নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে আওয়ামী লীগের দু'পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে বসুরহাটের মেয়র কাদের মির্জার প্রতিপক্ষ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আজম পাশা চৌধুরী রুমেলদের বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত একটি নূরানি মাদরাসা বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, গতকাল রোববার সকালে বসুরহাট পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কামাল পাশা চৌধুরী তা'লিমুল কোরআন মাদরাসাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ।
মাদরাসার পরিচালক মোছলে উদ্দিন সুমন জানান, গতকাল সকালে শিক্ষার্থীরা মাদরাসায় আসার পথে সোহেল চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি তাদের হুমকি-ধমকি দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। তিনি আরও জানান, শিক্ষার্থীদের তাড়িয়ে দিয়ে সোহেল চৌধুরী এসে শিক্ষকদের মাদরাসা থেকে চলে যেতে বলেন। না হলে অসুবিধা হবে বলে হুমকি দেন। এ সময় তিনি শিক্ষকদের গালাগালিও করেন। পরে ভয়ে শিক্ষকরা চলে যান।
মোছলে উদ্দিন বলেন, 'আমি মাদরাসায় ছিলাম। আমাকে বলে আপনিও চলে যান, অসুবিধা হতে পারে। আপনার ভালোর জন্য বলছি, এখানে সমস্যা হবে। পরে আমিও মাদরাসা বন্ধ করে চলে আসি। এরপর দুপুরে মাদরাসার নামফলকে কাদা লেপে দেন সোহেল চৌধুরী।'
মাদরাসা পরিচালনা কমিটির উপদেষ্টা ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আজম পাশা চৌধুরী রুমেল অভিযোগ করেন, শত্রুতার জেরে কাদের মির্জার অনুসারী সোহেল চৌধুরী ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা ছাত্রছাত্রীদের হুমকি-ধমকি দিয়ে মাদরাসায় আসতে দেননি। বিষয়টি তাৎক্ষণিক পুলিশকে জানিয়েও কোনো প্রতিকার না পেয়ে মাদরাসা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন শিক্ষকরা।
অভিযোগ অস্বীকার করে সোহেল চৌধুরী বলেন, গতকাল আমার ভাইয়ের মাথা ফাটিয়ে দিয়ে ভয়ে তারা মাদরাসা বন্ধ রেখেছে। মাদরাসা বন্ধ রেখে আমাদের উল্টো ফাঁসানোর পাঁয়তারা করছে। মাদরাসা সুপারের অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। তা ছাড়া আজম পাশা চৌধুরীর বাবা অন্যের জমি দখল করে মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। জমির বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই।
এ বিষয়ে আবদুল কাদের মির্জা বলেন, বিষয়টি তিনি জানেন না। সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানলেন। এ বিষয়ে খোঁজখবর নেবেন। তিনি বলেন, মাদরাসা বন্ধ করে দেওয়ার মতো প্রভাব সোহেল চৌধুরীর নেই।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি সাইফুদ্দিন আনোয়ার জানান, খবর পেয়ে পুলিশ মাদরাসায় গিয়েছিল। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে বোমা হামলা-ভাঙচুর, কাউন্সিলরের ওপর হামলা, বাস কাউন্টারে অগ্নিসংযোগ :বসুরহাট পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম শিমুল চৌধুরীর ওপর শনিবার রাতে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিমুল চৌধুরী বসুরহাটের মেয়র কাদের মির্জার অনুসারী।
কাদের মির্জার একান্ত সহকারী ও পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হামিদ উল্যাহ বলেন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আজম পাশা চৌধুরী রুমেলের নেতৃত্বে ৩০-৪০ জনের একদল সন্ত্রাসী এ হামলা চালিয়েছে। শিমুল চৌধুরীর অবস্থা সংকটাপন্ন। তাকে মাইজদীর ফাহিম ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।
তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে রুমেল চৌধুরী বলেন, 'আমি এলাকায় ছিলাম না। কেউ হামলার প্রমাণ দিতে পারলে শাস্তি মাথা পেতে নেব।'
এদিকে, হামলার পর রাত ১০টার দিকে বসুরহাট নতুন বাসস্ট্যান্ডে ড্রিমলাইন বাস কাউন্টারে অগ্নিসংযোগ করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বসুরহাট বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম সওদাগর অভিযোগ করেন, কাদের মির্জার অনুসারী ইকবাল হোসেন স্বপনের নেতৃত্বে ১৫ জনের একদল সন্ত্রাসী দুটি বোতলে পেট্রোল ভরে কাউন্টার ছুড়ে মারে। সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে যায়। খবর পেয়ে ফায়ারা সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নেভান।
অন্যদিকে, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খানের গ্রামের বাড়িতে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনিও মেয়র কাদের মির্জার প্রতিপক্ষ। শনিবার রাত সাড়ে ১০টায় খিজির হায়াত খানের উপজেলার চরকাঁকড়া ইউনিয়নের গ্রামের বাড়িতে হামলার হয়।
খিজির হায়াত খান বলেন, কাদের মির্জার অনুসারী ২০-৩০ জনের একদল সন্ত্রাসী আমার বাড়িতে বোমা মেরেছে, এলোপাতাড়ি গুলি করেছে, আমার ঘর ভাঙচুর করেছে।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি সাইফুদ্দিন আনোয়ার জানান, শিমুল চৌধুরীর ওপরে হামলার ব্যাপারে থানায় কেউ অভিযোগ করেনি। খিজির হায়াত খানের বাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনায় সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।