শিক্ষকরাই শিক্ষা পুনরুদ্ধারের কেন্দ্রবিন্দুতে - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষকরাই শিক্ষা পুনরুদ্ধারের কেন্দ্রবিন্দুতে

মো. সিদ্দিকুর রহমান |

‘শিক্ষকেরাই শিক্ষা পুনরুদ্ধারের কেন্দ্রবিন্দুতে’ এ প্রতিপাদ্য নিয়ে পালিত হচ্ছে ২০২২ এর বিশ্ব শিক্ষক দিবস। বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিঘেরা শৈশবের জি টি সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দিবসটি পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আলোচনা সভা, গুণী ব্যক্তি ও বিশেষ প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা প্রদানের মাধ্যমে শুরু করে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে পুষ্পার্পণ ও জিয়ারতের মাধ্যমে সমাপ্ত হবে দিবসের কর্মসূচি।

শিক্ষকেরা জাতি গড়ার কারিগর। একমাত্র শিক্ষকেরাই পারেন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলার লক্ষ্যে আগামী প্রজন্মকে আলোকিত করতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর মতো তিনিও সকল বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছেন। পদ্মা সেতুর মতো তিনি বিশ্বকে হতবাক করার আরেকটি উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে চলেছেন। তা হলো প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি ও মাদরাসা শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ। এ ছাড়া শিক্ষাব্যবস্থাকে উন্নত দেশের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় নতুন শিক্ষাক্রমের ভাবনা। শিক্ষাব্যবস্থায় অসংখ্য কার্যক্রমে বর্তমান সরকার দেশ-বিদেশে শিক্ষাবান্ধব সরকার নামে খ্যাত। এ সত্ত্বেও জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিক্ষার প্রতি অসংখ্য উদ্যোগের পরও প্রাথমিক শিক্ষা কাক্সিক্ষত সফলতা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে। যার অন্যতম চ্যালেঞ্জ প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসন অভিজ্ঞতাবিহীন সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম-সচিব, উপসচিব, মহাপরিচালক, পরিচালকবৃন্দ সকলে অন্য মন্ত্রণাালয়ের ক্যাডার সার্ভিস থেকে এ মন্ত্রণালয়ে কর্মরত। স্বাভাবিকভাবে তাঁদের এ মন্ত্রণালয়ের সার্বিক দিক সম্পর্কে পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকার কথা নয়।

অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ জনবল ছাড়া প্রাথমিক শিক্ষা যেভাবে এগিয়ে যাওয়ার কথা, সেভাবে এগোচ্ছে না। দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতি বন্ধ। প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতির সুযোগ মোটেই নেই। তৃণমূলের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি উপপরিচালক পর্যন্ত। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনবল সকল মন্ত্রণালয়ের চেয়ে সর্বাধিক। প্রাথমিকের ২/৩টা উপজেলার জনবলও অনেক মন্ত্রণালয়ে নেই। তারপরও হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল, মৎস্য, অর্থ, শিক্ষা, স্বরাষ্ট্রসহ সকল মন্ত্রণালয়ে ক্যাডার সার্ভিস আছে। শুধু ক্যাডার সার্ভিসবিহীন চলছে সর্বাধিক জনবল বিশিষ্ট মন্ত্রণালয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা। শিশুশিক্ষাকে অধিকতর আকর্ষণীয় ও সফল করার জন্য দরকার প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস। ক্যাডার সার্ভিস না থাকায় অনেক মেধাবী ও চৌকস ছেলে-মেয়েরা এ পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। অনেকে শিক্ষকতা বা শিক্ষা প্রশাসন ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যায়। এজন্য প্রয়োজন প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস সৃষ্টি করে সহকারী শিক্ষক পদকে এন্ট্রি ধরে শতভাগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে পর্যন্ত পদোন্নতির সুযোগ। অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে এক নবজাগরণ সৃষ্টি হবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়ই শিশুদের লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা ও বিনোদনের সুযোগ নিশ্চিত করার কথা বলে থাকেন, যা শিশু মনোবিজ্ঞানসম্মত। এতে শিশুর মেধা, শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটে। অথচ অভিজ্ঞতাবিহীন কর্মকর্তাদের দখলে শিশুশিক্ষা ন্যস্ত থাকায় তাদের খেলাধুলা বিনোদনের বিষয়টি তাদের উপলব্ধিতে আসে না। কারণ তাদের নেই তেমন শিশু মনোবিজ্ঞান সর্ম্পকে ধারণা। নেই শিশুর পাঠ উন্নয়নের অভিজ্ঞতা।

শিশুদের খেলাধুলা ও বিনোদন নিশ্চিত করতে হলে প্রাথমিকের শ্রেণি কার্যক্রম দুপুর ২টার মধ্যে শেষ করা প্রয়োজন। যাতে শিশু বাড়িতে গরম খাবার খেয়ে বিশ্রাম বা ঘুমিয়ে বিকাল ৪টায় খেলাধুলা বা বিনোদনের সুযোগ পায়। বিশ্রামের পর খেলাধুলা করে সজীবতা ও নবপ্রেরণা লাভ করে থাকে। এতে সুস্থ মস্তিকে লেখাপড়ায় মন বসবে। শিশুদের বিদ্যালয়ের সময় ৩০/৪০/৫০ মিনিটের পরিবর্তে ১ ঘণ্টা করা প্রয়োজন, যাতে শিক্ষক শিশুদের পাঠের বিষয়বস্তু ভালোভাবে ধারণা দিতে পারে। রাতে তাদের পাঠের জন্য বেশি সময় ব্যয় হওয়ার কথা নয়। বিদ্যালয়ের ৭ পিরিয়ডের পরিবর্তে দৈনিক ৩/৪ পিরিয়ডের বেশি হওয়া কাম্য নয়। প্রাথমিক শিক্ষার পুনরুদ্ধারের কেন্দ্রবিন্দুতে আনতে হলে শিক্ষকের সুযোগ সুবিধা মর্যাদা প্রদান করতে হবে। বছরের পর বছর সমস্যাগুলো ঝুলিয়ে রাখলে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে পড়বে। স্বাধীনতার পর থেকে প্রাথমিক শিক্ষা ক্যাডারবিহীনভাবে চলে আসছে। এতে বর্তমানে বঙ্গবন্ধু ও জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক শিক্ষা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। অভিজ্ঞতাবিহীন কর্মকর্তা স্বল্পসময়ের জন্য আসা যাওয়ার মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা হোঁচট খাচ্ছে। এ অবস্থার পরিবর্তন আশু প্রয়োজন। প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস সৃষ্টির মাধ্যমে অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ কাক্সিক্ষত প্রাথমিক আলোর মুখ দেখবে।

আগামী প্রজন্ম সুশিক্ষিত জাতি হিসাবে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। এ উপলব্ধি সকলের মাঝে জাগ্রত হওয়া প্রয়োজন। শিক্ষকদের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানিয়ে বিশ্ব শিক্ষক দিবসের সফলতা কামনা করছি। 

লেখক : সভাপতি, মো. সিদ্দিকুর রহমান বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ ও সম্পাদকীয় উপদেষ্টা দৈনিক শিক্ষা ডট কম

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0069079399108887