গভীর সংকটে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা - দৈনিকশিক্ষা

গভীর সংকটে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ৭ কলেজের বিভিন্ন সেশনের শিক্ষার্থীরা গভীর সংকটের মধ্যে পড়েছেন। এরমধ্যে সহসা এ থেকে বেরোনোরও উপায় নেই। এরফলে শিক্ষার্থীরা অন্যদের চেয়ে পিছিয়ে গেছেন। তাদের এই ক্ষতির দায় নিচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। উল্টো বলছে, পড়াশোনা না করে পরীক্ষা দেয়ায় গণহারে ফেল করেছে। এরফলে পরবর্তী শ্রেণিতে তারা প্রমোশন পাবে না। বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।  প্রতিবেদনটি লিখেছেন অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায় সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ১১ মাস আগে তাদের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির বিভিন্ন বর্ষের পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর শর্ত সাপেক্ষে পরের শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা শুরু করে। কিন্তু সম্প্রতি প্রকাশিত, ফলাফলে অনেকেই ফেল করেছেন। আবার অনেকেই পাস করলেও ২ পয়েন্টের নিচে পেয়েছেন। এরফলে পরের শ্রেণিতে পড়লেও এখন আবার তাদের নিচের শ্রেণিতে এসে ভর্তি হতে হবে এবং পরীক্ষা দিয়ে পাস করতে হবে। সবমিলিয়ে এক অদ্ভুত জটিলতার সামনে পড়েছে তাদের শিক্ষাজীবন।
এ পরিস্থিতিতে প্রমোশনের নতুন নিয়ম বাতিলের দাবি জানিয়েছেন ৭ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, নতুন এই নিয়মে পরীক্ষার খাতার যথাযথ মূল্যায়ন না হওয়ার ফলে তারা গণহারে ‘ফেল’ করেছেন। গতকাল বুধবার দুপুরে ঢাকা কলেজের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে প্রমোশনের নতুন নিয়মটি বাতিলসহ ৬ দফা দাবি জানান তারা। দাবি মানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ৩ দিনের সময় বেঁধে দেন। এর মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলে বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

ছয় দফা দাবিতে অধিভুক্ত সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন। ছবি: সংগৃহীত

জানতে চাইলে ইডেন কলেজের ইংরেজি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ২০১৮-১৯ ব্যাচের পরীক্ষা গত জানুয়ারিতে শেষ হয়। পরীক্ষা দেয়ার পর আত্মবিশ্বাস ছিল ফেল করব না। তারপর দ্বিতীয় বর্ষের প্রস্তুতি নেয়া শুরু করি। দ্বিতীয় বর্ষের পড়াশোনা শুরুর প্রায় ১ বছর পর জানতে পারি যে, প্রমোটেড নই। সিজিপিএ-২-এর বেড়াজালে আটকে গেছি। এখন আবার নিচের শ্রেণিতে ভর্তি হতে হবে। সৌরভ সরকার নামে আরেকজন শিক্ষার্থী জানান, সারাবছর দ্বিতীয় বর্ষের পড়া পড়েছি। ১১ মাস পর এসে জানতে পারি আমি প্রমোটেড নই। এখন এত কম সময়ের মধ্যে কিভাবে আবার প্রথমবর্ষের পড়া পড়ব।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকারি ৭ কলেজের সমন্বয়কারী কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার ভোরের কাগজকে বলেন, বিষয়গুলো নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলেছি। দেখি শেষ পর্যন্ত কী করা যায়। তবে এও ঠিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার মানের সঙ্গে আপস করবে না। যারা পরীক্ষা দিয়েই পরের শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল, কিন্তু এখন ফেল করেছে তাদের ক্ষেত্রে কি হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা যখন এভাবে ভর্তি হতে চেয়েছিল তখনই না করে বলেছিলাম, তোমাদের এভাবে ভর্তি হওয়া ঠিক হবে না। কিন্তু তারা ওইসময় এমন একটা চাপাচাপি শুরু করল, শেষ পর্যন্ত শর্তসাপেক্ষে ভর্তির অনুমতি দিতে হলো। এখন ফেল করা কিংবা ২ পয়েন্টের নিচে পাওয়ায় তাদের আগের শ্রেণির পরীক্ষা দিতে হবে এবং পাস করে পরের শ্রেণিতে যেতে হবে। কিন্তু এতে তো সমস্যা আরো বাড়বে।

