‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ১৫০ কোটি টাকার বই কেনার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা না থাকার অভিযোগ এনে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ১৫ জন বিশিষ্ট লেখক। বুধবার (২৪ জুন) বিবৃতি প্রদানকারী লেখকদের পক্ষে বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানান।
‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে ১৫০ কোটি টাকার বই কেনার উদ্যোগকে অভিনন্দন জানিয়ে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে এই প্রথম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় এতো বিশাল অংকের বই কেনা হচ্ছে। এ জন্যে প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। তিনি স্বচ্ছতা পছন্দ করেন। তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বই কেনার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, করোনাকালে সৃজনশীল প্রকাশকরা দুরবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। এ সময় বই কেনার সংবাদ লেখক, প্রকাশক সবার জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। কিন্তু হাতে গোনা কয়েকজন লেখক-প্রকাশক এর সুফল ভোগ করবে আর দেশের বৃহৎ সংখ্যক লেখক-প্রকাশক সরকার প্রদত্ত এই সুফল থেকে বঞ্চিত হবেন এই অন্যায় মেনে নেয়া যায় না। এ ধরনের অস্বচ্ছ কাজ সমর্থনযোগ্য নয়। বাংলাদেশের অনেক লেখক বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বই লিখেছেন। বই কেনার আগে সেসব বই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় আনা আবশ্যক।
বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা জানতে পেরেছি বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি থেকে এই বই কেনা প্রক্রিয়া স্থগিত করে সব প্রকাশককে বইয়ের তালিকা জমা দেয়ার সুযোগ দিয়ে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে বই নির্বাচন করে দ্রুত বই কেনার জন্য পত্র দেয়া হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর পাঠানো চিঠির কপি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য পিএস বরাবর মেইল করা হয়েছে। দুই সপ্তাহ অতিক্রান্ত হওয়ার পরও সেই চিঠির কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। পরে সমিতি থেকে মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বরাবর আরও একটি পত্র পাঠানো হয়েছে। এক্ষেত্রে আমরা প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
বিবৃতিতে লেখকরা বলেন, আমরা মনে করি, অন্যান্য মন্ত্রণালয়, বিশেষ করে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের জন্য প্রতি বছর যে পদ্ধতিতে বই কেনা হয় সেই পদ্ধতি অনুসরণ করা হোক। অর্থাৎ সৃজনশীল প্রকাশকদের কাছে উপযুক্ত বইয়ের তালিকা ও নমুনা কপি জমা নেয়া হোক। দেশের বিশিষ্ট লেখক, বুদ্ধিজীবী, প্রকাশক সমিতির প্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সমন্বয়ে বই নির্বাচন কমিটি গঠন করে বইকেনা আবশ্যক। দেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে করোনার দুঃসময়ে কোনো ধরনের অনিয়ম ও অস্বচ্ছতা আমাদের কাম্য নয়।
বিবৃতি দেয়া লেখকরা হলেন- হাসান আজিজুল হক, নির্মলেন্দু গুণ, সেলিনা হোসেন, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ইমদাদুল হক মিলন, মুনতাসীর মামুন, আনিসুল হক, আবুল আহসান চৌধুরী, রামেন্দু মজুমদার, আবুল মোমেন, সুব্রত বড়ুয়া, মোরশেদ শফিউল হাসান, অসীম সাহা, ফরিদুর রেজা সাগর ও আমীরুল ইসলাম। তাদের পক্ষে বিবৃতিটি দিয়েছেন বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ।