কিন্ডারগার্টেনে দুরবস্থা : আসছে না শিক্ষার্থী অভাব শিক্ষকেরও - দৈনিকশিক্ষা

কিন্ডারগার্টেনে দুরবস্থা : আসছে না শিক্ষার্থী অভাব শিক্ষকেরও

দৈনিক শিক্ষা ডেস্ক |

দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পর গত রবিবার প্রথম শ্রেণি থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া হয়েছে। এরপর ক্রমান্বয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি বাড়লেও কিন্ডারগার্টেনে আসছে না শিক্ষার্থী। এমনকি শিক্ষকও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর গত পাঁচ দিনে কোনো শিক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এমন তথ্য কেন্দ্রীয় পর্যায়ে আসেনি।

স্কুল খোলার আগেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে—প্রতিদিন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির তথ্য, কোনো শিক্ষার্থী অসুস্থ হলো কি না, করোনায় আক্রান্ত হলো কি না, কোনো ধরনের সমস্যা আছে কি না ইত্যাদি তথ্য অবশ্যই জানাতে হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতিদিন তাদের তথ্য উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠাতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ের স্কুলগুলোও উপজেলা ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে তথ্য পাঠাচ্ছে। শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।।  প্রতিবেদনটি লিখেছেন শরীফুল আলম সুমন।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায় গত রোববার মাউশি অধিদপ্তর থেকে জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়, করোনা সংক্রমণ কমে এলেও তা সম্পূর্ণ নির্মূল হয়নি। এ অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর করোনার কারণে কোনো প্রকার সমস্যা হলে তা দৈনিক ভিত্তিতে জানা এবং তাত্ক্ষণিক সমস্যা সমাধানে একটি মনিটরিং ছক প্রণয়ন করা হয়েছে।

নির্দেশনায় আরো বলা হয়, প্রতিদিন বিকেল ৪টার মধ্যে সব আঞ্চলিক পরিচালক, আঞ্চলিক উপপরিচালক (মাধ্যমিক) ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের তাঁদের আওতায় থাকা স্কুল-কলেজ মনিটরিং করে কোনো সমস্যা চিহ্নিত হলে তার তথ্য মাউশির ‘মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন উইং’য়ে পাঠাতে হবে।

মাউশি অধিদপ্তরের মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন উইংয়ের পরিচালক প্রফেসর মো. আমির হোসেন  বলেন, ‘আমাদের কাছে প্রতিদিন সব ধরনের তথ্য আসছে। রাজধানীসহ বড় শহরগুলোয় শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার বেশি, মফস্বলে কিছুটা কম। গড়ে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত হচ্ছে। আর এ পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কোনো তথ্য আমাদের কাছে আসেনি। তবে প্রতিদিনই কিছু শিক্ষার্থী  অন্যভাবে অসুস্থ হচ্ছে। যেমন সামান্য জ্বর বা ঠাণ্ডা-কাশি। এ ধরনের কোনো শিক্ষার্থী চিহ্নিত হওয়ামাত্র তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই সংখ্যা প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০-এর মধ্যে।’

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহাম্মদ মনসুরুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রতিদিন শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার বাড়ছে। শুরুতে কিছুটা কম থাকলেও এখন এই সংখ্যা প্রায় ৮০ শতাংশ। আর সব স্কুল প্রতিদিন আমাদের রিপোর্ট পাঠাচ্ছে।’

প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার আশাব্যঞ্জক হলেও হতাশ করছে কিন্ডারগার্টেন। করোনা প্রাদুর্ভাবের আগে দেশের ৬০ হাজার কিন্ডারগার্টেনে প্রায় ৮০ লাখ শিক্ষার্থী পড়ালেখা করলেও বর্তমানে তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্ডারগার্টেনের বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে, তাদের স্কুলগুলোয় উপস্থিতির হার মাত্র ৩০ শতাংশ। 

বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান এম ইকবাল বাহার চৌধুরী  বলেন, ‘আমাদের স্কুলগুলোয় শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার খুবই কম। পুরো দেশ থেকে যে তথ্য আসছে, তাতে এই হার ৩০ শতাংশের কাছাকাছি। একটু বয়সী মেয়ে শিক্ষার্থী যারা ছিল তাদের অনেকের বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলেদের কেউ কেউ বিচিত্র কাজে যুক্ত হয়ে গেছে। অনেকে গ্রামে চলে গেছে। আবার কোনো কোনো অভিভাবক এই বছরের বাকি চার মাস তাদের সন্তানকে আর স্কুলে পাঠাতে আগ্রহী নন। ফলে আগামী বছর ছাড়া কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোয় শিক্ষার্থী পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। এ জন্য অনেক স্কুল এখনো খুলছে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা প্রচণ্ডভাবে শিক্ষক সংকটে ভুগছি। আমার প্রতিষ্ঠানের আগের অনেক শিক্ষক আর ফেরেননি। এখন আমার ২০ জন শিক্ষক দরকার। বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। কিন্তু লোক পাচ্ছি না। শিক্ষকদের অনেকে ভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়েছেন। তাঁরা আর এই পেশায় ফিরতে রাজি হচ্ছেন না।’

মাউশি অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গত রবিবার স্কুল খোলার প্রথম দিন ১৪ হাজার ৮১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য পাঠানো হয়। দ্বিতীয় দিন পাঠানো হয় ১৮ হাজার ৪০৮টি স্কুল-কলেজ থেকে। আর গত মঙ্গলবার ১৯ হাজার ১৭৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য পাওয়া গেছে। ওই দিন উপস্থিত ছিল ৪৪ লাখ ৬৮ হাজার ৫৮২ জন শিক্ষার্থী।

এদিকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে গত সোমবার ৭৩.৩১ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত ছিল। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৭০.২৭, ময়মনসিংহ বিভাগে ৬৪.৫১, চট্টগ্রাম বিভাগে ৭১.৩৫, খুলনা বিভাগে ৮১.৪৬, সিলেট বিভাগে ৬৮.৩৯, বরিশাল বিভাগে ৭৬.২৯, রাজশাহী বিভাগে ৭৬.৫৩ এবং রংপুর বিভাগে ৭৬.১১ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত হয়। গত মঙ্গলবার এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৮০ শতাংশের কাছাকাছি।

অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032730102539062