গভীর অনিশ্চয়তায় শিক্ষাব্যবস্থা - দৈনিকশিক্ষা

গভীর অনিশ্চয়তায় শিক্ষাব্যবস্থা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন লটারীর মাধ্যমে নিশ্চিত হবে ভর্তি। এমনিতেই পড়াশোনা চলছে কম্পিউটার বা মোবাইলে। ক্লাসরুমে ছাত্রছাত্রীরা থাকে টিচারের চোখে চোখে। এখন তা প্রায় অসম্ভব। কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের মন অস্থির। তারা এই সব ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে কখন উঠে যায় কোথায় যায় কি করে কেউ বলতে পারে না। এদের মন সংযম আর ধারাবাহিকতাহীন ডিজিটাল পড়ালেখার সময় কবে শেষ হবে তাও কেউ জানে না। বলতে হবে আমাদের এই জগতটা আস্তে আস্তে তার সৌরভ হারিয়ে ফেলছে। মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও জানা যায়, করোনা চলে গেলেও যাবে না আমাদের সমস্যা। এই কষ্ট এই মৃত্যু এই বেদনার পাশাপাশি আমাদের সহ্য করতে হবে অনেক দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা। উন্নত দেশ নামে পরিচিত দেশগুলো সমস্যার সমাধানে যেসব পরিকল্পনা নিয়েছে তার একটা ধারাবাহিকতা আছে। তাদের দেশে আছে ধারাবাহিক গণতন্ত্র। আছে সুশাসন। আমাদের দেশে একমাত্র শেখ হাসিনাকে বাদ দিলে কোথাও কোন ভরসা নেই। এই ভরসাহীনতায় কি করে সমাধান মিলবে? দ্বিতীয় স্তর তৃতীয় স্তর বলে কিছু নেই দেশে। আজকাল যেসব সমস্যা সেগুলোর সমাধান কিভাবে মিলবে কেউ জানে না। রাজনীতিও জানে না। যে সমাজ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার দাবি জানায় একজন বিশ্বখ্যাত ক্রিকেটারকে চাপাতি বা রাম দা দিয়ে কুপিয়ে মারার ভিডিও ভাইরাল করে সে সমাজে বাকি সমস্যা কি আসলেই কোন মূল্য বহন করে? না তার সাধ্য আছে সেদিকে তাকায়?

মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় সম্পদ তার প্রাণ। সে জান আছে আজ হাতের ওপর। মানুষের মৌলিক সমস্যার বাইরে আর যেসব সমস্যা তাকে গ্রাস করছে সেদিকে তাকাবে কি ভাবে? বলছিলাম করোনার প্রভাব নিয়ে। এই করোনা আস্তে আস্তে আমাদের ভবিষ্যতকে গ্রাস করেছে। বলছিলাম বিদেশের কথা। দুনিয়ার উন্নত দেশগুলো স্কুল কলেজ খোলা রেখেছে। তারা চেষ্টা করেছে যাতে লেখাপড়া চালানো যায়। তাদের ভিশন পরিষ্কার। আগামী দিনগুলোতে তারা নতুন প্রজন্মকে বিপদে ফেলতে চায়নি। আমাদের বাস্তবতা ভিন্ন। আমাদের দেশ জনবহুল দেশ। চাইলেই স্কুল কলেজ খোলা রাখা দায়। এদিক থেকে সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো বা সঠিক বলতেই হবে। কারণ তা না হলে করোনা রোগীর সংখ্যা কত হতো বলা মুশকিল। বিশেষত আমাদের শিশু কিশোর তারুণ্য পড়তো বিপদে। তা ছাড়া অভিভাবকদের জন্য এ হতো কঠিন কাজ। জেনে শুনে তারা নিশ্চয়ই বাচ্চাদের ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিতেন না। কিন্তু এসব বাস্তবতার আড়ালেই বেড়ে উঠছে এক দানব। একাধিক সব আপদ।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রচলিত পাঠদান বন্ধে গভীর অনিশ্চয়তায় পড়েছে শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও শহরের শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ক্লাস করছে গ্রামের বেশিরভাগই এ সুবিধার বাইরে। সরকার টেলিভিশনে রেকর্ড করা ক্লাস সম্প্রচার করছে, সেখানেও উপস্থিতি ভাল নয়। এ বছরের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও সমমানের পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) এবং জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষাও হচ্ছে না। বাতিল হয়েছে স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা এবং এ বছরের এইচএসসি পরীক্ষাও। একের পর এক পরীক্ষা বাতিল আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পড়াশোনার রুটিনে ছন্দপতন, লেখাপড়ায় অমনোযোগী এবং পরিবারের আর্থিক সঙ্কটে বাড়বে ঝরে পড়া।

