গবেষণায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ বাড়াতে হবে - দৈনিকশিক্ষা

গবেষণায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ বাড়াতে হবে

দৈনিক শিক্ষা ডেস্ক |

জুলিয়াস সিজারকে ইতিহাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়। আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ১০০ সালে তার জন্ম। জুলিয়াস ছিলেন রোমের প্রধান সেনাপতি। রোমে তখন গণতন্ত্র বিরাজমান ছিল। জুলিয়াস রাষ্ট্রক্ষমতার জন্য 'বিভাজন ও শাসন' নীতি প্রয়োগ করেন। সফলও হন। ক্রমে রোমকে একনায়ককেন্দ্রিক রাজ্যে পরিণত করেন তিনি। তারপর 'এলাম, দেখলাম, জয় করলাম' দাম্ভিকতা নিয়ে রোমকে শাসন করেন।

পরবর্তী সময়ে নেপোলিয়নও একই শাসননীতি অনুসরণ করেন এবং ১৮০৪ থেকে ১৮১৪ পর্যন্ত ফ্রান্স শাসন করেন। ক্ষমতার বৃহত্তর ঘনত্বকে টুকরো টুকরো করে ক্ষমতা অর্জন ও বজায় রাখার কৌশলই 'বিভাজন ও শাসন' নীতি। এই প্রক্রিয়ায় শক্তিগুলো ছোট হয়ে আসে, ফলে ক্ষমতা গ্রহণ ও টিকে থাকা সহজ হয়। আজকের সমাজে ক্ষমতায় যাওয়া ও ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সবচেয়ে বড় অস্ত্র হলো, 'বিভাজন ও শাসন' নীতি। রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সবখানেই 'বিভাজন ও শাসন' নীতির জয়জয়কার।

বর্তমানে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক অবকাঠামো পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের অংশীজনদের মাঝে সম্পর্কের চরম অবনতি হয়েছে। সেই সুযোগে উপাচার্য আইন ও নিয়মের তোয়াক্কা না করে বিশ্ববিদ্যালয়কে গতিশীল না করে, উল্টো নিজেই বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি অস্থিতিশীল প্রতিষ্ঠানে পরিণত করছেন। সম্প্রতি যার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। সদ্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও নিয়মের তোয়াক্কা না করে, মহামান্য রাষ্ট্রপতির নির্দেশনা উপেক্ষা করে, সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজের ইচ্ছার বাগানে পরিণত করেছিলেন। তার দায়িত্বকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, উন্নয়ন, অর্থ ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়ে। তার এই অনৈতিক আধিপত্য বিস্তার করতে তিনি সবার আগে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অন্যান্য অংশীজনের মাঝে সম্পর্কের অবনতি করার কাজকে সবচেয়ে গুরুত্বপূূর্ণ করে তুলেছিলেন। শিক্ষকদের নানারকম পদ-পদবির প্রলোভন দেখিয়ে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সম্পর্ক পুড়িয়ে চূড়ান্ত ছাই বানিয়েছেন। ফলে 'বিভাজন ও শাসন' নীতির সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে তিনি তার মেয়াদ উত্তীর্ণ করেছেন ঠিকই কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ক্ষতি করেছেন। অতীত ইতিহাস বলছে, এই বিশ্ববিদ্যালয় এখনও একজন শিক্ষার্থীবান্ধব উপাচার্য পায়নি। ফলে, প্রতিদিন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট ক্রমাগত ঘনীভূত হচ্ছে।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর। সংকটের সঙ্গে লড়তে লড়তে বড় হওয়া একটি সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। কাঁধে অনেক দায়িত্ব আর সামনে সীমাহীন অন্ধকার। তবুও সমসাময়িক যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয় দিক থেকে সারাদেশে ব্যাপকভাবে পরিচিত একটি নাম। আন্দোলন এখানকার নিত্যসঙ্গী। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্য ও প্রশাসনের মধ্যে বৈরিতা খুবই সুস্পষ্ট। কোনো এক অজানা কারণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসক সর্বজনীন অভিভাবক হয়ে উঠতে পারছেন না। ফলে নানা অভিযোগ শুনতে শুনতে আমরা আজ ক্লান্ত। তাই পত্রিকায় নেতিবাচক খবর পড়তে পড়তে প্রিয় কর্মস্থলের জন্য আজ অত্যন্ত দুঃখ অনুভব করি। মাঝেমধ্যে মনে হয়, অনেক দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে পথচলা এই বিশ্ববিদ্যালয় কোনো ভুল পথে পা বাড়াচ্ছে না তো?

আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’

একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হওয়া উচিত শিক্ষার্থীকে ঘিরে। হওয়া উচিত শিক্ষার্থীবান্ধব একটি বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ে তা কতখানি ঘটেছে সেটা ভেবে দেখার সময় এসেছে। খাদের চূড়ান্ত কিনারে দাঁড়িয়ে আছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। এই সংকট থেকে তুলে আনতে হবে তাকে। সেই লক্ষ্যে দরকার একজন যোগ্য নেতৃত্ব। ১৪ জুন ২০২১ অধ্যাপক ড. মো. হাসিবুর রশীদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেছেন। তার কাছে অনেক প্রত্যাশা। আমরা আশা করি, তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন যোগ্য অভিভাবক হয়ে উঠবেন। যোগদান করেই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বিতর্কিত ঢাকার লিয়াজোঁ অফিস বন্ধ করে দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করবেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। জুনিয়রদের চেয়ে সিনিয়রদের গুরুত্ব দিতে শুরু করেছেন। নিশ্চয়ই এগুলো প্রশংসনীয় কাজ। তবে সবার আগে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অংশীজনদের মধ্যে যে সম্পর্কের ফাটল ধরেছে তা মেরামত করতে হবে। সত্য ও ন্যায়ের পক্ষের সবাইকে এক কাতারে বসাতে হবে। প্রয়োজনে কাউকে বিভাগীয় শাস্তির আওতায় আনতে হবে, কাউকে স্বস্তি দিতে হবে। অর্থাৎ পুরস্কৃত করতে হবে এবং সবার আগে শিক্ষার্থীদের অধিকারকে প্রাধান্য দিতে হবে। তাহলেই তার চলে যাওয়ার দিনটি ফুলে ফুলে ভরে উঠবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন

নতুন উপাচার্যকে অনেকগুলো 'হবে'র সমাধান করতে হবে ক্রমান্বয়ে। দ্রুততম সময়ে পরীক্ষা ও ফলের ব্যবস্থা করতে হবে। বিদ্যমান ও করোনাকালে সৃষ্ট জট কী করে নিরসন করা যায় তা নিয়ে ভাবতে হবে। শিক্ষক সংকট দূর করতে হবে। শিক্ষকদের গবেষণামুখী করতে হবে। দাপ্তরিক কাজগুলোতে বাড়তি সুবিধা কমিয়ে তরুণ শিক্ষকদের নিরুৎসাহিত করতে হবে। গবেষণায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ বাড়াতে হবে। দীর্ঘদিন যাবৎ অবকাঠামো নির্মাণ স্থবির হয়ে আছে। এগুলো দ্রুততার সঙ্গে শেষ করতে হবে। নতুন একাডেমিক ভবন, হল নির্মাণ, খেলার মাঠ, প্রধান ফটক ও সংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্র নির্মাণ করতে হবে। দ্রুততম সময়ে শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষক সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। আবাসিক হলগুলোর সুযোগ-সুবিধা মানসম্পন্ন করে পড়ালেখার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। নিয়োগের ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম পরিপালন করতে হবে, সুযোগ থাকলে যোগ্যতা বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের নিয়োগে অগ্রাধিকার দিতে হবে। পরিবহন ও চিকিৎসাব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে হবে। গ্রন্থাগারে গ্রন্থ সংগ্রহ বাড়াতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়-সংশ্নিষ্ট সবার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। অংশীজনদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের পাশাপাশি এই হবেগুলো ধাপে ধাপে পূরণ করতে পারলে সঠিক পথে এগিয়ে যাবে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়।

আমরা প্রত্যাশা করি, সীমাহীন সংকট কাটিয়ে সীমাহীন সম্ভাবনার পথে হাঁটবে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। তবে মনে রাখতে হবে, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূূর্ণ অঙ্গ হলো শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের জন্যই বিশ্ববিদ্যালয়। অন্য সবকিছু কেবল তাদের প্রয়োজনে। এই দর্শন বাস্তবায়িত হলে, সবকিছু কেবল তাদের কল্যাণে পরিচালিত হলেই বিশ্ববিদ্যালয় সফল। এই কাজে যদি বিদ্যমান শিক্ষক রাজনীতি বন্ধও করতে হয়, তাহলে তা-ই করা প্রয়োজন।

লেখক : উমর ফারুক, শিক্ষক, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর

ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার - dainik shiksha মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038750171661377