কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের মূল ক্যাম্পাস নির্মাণে দুর্নীতি, তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি - দৈনিকশিক্ষা

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের মূল ক্যাম্পাস নির্মাণে দুর্নীতি, তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি |

প্রতিষ্ঠার ৯ বছর পরও অস্থায়ী ক্যাম্পাসেই চলছে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের পাঠদান ও কার্যক্রম। এছাড়া পূর্ণাঙ্গভাবে মেডিকেল কলেজটি চালু না হওয়ায় মানুষ উন্নত চিকিত্সা ও স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এদিকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতিসহ অনিয়ম খতিয়ে দেখতে ফের সরেজমিন তদন্তে এসেছে সরকারের উচ্চপর্যায়ের তদন্ত টিম। গত ১৭ জানুয়ারি তদন্ত টিম কুষ্টিয়ায় এসে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে। এছাড়া প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তলব করে প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণ জানতে চায় তদন্ত টিম।

অনিয়ম-দুর্নীতি ও গাফিলতির কারণে প্রকল্পটি গত আট বছরে এগিয়েছে মাত্র ৫৫ শতাংশ। আবারও প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বৃদ্ধিসংক্রান্ত ফাইল সম্প্রতি একনেকে উপস্থাপন করা হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি এ ব্যাপারে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রকল্পভুক্ত অবকাঠামো নির্মাণে দীর্ঘসূত্রতায় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজটি অস্থায়ী ক্যাম্পাস থেকে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের উদ্যোগ বারবার হোঁচট খাচ্ছে। ২০১২ সালে গৃহীত প্রকল্পটি ২০১৪ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। মূল ক্যাম্পাসে ১০তলা ফাউন্ডেশনের ৫০০ শয্যার হাসপাতাল চালুসহ একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম ঝুলে আছে। ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর কুষ্টিয়া সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী মহাসড়কসংলগ্ন ২০ একর জায়গার ওপর কুষ্টিয়া সরকারি মেডিকেল কলেজের অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনকালে প্রকল্পের মূল্য ধরা হয়েছিল ২৭৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। পরে প্রথম দফা সংশোধিত ডিপিপি ৬১১ কোটি ৮ লাখ ৪৬ হাজার টাকা প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। এছাড়া দুই বার প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির পর ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সর্বশেষ সময়সীমা বাড়িয়েও প্রকল্পটির কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৫৫ শতাংশ। এদিকে গত ৫ জানুয়ারি একেনেক সভায় প্রকল্পটির আবারও ডিপিপি সংশোধনসহ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সময় এবং ৭৪২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা প্রাক্কলন ব্যয়সংক্রান্ত প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফাইল অনুমোদন না দিয়ে ফেরত পাঠান। এছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি, অনিয়ম-দুর্নীতি খতিয়ে দেখে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

মেডিকেল কলেজ প্রকল্পটি সরেজমিন পরিদর্শন করে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আইএমইডির সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের তদন্ত টিম ১৭ জানুয়ারি কুষ্টিয়ায় আসে। টিমের অন্য সদস্যরা হলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ) সাইফুর রহমান, স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালক মতিয়ার রহমান, গণপূর্ত বিভাগের যুগ্ম-সচিব শওকত আলী ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব আব্দুর রউফ।

এর আগে ২০১৬ সালে আইএমইডির অপর এক তদন্ত প্রতিবেদনে প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র উঠে আসে। ফলে প্রকল্পের কাজ প্রায় আড়াই বছর বন্ধ ছিল। দীর্ঘ টানাহ্যাঁচড়া শেষে তদন্ত টিমের আপত্তি প্রতিবেদনসংক্রান্ত জটিলতা কাটলেও ফের অনিয়মের সঙ্গেই গা ভাসিয়ে চলেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের প্রকল্প পরিচালকবৃন্দ, তত্ত্বাবধানকারী প্রতিষ্ঠান কুষ্টিয়া গণপূর্ত বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা।

ত্রুটিজনিত কাজ ও নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারে ২০১৯ সালের ১৬ জানুয়ারি হাসপাতালের ভবনের সামনের গাড়ি বারান্দা ধসে পড়ে নির্মাণশ্রমিক বজলুর রহমান নিহত হন। এ ঘটনায় গণপূর্ত বিভাগের তত্কালীন নির্বাহী প্রকৌশলীসহ তিন প্রকৌশলীকে বরখাস্ত করা হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে শাস্তির আওতায় আনা হয়নি।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ৯ অক্টোবর অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ব্যবস্থপনা জটিলতার মধ্যেই কুষ্টিয়া সরকারি মেডিকেল কলেজের যাত্রা শুরু হয়। প্রথম ব্যাচে ভর্তিকৃত ৫২ শিক্ষার্থীসহ চতুর্থ ব্যাচ পর্যন্ত দুই শতাধিক ছাত্রছাত্রী ইতিমধ্যে অস্থায়ী ভবনের এই প্রতিষ্ঠান থেকে এমবিবিএস পাশ করে বেরিয়ে গেছেন। বর্তমানে পঞ্চম থেকে নবম ব্যাচের ২৮৭ জন ছাত্রছাত্রী মেডিকেল কলেজে পড়ছেন। এ ব্যাপারে জানতে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের প্রকল্প পরিচালক ডা. আমিনুল ইসলামের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়, কিন্তু তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি।

প্রকল্প তত্ত্বাবধানকারী কুষ্টিয়া গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণ অনুসন্ধানে উচ্চপর্যায়ের টিম তদন্ত শুরু করেছে। এ বিষয়ে এখন কোনো মন্তব্য করা সমীচীন নয়।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0064811706542969