শিক্ষার্থীদের কেবল বকাঝকা না দিয়ে মানসিক অবস্থা বুঝে তাদের সামলানোর পাশাপাশি ‘এক গাদা’ পাঠ্যপুস্তকে আটকে না থাকার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল ঘোষণা এবং প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বই বিতরণ অনুষ্ঠানের উদ্বোধনে এ কথা বলেন তিনি।
শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে দেশের শিক্ষক এবং অভিভাবকেদের অনেকেই ‘সচেতন নন’ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে দুই লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অন্তত শিক্ষার্থীদের একটা পরীক্ষা নেওয়া দরকার মানসিক বিশেষজ্ঞদের দিয়ে, যে কার ভেতরে কী ধরনের সমস্যাটা আছে।
তিনি বলেন, শুধু ধমক ধামক দেওয়া না বা তাদের বকাঝকা না, তাদের অবস্থাটা বুঝে তাদের সঙ্গে সেইভাবেই আচরণ করতে হবে। এটা বাবা, মা, শিক্ষক বা বন্ধু-বান্ধব সবাইকেই বিষয়টায় সচেতন হতে হবে।
শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান সরকার প্রধান। তিনি বলেন, পাঠ্যপুস্তকের এক গাদা পথে যে শিক্ষা, সেই শিক্ষা না, শিক্ষাটা পরিবেশ সম্পর্কে, শিক্ষাটা মানসিকতা সম্পর্কে, সকলের সঙ্গে চলার একটা শিক্ষা সবাইকে দিতে হবে। সেইভাবেই সবাইকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমি অনুরোধ জানাচ্ছি।
শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং পুষ্টির বিষয়ে সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী জানান, ছাত্র-ছাত্রীদের সচেতন করে তোলার লক্ষ্যে প্রায় ১ লাখ শিক্ষক ও কর্মকর্তাকে পুষ্টি বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
ছোটবেলা থেকে শিশুদের সব কাজকে সমান সম্মান নিয়ে দেখার শিক্ষা দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে এই বিষয়গুলোতে আরও নজর দেওয়া দরকার বলে মত দেন সরকার প্রধান।
তিনি বলেন, অনেক সময় কৃষকের ছেলে বড় কর্মকর্তা হয়ে যাবার পর বাবার পরিচয় দিতে লজ্জা পায়। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং খুব লজ্জার ব্যাপার। বরং সেই বাবাকে আরো বেশি সম্মান দেওয়া উচিত যে বাবা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সন্তানকে শিক্ষা দিয়ে বড় করেছে। তাকেই সব থেকে সম্মান দেওয়া উচিত বরং তার সাথে মাঠে নেমে মাঠে কাজ করা উচিত।
কৃষকের সেই শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে আরও বেশি ফসল ফলানোর চেষ্টা করা উচিত মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, তাহলে সেটা প্রকৃত শিক্ষা হবে। কিন্তু নিজে দুই পাতা পড়ে একটা ফুল প্যান্ট পড়ার পর আর মাঠে নামতে পারব না, এই মানসিক দৈন্যতাটা বাংলাদেশের মানুষের মাঝে থাকুক, সেটা আমরা চাই না। সেটা আমরা দেখতে চাই না।
তিনি বলেন, এটা একটা মানসিক দৈন্য, এটা মানসিক দারিদ্র্য এবং তা আমার দৃষ্টিতে… এটা যেন না থাকে। সমস্ত কাজকেই সম্মান দিতে হবে।
অন্যদের মধ্যে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।