সম্প্রতি সনদ জালিয়াতির অভিযোগ এনে দেশের পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি গ্রহণ করবে না বলে যুক্তরাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা দিয়েছে বলে জানায় কয়েকটি গণমাধ্যম। এ তালিকায় থাকা ২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের সাথে 'কুমিল্লা' থাকায় বিতর্কের মুখে পড়ে দেশের ২৬তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে সনদ যাচাই পদ্ধতি ও শিক্ষার্থীদের তথ্য অনলাইন ডাটাবেইজে সংরক্ষণ করার দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, নামের মিল থাকায় নামসর্বস্ব একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের কারণে সনদ যাচাই করতে গিয়ে উচ্চশিক্ষাসহ বিভিন্ন চাকরির বোর্ডে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশ এবং বিদেশের বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট সনদ যাচাই, 'গ্রাজুয়েট সার্চ ফ্যাসিলিটি' এবং স্টুডেন্ট ডাটাবেইজ সুবিধা দিয়ে থাকে ৷ সেখানে ইউনিক স্টুডেন্ট নম্বরসহ প্রয়োজনীয় ইনফরমেশন দিলে সনদটি কিংবা শিক্ষার্থী ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কিনা তা জানা যায়। বাংলাদেশের বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনে সনদ ও স্টুডেন্ট ভেরিফিকেশন করা যায়। তাছাড়া কানাডার ইউনিভার্সিটি অব টরেন্টো, অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্নসহ বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে সনদ ভেরিফিকেশন এবং প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রদের আইডেন্টিটি ভ্যারিফাই করা যায়। আবার কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে সরাসরি ইমেইলের মাধ্যমে আবেদন করা যায় সনদ ভেরিফিকেশনের জন্য। কিন্তু কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এ ধরনের কোন সুযোগ রাখা হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী সেলিম রেজা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, দেশের শিক্ষা বোর্ডগুলো যদি কোটি কোটি শিক্ষার্থীর তথ্য অনলাইন সার্ভারে রাখতে পারে তাহলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পারবেনা কেনো? কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ যাচাই করার আগে কোনভাবেই নিশ্চিত হওয়া যাবেনা এটি সঠিক নাকি ভুয়া।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও ইউনিক সনদ দেয়া দরকার এবং তা অনলাইনে ভেরিফাই করার সুযোগ রাখা দরকার। এতে করে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে সনদ জালিয়াতি বন্ধ হবে। কোন বিড়ম্বনা ছাড়াই সনদ যাচাই করাও সম্ভব হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহাদী হাসান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বাংলাদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই তাদের ওয়েবসাইটে সার্টিফিকেট ভেরিফিকেশন অপশনটি রেখেছে। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। যে কোন এমপ্লয়ার চাইলেই দেখে নিতে পারেন আবেদনকারীর সনদ বৈধ কিনা। কারণ কেউ কেউ ফেইক সনদ তৈরি করে যাচ্ছেন পছন্দমত বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে। এই ফেইক সনদ দিয়ে সফলও হচ্ছেন। এতে করে আসল আর নকলের বেড়াজালে পড়ে বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় কোন কোন আসল সার্টিফিকেট অর্জনকারীদের। প্রতিষ্ঠানের সুনামেও আসে অপ্রত্যাশিত আঘাত।
তিনি আরও বলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অনলাইনে সনদ যাচাই করার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু সাম্প্রতিককালে কুবি অহেতুক বিড়ম্বনায় পড়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় জন্মতারিখ ও সনদে দেয়া ইউনিক নম্বরের মাধ্যমে তাদের ওয়েবসাইটের সার্টিফিকেট ভেরিফিকেশন অপশনে ভেরিফাই করার সুযোগ রেখেছে। কোন কোন প্রতিষ্ঠান ব্লকচেইন ডাটা স্ট্রাকচারের মাধ্যমে সব সনদের তথ্য সংরক্ষণ করে থাকে। পরে এমপ্লয়ার চাইলেই খুব সহজে এখান থেকে ভেরিফাই করে নিতে পারেন। এতে এমপ্লয়ারদের সময় বাঁচে। দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এছাড়া দেশের বাইরে যারা এপ্লাই করেন, তাদের জন্য বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও বর্তমানে বিভাগটির সহকারী অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের অনলাইন ডাটাবেইজ থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যারা উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে ইচ্ছুক তাদের সার্টিফিকেট ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। যদি কোন বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে সার্টিফিকেট যাচাই করার সুযোগ না থাকে তাহলে সেটি ম্যানুয়ালি ভেরিফিকেশন করতে হয়। অনলাইনে সার্টিফিকেট ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে সার্টিফিকেট জালিয়াতি বা বিশ্ববিদ্যালয়ের অথেন্টিসিটি যাচাই করা খুবই সহজ হয়। যেখানে আমাদের দেশে পিইসিই, জেএসসি, মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির অনলাইনে রেজাল্ট ভেরিফিকেশন করার সুযোগ আছে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অনলাইনে সার্টিফিকেট-রেজাল্ট ভেরিফিকেশন করার সুযোগ না থাকাটা খুবই দুঃখজনক।
তিনি আরও বলেন, প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীর একটি অমূল্য অর্জন হচ্ছে তার সার্টিফিকেট। ঠিক তেমনি ভাবে কিছু অসাধু মানুষ সার্টিফিকেট জালিয়াতির মাধ্যমে আমাদের দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কলুষিত করছে। এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য অনলাইন সার্টিফিকেট ভেরিফিকেশন সিস্টেমের কোন বিকল্প নেই। আমি আশা করবো খুব অল্প সময়ের মধ্যে অনলাইন সার্টিফিকেট ভেরিফিকেশন সিস্টেম আমাদের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হবে।
কুবির ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাস্যুরেন্স সেলের (আইকিউএসি) পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. রশিদুল ইসলাম শেখ বলেন, এটি যদি করা যায় তাহলে বিষয়টি আরও ট্রান্সপারেন্ট হবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে কিছু সমস্যা আছে। ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্টের কাজ চলছে। জুনের মধ্যে ওয়েবসাইট ডেভেলপ হয়ে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা দপ্তরে ইআরপি সফটওয়্যারও ডেভেলপ করার কাজ চলছে। যেহেতু আমরা অটোমেশনের দিকে যাচ্ছি আশাকরি এ বিষয়গুলো কর্তৃপক্ষ ওয়েবসাইটে ইনক্লুড করবেন।
তবে, উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আব্দুল মঈন অনলাইনে সার্টিফিকেট ভেরিফিকেশনের ব্যাপারটি মানতে নারাজ। তিনি বলেন, কোন ইউনিভার্সিটিতে সনদ অনলাইনে ভেরিফিকেশন করতে পারবেনা। এটা তো গোপন ব্যাপার। আমার সার্টিফিকেট ত কেউ দেখতে পারার কথা না। কোন ইউনিক নাম্বার দিয়েও তো দেখতে পারার কথা না৷
ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে সার্টিফিকেট ভেরিফিকেশন সময় সাপেক্ষ ব্যাপার কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, আগে এটি সময়সাপেক্ষ ছিল। এখন ইমেইলের মাধ্যমে সনদ ভেরিফিকেশন করে পাঠিয়ে দেয়া যায়। সনদ ভেরিফিকেশনের জন্য কেউ আমাদের ইমেইল করলে আমরা ভেরিফিকেশন করে পাঠিয়ে দেবো।