খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি অনুষদের অধীনে বিভাগ রয়েছে ২৯টি। এর মধ্যে নতুন-পুরোনো মিলে ছয়টি বিভাগ ভুগছে ক্লাসরুম সংকটে। এই বিভাগগুলোতে অনার্স-মাস্টার্স মিলিয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় এক হাজার ৪০০। বিপরীতে ক্লাসরুম আছে মাত্র ১১টি। ফলে বেশিরভাগ সময় অন্য ভবনে গিয়ে ক্লাস করতে হয় এসব বিভাগের শিক্ষার্থীদের। তা করতে গিয়ে ভোগান্তিতেও পড়তে হয়। কারণ অনেক সময় অন্যদের ক্লাস শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তাদের।
ক্লাসরুম সংকটে ভোগা বিভাগগুলো হলো- মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা, আইন, ইতিহাস ও সভ্যতা, সয়েল, ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট, এগ্রোটেকনোলজি এবং পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ।
এর মধ্যে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগে অনার্স-মাস্টার্স মিলিয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২০০। এই বিভাগের নিজস্ব কোনো ক্লাসরুম নেই। নেই কোনো সেমিনার- লাইব্রেরি ও কম্পিউটার ল্যাবও। বিভাগটি ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায় প্রশাসন (বিবিএ) অনুষদের অধীনে। অথচ এই অনুষদেরই আরেকটি বিভাগ ব্যবসায় প্রশাসনের ক্লাসরুম ছয়টি। মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানান, ব্যবসায় প্রশাসন ও পরিসংখ্যান বিভাগের ক্লাসরুম খালি থাকা সাপেক্ষে তারা ক্লাস করে থাকেন। তা ছাড়া কলা ও মানবিক অনুষদের মাল্টিপারপাস রুমকে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শেয়ার করতে হয় তাদের।
বিবিএ অনুষদের ডিন অধ্যাপক এসএম জাহিদুর রহমান বলেন, এখানে সংকট রয়েছে, তবে তা দূর করতে প্রশাসন কিছু অবকাঠামো নির্মাণ করছে।
আইন বিভাগে অনার্সে প্রায় ১৬০ জন শিক্ষার্থীর জন্য ক্লাসরুম দুটি। এ ছাড়া শিক্ষকদের চেম্বার সংকট তো আছেই। বিভাগের শিক্ষার্থী আল মুমিন খান স্নেহ বলেন, 'নিজেদের ভবনে পর্যাপ্ত ক্লাসরুম না থাকায় ৩ নম্বর একাডেমিক ভবনের দুটি রুমে আমরা ব্যবসায় প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সঙ্গে শেয়ার করে ক্লাস করি। কখনও কখনও ক্লাস শেষ না হলেও সময়ের জন্য রুম ছেড়ে বেরিয়ে আসতে হয়।'
তবে আইন বিভাগের নিজস্ব ভবনের সম্প্রসারণ কাজ শেষ হলে সমস্যা কিছুটা দূর হবে বলে জানিয়েছেন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ওয়ালিউল হাসানাত।
ইতিহাস ও সভ্যতা বিভাগের অনার্সে প্রায় ১৬০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে মাত্র দুটি ক্লাসরুম আছে।
বিভাগের ভারপ্রাপ্ত প্রধান সহকারী অধ্যাপক ড. দুলাল হোসেন বলেন, বিভাগে মাস্টার্সসহ পাঁচটি ব্যাচ চালু আছে, সেখানে কোনোভাবেই দুটি ক্লাসরুম যথেষ্ট নয়।
এ ছাড়া জীববিজ্ঞান অনুষদের বিভাগুলোর মধ্যে সয়েল, ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট, এগ্রোটেকনোলজি এবং পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে অনার্স-মাস্টার্স মিলিয়ে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী। অথচ প্রতিটি বিভাগে ক্লাসরুম আছে মাত্র দুটি করে। সংশ্নিষ্টরা বলছে, প্রায় ২১ বছরের অধিক পুরোনো এই বিভাগগুলো অনেকটাই 'অবহেলিত'।
এগ্রোটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী ফারজানা ইসলাম জানান, বিরতির সময় বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। অন্যদের ক্লাস শেষ হওয়া পর্যন্ত বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
সয়েল, ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক সানাউল ইসলাম বলেন, এই বিভাগে চাহিদা অনুযায়ী আনুপাতিক হারে ক্লাসরুম বণ্টন করা হয়নি। সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) ও উপ-উপাচার্য ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা বলেন, সংকট মোকাবিলায় শার্লি ইসলাম লাইব্রেরি ভবন সম্প্রসারণ, ১০ তলা জয় বাংলা একডেমিক ভবন এবং ৭ তলা আইইআর ভবন নির্মাণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।