খাল সাঁতরে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করে শিক্ষার্থীরা - দৈনিকশিক্ষা

খাল সাঁতরে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করে শিক্ষার্থীরা

পটুয়াখালী প্রতিনিধি |

জান্নাতুল, নাসরিন, কেয়ামনি ও নাজমুলসহ আরও কয়েকজন শিশুশিক্ষার্থী। ওদের গন্তব্য স্কুল। কিন্তু সবার হাতেই একটি করে পাতিল। সেই পাতিলের মধ্যে রয়েছে বইখাতা, কলম আর স্কুলড্রেস। কিছুদূর যেতেই একটি খাল। সেই খালে একে একে পাতিল নিয়ে নেমে পড়ে সবাই। শীতের এ সময় শীতল পানিতে সাঁতার কাটতে থাকে ওরা। মাঝখালে গিয়ে দু-একজন ক্লান্তও হচ্ছিল। দম নিয়ে একপর্যায়ে প্রায় ২৫০ ফুট চওড়া খালটি সাঁতরে পার হয়।

তীরে উঠে রোদে দেয় ভেজা জামাকাপড়। পাতিল থেকে নিয়ে পরে নেয় স্কুলড্রেস। অবশেষে বইখাতা নিয়ে ছোটে স্কুলে। স্থানীয়দের কাছে এ দৃশ্য নতুন কিছু নয়, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর চরমোন্তাজ ইউনিয়নের দিয়ারচর ও উত্তর চরমোন্তাজ গ্রাম দুটির চর থেকে এভাবে খাল সাঁতরে স্কুলে আসা-যাওয়া করে শিশুশিক্ষার্থীরা। এখানে নেই কোনো সেতু। নেই নৌকায় পারাপারের তেমন কোনো ব্যবস্থা। কখনো নৌকা পাওয়া গেলেও আর্থিক অসঙ্গতির কারণে নিয়মিত পার হতে পারে না তারা। তাদের অভিভাবকরা দরিদ্র জেলে বা কৃষক। বিকল্প হাঁটাপথে স্কুলে যেতে ৫ কিলোমিটার ঘুরতে হয়।

চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী কেয়ামনির (৯) বাড়ি দিয়ারচর গ্রামে। পড়ালেখা করে মাঝেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এর মাঝখানে বয়ে যাওয়া বাইলাবুনিয়া নামের এ খাল সাঁতরে যেতে হয় স্কুলে। কেয়ামনি বলে, আমাদের খাল সাঁতরাতে খুব ভয় হয়। দু-এক সময় হাত থেকে পাতিল ছুটে যায়। আমরা অনেক কষ্ট করি। শিশু শ্রেণি থেকে অনেক কষ্ট করছি। এখনো এক বছর কষ্ট করা লাগবে। দু-তিন দিন আগে হাত থেকে পাতিল ছুটে গেছে। আমরা অনেক কান্না করেছি। কেউ ছিল না। পরে আমরাই আস্তে আস্তে কিনারে এসেছি। বইখাতা ভিজে গেছে।

কেয়ামনির মতো ওই স্কুলের তৃতীয় শ্রেণিপড়ুয়া জান্নাতুল, নাসরিন, চতুর্থ শ্রেণির নাজমুলও জানায়, খাল সাঁতরে স্কুলে যেতে ভয় করে ওদের। এই শীতে খাল পার হতে কষ্টও হয়। এসব শিশুশিক্ষার্থীর দাবি-খালটিতে একটি সেতু নির্মাণ করা হোক। স্থানীয়রা জানায়, এ দুই গ্রামে কোনো স্কুল নেই। তাই শিশুরা পার্শ্ববর্তী মাঝেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে। দুই চরের মাঝখানে বাইলাবুনিয়া খাল পেরিয়ে স্কুলে যেতে হয় তাদের। কেউ খাল সাঁতরে পার হয়। কেউ পার হয় নিজস্ব নৌকায়। কোমল হাতে নিজেই নৌকার বৈঠা বেয়ে খাল পার হওয়া দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ইউসুফ বলে, যখন নৌকা পাই, তখন স্কুলে আসি।

স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়, স্থানীয়দের উদ্যোগে কয়েকবার বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু নোনা জলে সাঁকো বেশিদিন টেকে না। ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত এ স্কুলে সাঁকো থাকাকালীন ৩০০-৪০০ শিক্ষার্থী ছিল। এর মধ্যে দুইশর মতো শিক্ষার্থী ছিল ওই দুই চরের। এখন শিক্ষার্থী কমে গেছে। দুই চর থেকে ৫০ জনের মতো শিক্ষার্থী আসে। তাদের অনেকেই নিয়মিত আসেও না।

দিয়ারচর গ্রামের জাকির হাওলাদার বলেন, আমার দুই ছেলে এ স্কুলে পড়ে। সপ্তাহখানেক আগে আমার এক ছেলে খাল পার হতে গিয়ে ডুবে যাচ্ছিল। আমি এসে উঠিয়ে স্কুলে দিয়ে গেছি। এখন অনেক কষ্ট করে দুই ছেলেকে স্কুলে আনা-নেওয়া করতে হয়। এর চেয়ে এখানে একটি স্কুল হলে ভালো হয়। আর তা না হলে এ খালে একটি ব্রিজ হলেও ছেলেমেয়েদের স্কুলে পড়তে দেওয়া যায়।

মাঝেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন বলেন, অনেক অভিভাবকই এ ঝুঁকি নিয়ে ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ে আসতে দেন না। এ খালে একটি সেতু হলে শিশুশিক্ষার্থীরা এ ঝুঁকি থেকে রেহাই পেত। অনেকেই প্রায় পাঁচ কিলোমিটার ঘুরে স্কুলে আসে।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম বলেন, বেশ কিছুদিন আগে সেখানে ব্রিজ নির্মাণের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা দিয়েছি। এ মুহূর্তে জরুরি ভিত্তিতে বিকল্প কী করা যায়-এজন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করব।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ সালেক মূহিদ বলেন, ৭ ডিসেম্বর আমাদের মাসিক মিটিংয়ে এ বিষয়টি উত্থাপন করব। বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য রাজস্ব তহবিল অথবা পিআইও অফিসের প্রকল্পের মাধ্যমে ওখানে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, শিশুরা যাতে সুন্দরভাবে স্কুলে যেতে পারে সেজন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। তাদের পারাপারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0071139335632324