ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু পরীক্ষা গ্রহণ খুবই জরুরি - দৈনিকশিক্ষা

ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু পরীক্ষা গ্রহণ খুবই জরুরি

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বর্তমানে প্রায় সব কিছুই স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বাভাবিক নিয়মে কার্যক্রম শুরু করছে। কিন্তু সরকার করোনা মহামারির পরিস্থিতি বিবেচনা করে দেশজুড়ে বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত যুক্তিযুক্ত। সামনে যেহেতু শীতকাল, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসতে পারে। অনেকে যদিও মনে করেন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে পারে সরকার। তবে প্রাথমিক বিদ্যালয় না খুলে দেওয়াই ভালো। কারণ ওই সব প্রতিষ্ঠানে ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে পড়াশোনা করে। এ ছাড়া করোনা সংক্রমণ এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তাই কোনো পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলাই ভালো বলে মনে করি। করোনার কারণে এইচএসসি পরীক্ষা আগের মতো নেওয়া সম্ভব হয়নি। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক লেভেলে অ্যাসাইনমেন্ট মূল্যায়নের মাধ্যমে উত্তীর্ণ করা হবে। সিদ্ধান্তগুলো সময় অনুযায়ী যথার্থ বলে মনে করি। তবে করোনার কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় না খোলায় শিক্ষার্থীরা মারাত্মক বিপাকে পড়ছে এবং পরীক্ষা নিয়ে তৈরি হচ্ছে জটিলতা। বুধবার (১১ নভেম্বর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক উপসম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়। 

উপসম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অতীতে কমবেশি সেশনজট ছিল। কিন্তু বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে তা নেই বললেই চলে; এমনকি সেশনজটের দুর্নামে থাকা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও যুগান্তকারী পদক্ষেপের মাধ্যমে সেশনজট দূর করছে। কিন্তু এখন করোনায় উচ্চশিক্ষা আবারও থমকে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা সেশনজটসহ নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা নিয়ে ব্যাপক দুশ্চিন্তায় রয়েছে এবং আমরা যাঁরা শিক্ষক রয়েছি, তাঁদের কল দিয়ে পরীক্ষার বিষয়ে অনুরোধ করে। আমরাও মনে করি পরীক্ষাগুলো অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত। এ ছাড়া এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা না নেওয়া হলে অন্তত এক থেকে দুই বছরের সেশনজটে পড়তে হবে তাদের।

করোনা সংক্রমণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। ওখানে পরীক্ষা আটকে রয়েছে এবং সেখানে শিক্ষার্থীদের মনে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। বর্তমানে দেশে ৪৬টি পাবলিক ও ১০৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থী খারাপ সময় অতিক্রম করছে। উচ্চশিক্ষায় মোট শিক্ষার্থী ৪০ লাখের বেশি। এর মধ্যে পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় সাত লাখ এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বাকি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। সরকারের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইন ক্লাসের কার্যক্রম শুরু হলেও তা বেশি কার্যকর নয়। অনলাইন ক্লাসে মোট শিক্ষার্থীর ৫০-৬০ শতাংশ অংশগ্রহণ করে, বাকিরা বঞ্চিত হয়। কারণ এসব শিক্ষার্থীর আর্থিক ও স্মার্টফোন সমস্যা রয়েছে। এ ছাড়া অনেক এলাকায় ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎ সুবিধা নেই। কার্যত যে পরিস্থিতি চলছে, তাতে মনে হয় এ বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর খোলা হবে না। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরবর্তী সময়ে যখন আবার কার্যক্রম শুরু হবে, তখন জটিলতা ভালোই তৈরি হতে পারে।

করোনার কারণে দেশের পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন কোর্সের শুধু পরীক্ষাই স্থগিত রয়েছে হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীর; এমনকি কিছু শিক্ষার্থীর শেষ সেমিস্টারের একটি কোর্সের পরীক্ষা বাকি রয়েছে। তারা তো চরম ক্ষতিগ্রস্ত। ফলে করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীর এমন ক্ষতি হয়ে গেল তা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে না। তা ছাড়া যেসব শিক্ষার্থীর স্নাতক শেষ বর্ষ এবং স্নাতকোত্তর শেষ সেমিস্টারের কিছু পরীক্ষা বাকি রয়েছে, তাদেরও সমস্যা কম নয়। কারণ করোনা মহামারি না থাকলে তারা এত দিন সনদ বা ডিগ্রি পেয়ে যেত। কারো কারো চাকরি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল; কিন্তু তাদের এখনো পরীক্ষা নেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তাই এখন পরীক্ষা গ্রহণ করা গেলে তাদের ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। আমি মনে করি, যেকোনো পদ্ধতিতে হোক এসব শিক্ষার্থীর পরীক্ষা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ পর্যায়ের পরীক্ষা সম্পন্ন হলে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগসহ অন্যান্য চাকরিতে আবেদন করতে পারবে।

পরীক্ষাগুলোর ১০ দিন আগে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এক সপ্তাহে কোর্সের সিলেবাস কমিয়ে পরীক্ষা গ্রহণ করা যেতে পারে। পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নের জন্য কোনোভাবেই অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো উচিত হবে না। কারণ তাতে ফল প্রকাশ করতে বিলম্ব হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে প্রথম ও দ্বিতীয় পরীক্ষক নিয়োগ দিয়ে তাড়াতাড়ি ফল প্রকাশ করা সম্ভব। কারণ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নের জন্য অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানোর নিয়ম রয়েছে। পরীক্ষাগুলো বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় যেমন—ওপেন বুক এক্সাম, রিপোর্ট প্রস্তুতকরণ এবং অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা যেতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এসব বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়াশোনা করে, তারা অনেক বেশি সচেতন বিধায় অন্য ক্যাম্পাসে পরীক্ষা নিলে করোনার সংক্রমণের তেমন কোনো ঝুঁকি সৃষ্টি হবে না বলে মনে করি। বাকি শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া যাবে না। একমাত্র যাদের টার্মিনাল শিক্ষাবর্ষ বা সেমিস্টারের পরীক্ষা ঝুলে রয়েছে, তাদের ধারাবাহিকভাবে অনুষদ অনুযায়ী বা বিভাগ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের অনুমতি প্রদান করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যদি প্রয়োজন হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা আরো উত্তম হতে পারে।

আমাদের দেশে মার্চ মাস থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা বাড়িতে থাকতে থাকতে অলস ও ধৈর্যহারা হয়ে পড়ছে। তাই সম্পূর্ণভাবে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা না গেলেও কঠোরভাবে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব শিক্ষার্থীর পরীক্ষাগুলো নেওয়া উচিত। আর অন্যান্য ব্যাচের শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে অনলাইন শিক্ষাকে কার্যকরভাবে সক্রিয় রাখতে হবে।

প্রতিবেশী দেশ ভারত করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যেই স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে। কারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে হয়। উল্লেখ্য যে ভারতে করোনা এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এ ছাড়া করোনার উৎপত্তি চীনের উহানে এখন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চালু করেছে ওই দেশের সরকার। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার আগে অবশ্যই স্যানিটাইজ করতে হবে। এর পাশাপাশি পরীক্ষার হলে ঢোকার সময় তাপমাত্রা পরীক্ষা এবং স্যানিটাইজ করতে হবে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের। তার পরও পরীক্ষাগুলো নিতে পারলে ছাত্র-ছাত্রীদের ক্যারিয়ারে ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আমার বিশ্বাস।

সর্বোপরি স্নাতক ও মাস্টার্স শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত বর্ষ বা সেমিস্টারের পরীক্ষা নেওয়া একটি ভালো সমাধান হতে পারে। কারণ আমাদের দীর্ঘদিন ধরে করোনাভাইরাসের মুখোমুখি হতে হয়েছে। অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য পরীক্ষা বন্ধ রাখার পরিবর্তে ধীরে ধীরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের সব প্রতিরোধক স্বাস্থ্য প্রটোকল বজায় রাখতে কভিড-১৯ টেস্ট করে নেগেটিভ রিপোর্ট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ নিশ্চিত করা যেতে পারে।

লেখক : মো. শফিকুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি-শিক্ষক সমিতি, শিক্ষক, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। 

হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037550926208496