বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে প্রশাসনিক ভবনের সামনে আমরণ অনশনরত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোবারক হোসেন নোমানও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা এদিন সকালে ক্যাম্পাসে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন। বিকেলে দুই শিক্ষার্থী নিজেদের নির্দোষ দাবি করে বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানিয়ে আবারও উপাচার্যের কাছে চিঠি দিয়েছেন।
এদিকে, চাকরিচ্যুত তিন শিক্ষক উচ্চ আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে। শিক্ষার্থী মোবারক হোসেন নোমান সন্ধ্যায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে খুলনা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। অপর ছাত্র ইমামুল ইসলাম সোহান অসুস্থ হয়ে পড়ায় শনিবার রাতে তাকে একই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ইমামুলের প্রতি সংহতি জানিয়ে শনিবার রাত থেকে অনশন শুরু করেছেন তাদের সহপাঠী জুবায়ের হোসাইন।
গতকাল সকাল সাড়ে ১১টায় বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা ক্যাম্পাসে গিয়ে অনশনরতদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন। এ সময় তিন শিক্ষককে চাকরিচ্যুতির সিদ্ধান্ত ও দুই শিক্ষার্থীর বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানান তারা। নেতারা বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক এই কর্মকাণ্ডে তারা বিস্মিত। এটা স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন গণসংহতি আন্দোলন খুলনা জেলা সমন্বয়ক মুনীর চৌধুরী সোহেল, বাসদের জেলা সমন্বয়ক জনার্দন দত্ত নান্টু, সিপিবির জেলা সহসভাপতি শেখ আব্দুল হান্নান, মহানগর সভাপতি এইচএম শাহাদাৎ, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ খুলনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মোস্তফা খালিদ খসরু, বাসদ খুলনা জেলা সদস্য আব্দুল করিম, সনজিত মণ্ডল, আল আমিন শেখ প্রমুখ।
এদিকে, চাকরিচ্যুত হওয়া তিন শিক্ষক উচ্চ আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে বাংলা ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক আবুল ফজলকে শনিবার বরখাস্ত, ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের প্রভাষক হৈমন্তী শুক্লা কাবেরী এবং বাংলা ডিসিপ্লিনের প্রভাষক শাকিলা আলমকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছিল। শাকিলা আলম সাংবাদিকদের বলেছেন, তারা কর্তৃপক্ষের এই অন্যায় সিদ্ধান্ত মানবেন না। তারা শিগগিরই এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে যাবেন। তবে অপর দু'জন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলার জন্য অসংখ্যবার ফোন করা হলেও তারা রিসিভ করেননি।
অন্যদিকে, বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে দুই শিক্ষার্থীর দেওয়া চিঠি প্রসঙ্গে উপাচার্য অধ্যাপক ফায়েক উজ্জামান বলেন, দুই ছাত্রের এবারের চিঠিতে নতুন কিছু নেই। তারা শিক্ষকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের বিষয়ে কোনো দুঃখ প্রকাশ করেনি। ফলে এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে শৃঙ্খলা বোর্ডের সভা ডাকার সুযোগ নেই।
শিক্ষার্থীদের ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ সিটি মেয়রের : দুই শিক্ষার্থীর অনশনের বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছেন খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক। গতকাল রাত সাড়ে ৮টায় পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদ্বয় সিটি মেয়রের মাধ্যমে উপাচার্য বরাবর একটি আবেদন জমা দিলেও তারা দুঃখ প্রকাশ বা ক্ষমা প্রার্থনা করেনি, যা ছিল অপ্রত্যাশিত। শিক্ষার্থীদের মনোভাব এবং তাদের আচরণে তিনি হতাশ। এমন পরিস্থিতিতে প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা ও নিয়ম-কানুন প্রতিপালনের স্বার্থে শিক্ষকদের প্রতি নমনীয় হয়ে দুঃখ প্রকাশ বা ক্ষমা প্রার্থনা করে পুনরায় আবেদন করার জন্য সিটি মেয়র অনশনরত দুই শিক্ষার্থীর প্রতি আহ্বান জানান।
ছাত্র ইউনিয়নের বিবৃতি : খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানানোয় তিন শিক্ষককে চাকরিচ্যুতির সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের স্বৈরাচারী মনোভাব আখ্যা দিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন। গতকাল ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল বিবৃতিতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
ইবিতে মানববন্ধন : খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডায়না চত্বরে এ মানববন্ধন হয়। শামিমুল ইসলাম সুমনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য দেন আব্দুর রউফ, রায়হান বাদশা রিপন, জিকে সাদিক, মোস্তাক আহমেদ, এনায়েত কবির প্রমুখ। মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রমৈত্রী ও ছাত্র ইউনিয়ন একাত্মতা প্রকাশ করে।