দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকের জন্য অধ্যাপক গোলাম মুরশিদের মনোনয়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের পৌত্রী খিলখিল কাজী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা চিঠিতে খিলখিল কাজী অভিযোগ করেছেন, গোলাম মুরশিদ তার রচিত 'বিদ্রোহী রণক্লান্ত :নজরুল জীবনী' শীর্ষক গ্রন্থসহ অন্যান্য লেখা ও অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সময় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে চরমভাবে অপমানিত করেছেন, ভুল তথ্য উপস্থাপন করে জাতীয় কবিকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছেন। তাকে একুশে পদকের জন্য মনোনয়নের খবরে নজরুল পরিবার বিস্মিত ও অত্যন্ত দুঃখিত। চিঠিতে প্রয়োজনে তদন্ত করে হলেও একুশে পদকের তালিকা থেকে গোলাম মুরশিদের নাম বাদ দেওয়ার জন্য নজরুল পরিবারের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়। গত ৯ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই চিঠি পাঠান খিলখিল কাজী। চিঠির অনুলিপি সম্প্রতি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমি ও নজরুল ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় চলতি বছরের একুশে পদকের জন্য মনোনীত ব্যক্তিদের তালিকা ঘোষণা করে। এতে ভাষা ও সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য গোলাম মুরশিদকে মনোনীত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ বলেন, 'এমন কোনো চিঠি এখনও আমার নজরে আসেনি। তবে জাতীয় কবির মর্যাদার প্রশ্ন জড়িত আছে, এমন কিছু থাকলে অবশ্যই খোঁজখবর করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন বলেন, 'চিঠিটি হাতে পেয়েছি। এটি ইনস্টিটিউটের বোর্ডসভায় উপস্থাপন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।'
অভিযোগের বিষয়ে খিলখিল কাজী বলেন, 'এটি আমার ও নজরুলপ্রেমীদের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ। গোলাম মুরশিদ বিভিন্ন সময় তার লেখায় এবং প্রকাশ্যে অনুষ্ঠানে জাতীয় কবি সম্পর্কে বিদ্বেষমূলক কথা বলছেন। কবির মৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনায় অংশ নিয়েও জাতীয় কবি, তার স্ত্রী, মেয়েসহ পরিবার সম্পর্কে আপত্তিকর কথা বলেছেন। অথচ এসব বিষয়ে তার লেখার কোথাও 'ফুটনোট' ব্যবহার করা হয়নি। বরং জাতীয় কবিকে তিনি কবি হিসেবেই মানতে চান না। এসব কারণে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে একুশে পদকের তালিকা থেকে গোলাম মুরশিদকে বাদ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছি।' তিনি বলেন, 'গোলাম মুরশিদকে একুশে পদক দেওয়া হলে যারা এ পদক পেয়েছেন বা ভবিষ্যতেও পাবেন, তা সবার জন্যই লজ্জাজনক হবে।'
গোলাম মুরশিদের কর্মজীবনের শুরু বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক এবং পরে ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশনের (বিবিসি) সংবাদ পাঠক এবং উপস্থাপক হিসেবে কাজ করতেন। তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব অরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ এবং মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও গবেষণাকর্মে যুক্ত ছিলেন।
জাতীয় কবিকে 'অপমান ও কটূক্তি'র অভিযোগ প্রসঙ্গে লন্ডন-প্রবাসী গোলাম মুরশিদ বলেন, 'কাজী নজরুল ইসলাম আমারও প্রিয় কবি। 'বিদ্রোহী রণক্লান্ত :নজরুল জীবনী' আমার গবেষণাপ্রসূত ও তথ্যসমৃদ্ধ গ্রন্থ। নজরুলের কবিতা ও গানের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে সেখানে আলোচনা হয়েছে। তার প্রতি অশ্রদ্ধা কোথাও গ্রন্থে প্রকাশ পায়নি; বরং তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ পেয়েছে।' তার মতে, 'জাতীয় কবি বা মুসলমান কবি হিসেবে নয়; বরং তাকে এসবের ঊর্ধ্বে অর্থাৎ একজন অসাম্প্রদায়িক, অত্যন্ত প্রতিভাবান এবং সংকীর্ণতামুক্ত ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।'