন।

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, পুলিশ এসে ওড়না কেটে মোসারাতের মৃতদেহ নামায়। আলামত হিসেবে আসামির সঙ্গে ছবি, আসামির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে লেখা ডায়েরি ও তাঁর ব্যবহৃত দুটি মুঠোফোন নিয়ে যায় পুলিশ।

পুলিশ সূত্র বলছে, আসামির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্ররোচনায় ২৬ এপ্রিল বেলা ১১টা থেকে বিকেল সোয়া ৪টার মধ্যে যেকোনো সময় মোসারাত মারা যান।

বাদী নুসরাত মামলার আসামির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034470558166504