ধারণা করা যায় এরপর লেখাপড়ার জন্য সব ছাত্রছাত্রী ফিরে আসবে না। ফিরে আসা সম্ভবও না। বিশ্লেষকরা বলছেন তিরিশ পার্সেন্ট ফিরে আসবে। যদি ধরে নেই ৫০ শতাংশ, তাহলেও বাকি অর্ধেকের জীবন অনিশ্চিত। কোথায় যাবে তারা? কি করবে? এর উত্তর খুঁজে পাওয়া কি কঠিন? আমরা সমাজ জানি। সহজেই অনুমান করতে পারি নিম্ন মধ্যবিত্ত নামে পরিচিত যারা তারা হয়ে পড়ছে বিত্তহীন। দারিদ্র্যরেখার নিচে চলে যাচ্ছে মানুষ। গরিবের চাইতেও গরিব আজ মধ্যবিত্ত। তাদের সাধ্য নেই যদি সরকারী সাহায্য আর আনুকূল্য পাওয়া না যায়। কিন্তু সরকারের সীমাবদ্ধতাও মানতে হবে। টাকা থাকলেই সব হয় না। আমাদের দেশে যে টাকার ওপর সরকারের ভরসা তা আসে মূলত রেমিট্যান্স থেকে। এখন পর্যন্ত উপচে পড়া রিজার্ভ ভাণ্ডার। কিন্তু কতদিন? সবকিছুর প্রভাব সব দেশে সব সমাজে। যেসব দেশ থেকে টাকা আসে তারাও কি নিরাপদ? সে অনিরাপত্তা ও কুপ্রভাব দেখা যাবে কিছুদিন পর। সরকারের ঘাড়ে আরেক বিপদ দুর্নীতি ও লুটপাট।

উন্নয়ন উন্নতি আর দৃশ্যমান সবকিছু ছাপিয়ে যে লুটপাট তার একটুও কমতি নেই। বরং বেড়েছে। তাই আমাদের ভরসার জায়গা সবসময় টলটলায়মান। বিশেষ করে সামাজিক সমস্যার চাপ এখন এমন পর্যায়ে। কিছুদিন আগে খবরে দেখলাম কিশোর কিশোরীদের আইডি কার্ড দেয়ার কথা হচ্ছে। উদ্দেশ্য কি জানেন? যাতে সমস্যা করলে খুনোখুনি বা মারামারি করলে তাদের সহজে ধরা যায়। বুঝতে অসুবিধা নেই কোথায় গিয়ে ঠেকেছে সমস্যার তলানী। এভাবে চলতে থাকলে আমরা যে বছর না ফুরোতেই আরও কয়েক হাজার কমবয়সী অপরাধী পাব তা বলার দরকার পড়ে না। আর এসব অপরাধের পেছনে থাকবে অভাব অনটন কাজ হারানো অভিভাবক অনিশ্চিত ভবিষ্যত। এ নিয়ে কারও মাথাব্যথা আছে? যাদের আছে তারা সমাজে কখনও অগ্রগণ্য কেউ না। তারা পেছনের সারির মানুষ। সামনের সারিতে যত অপরাধী দাগী আর ডাকাতের দল। সে সমাজে বাচ্চা কিশোর কিশোরীদের ভবিষ্যত কি হবে বলা খুবই কঠিন।

চলমান মহামারীর ফলে অনেক গরিব পরিবার আরও বেশি অসহায় হয়ে পড়বে। সে ক্ষেত্রে তাদের সন্তানদের স্কুলে না পাঠিয়ে কাজে পাঠাতে চাইবে। ৩০ শতাংশ যারা ঝরে পড়তে পারে, তাদের একটা ডাটাবেজ সরকারীভাবে এখনই করা দরকার। এ তালিকা শিক্ষকদের দিয়ে করতে হবে। দেশের দরিদ্র পরিবারগুলোর শিশু শিক্ষার্থীদের জন্য মাসে ৩০০-৪০০ টাকা বৃত্তি ও এক বেলা করে খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, ঝরে পড়ার একটি কারণ দারিদ্র্য। এ জন্য প্রাথমিকের শিশুদের জন্য বৃত্তি, উপবৃত্তি দেয়া হচ্ছে। দুপুরে স্কুলেই এক বেলা খাবারের ব্যবস্থা (স্কুল ফিডিং) করা হচ্ছে। এতে ঝরে পড়ার হার অনেকাংশেই কমে যাবে।

মন্ত্রীর কথা যৌক্তিক। কিন্তু বিশ্বাস করা কঠিন। আমাদের দেশে সব পরিকল্পনা আর নিয়ম মার খায় দুর্নীতির কাছে। তাই সবার আগে সেদিকে নজর রাখা জরুরী। করোনা গেলেও এসব সমস্যা যাবে না। সঙ্গে আছে রোহিঙ্গাদের চাপ। এখন যোগ হয়েছে মূর্তি তথা ভাস্কর্য ভাঙ্গা মারদাঙ্গা করে জান কবজ করার উগ্রতা। এসব সামাল দিতে ব্যস্ত সরকারের অগোচরে যদি সমাজের বারোটা বেজে যায়, বিশেষত শিশু কিশোর যুবশক্তি পথ হারিয়ে ফেলে, তবে এদেশ ও জাতির ঘুরে দাঁড়ানোর পথ থাকবে না। আমরা কি সাবধান হব?

লেখক : অজয় দাশগুপ্ত

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0053150653839111