করোনার দেড় বছরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া হয়েছেন অনেক শিক্ষার্থী। এই শিক্ষার্থীদের বড় অংশ বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছেন। শুধু তাই, ঝরে পড়েছে বহু শিক্ষার্থী। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে ছাত্রীরা বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে বেশি।তবে কতসংখ্যক শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে তার কোনো তথ্য নেই মাঠপর্যায়ে। রাজশাহী উপজেলাগুলো প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যমতে অন্তত ৫ ভাগ শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে।
করোনাকালে রাজশাহীতে বাল্যবিয়ের ঘটনা কম নয়। গত দেড় বছরে এ অঞ্চলে বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে চার শতাধিক ছাত্রী। পড়াশোনার চাপ না থাকায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী অলস সময় কাটাচ্ছিলেন বাড়িতে। তথ্যপ্রযুক্তির বদৌলতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কিশোর-কিশোরীরা প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছে। এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা এবং ভবিষতের কথা ভেবে অল্পশিক্ষিত অভিভাবকরাও বাল্যবিয়ে দিয়েছেন সন্তানদের।
বাঘার পদ্মারচরে চকরাজাপুর ইউনিয়নের চকরাজাপুর ও পলাশি ফতেপুর উচ্চবিদ্যালয়ের অর্ধশত ছাত্রী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। পরিবারের সম্মতি না থাকলেও শিক্ষার্থীদের একটি অংশ নিজেরাই বিয়ের পিঁড়িতে বসেছে। এছাড়া চকরাজাপুর উচ্চবিদ্যালয়ের ৫২২ জনের মধ্যে ৩৮ ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে। অপরদিকে পলাশি ফতেপুর হাইস্কুলে ২৩৫ জনের মধ্যে বিয়ে হয়েছে ১২ ছাত্রীর। এসবই বাল্যবিয়ে।
পলাশি ফতেপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক রোকোনুজ্জামান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, সরকার শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরও গোপনে বাল্যবিয়ে হচ্ছে। এটি রোধ করা যাচ্ছে না। এত সংখ্যক বাল্যবিয়ে সত্যিই উদ্বেগজনক।
চকরাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুল আযম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, এমনিতে পদ্মারচরের মানুষ দরিদ্র। ছেলেমেয়েরা একটু বড় হলেই অভিভাবকরা সন্তানদের বোঝা মনে করেন। বিশেষ করে মেয়েদের। তাই বাল্যবিয়ের প্রবণতা চরাঞ্চলে অনেক বেশি।
এ উপজেলার নিমপাড়া ইউনিয়নের কালুহাটি গ্রামেই বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটেছে ৬টি। এর মধ্যে কালুহাটি উচ্চবিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ ৫ জন এবং নন্দনগাছী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের এক ছাত্রী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে।
কালুহাটি উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তাফা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, গত দেড় বছরে গোপনে অনেক শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটেছে। স্কুলপ্রধানের প্রত্যায়নপত্র ছাড়া বিয়ে রেজিস্ট্রি না করলে এর প্রবণতা রোধ করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
করোনা মহামারিতে এ উপজেলায় সপ্তম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অনেক ছাত্রীর বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে তানোর পৌরসভা উচ্চবিদ্যালয়, চুনিয়াপাড়া একতার আলী উচ্চবিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে।
তানোর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, করোনাকালে কত শতাংশ ছাত্রীর বাল্যবিয়ে হয়েছে সে বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ধারণা করছি অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী এসময় বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে।
এদিকে বাগমারার হামিরকুৎসা ইউনিয়নের কালুপাড়া গ্রামের খয়ের আলীর মেয়ে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। করোনায় পরিবারের আয় কমায় মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন তিনি। পার্শ্ববর্তী রায়াপুর গ্রামের বেশ কয়েকজন ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গেছে। এছাড়া দুর্গাপুর, পুঠিয়াসহ অন্য উপজেলার চিত্রও একই। বাল্যবিয়ের কারণে স্কুলে ফিরতে পারছে না অনেক ছাত্রী।
রাজশাহী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (মাধ্যমিক) নাসির উদ্দিন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অসচেতন অভিভাবকরা অত্যন্ত গোপনে তাদের সন্তানদের বাল্যবিয়ে দিচ্ছেন। করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বাল্যবিয়ে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। আমরা ধারণা করছি, এসময় রাজশাহীতে পাঁচ শতাধিক বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটেছে। এর পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে।
তিনি বলেন, বাল্যবিয়ের সঠিক পরিসংখ্যান জানানোর জন্য আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের চিঠি দিয়েছি। আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যে এটি জানা যাবে।