এরআগে ফেসবুকে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকারি ৭ কলেজের অনার্স/মাস্টার্স শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ জরুরি নির্দেশনা’ শীর্ষক দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, অনেক জটিলতা থাকলেও আমরা পরীক্ষা ও ফলাফল প্রকাশ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোনা শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ পরীক্ষা নেয়া প্রায়ই নিয়মে এনেছিলাম। তবে ফলাফল বিপর্যয় পীড়াদায়ক ছিল। পরীক্ষার্থীদের পাশাপাশি আমাদের অতি উৎসাহী কেউ কেউ এজন্য দায়ী। ফেল করা শিক্ষার্থীকে পাস করানোর দায়িত্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নেবে না। এখনো সতর্ক না হলে একসময় বিনা সনদে বিরাট সংখ্যক শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করতে হবে। যারা নিয়মিতভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ৭ কলেজে ভর্তি হয়েছিল, তাদের ক্লাস, পরীক্ষা পূর্ব নির্ধারিত ক্যালেন্ডার অনুযায়ী শতভাগ সফলভাবে চলছিল। কিন্তু করোনা সব লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে। করোনা থাকা সত্ত্বেও অনলাইনে ক্লাস নিয়ে বিভিন্ন বর্ষে সিলেবাস প্রায় শেষ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বিজ্ঞানের প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসের বিষয়টি আমার কাছে বোধগম্য নয়। মাস্টার্স চূড়ান্ত, ডিগ্রি স্পেশালসহ ২/৩টি পরীক্ষা মাঝপথে আটকে আছে। সরকারি নির্দেশনা ও ক্লিয়ারেন্স পেলে স্বল্প সময়ের নোটিসে ও স্বল্প গ্যাপে সব পরীক্ষা শুরু হবে এবং দ্রুত ফল প্রকাশে সচেষ্ট থাকব।

তিনি বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের ভালো সামর্থ্যে কারণে দ্রুত তাদের শিক্ষার্থীদের চাকরি বাজারে প্রবেশের সুযোগ করে দিবে। পিছিয়ে যাবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ও সরকারি কলেজে পড়ুয়া প্রান্তিক লেভেলের শিক্ষার্থীরা। তাই আমরা সতর্ক। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ঢাকার সরকারি ৭ কলেজের প্রায় ২ লাখ শিক্ষার্থীর বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও সতর্ক হবার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করছি।

সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর ৭টি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের পরবর্তী বর্ষে প্রমোশনের নতুন নিয়ম বাতিলের দাবি জানিয়ে গতকাল বুধবার দুপুরে ঢাকা কলেজের সামনে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধন থেকে ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা ৬ দফা দাবি জানিয়েছেন। এগুলো হলো ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের সিজিপিএ ২/২.২৫/২.৫০ পয়েন্টে পরবর্তী বর্ষে প্রমোশনের নিয়ম বাতিল করতে হবে এবং সর্বনিম্ন ৩ বিষয় পর্যন্ত অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের প্রমোশনের দিতে হবে, স্নাতক ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের দ্বিতীয় বর্ষের মানোন্নয়ন পরীক্ষা ১ মাসের মধ্যে নিতে হবে এবং তৃতীয় বর্ষের দ্রæত চ‚ড়ান্ত পরীক্ষা নিয়ে দ্রুত ফল প্রকাশ করতে হবে, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের অতি দ্রুত পরীক্ষা নিয়ে ফল প্রকাশ করতে হবে, সব বর্ষের ফলাফল সর্বোচ্চ ৯০ দিনের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে, একটি শিক্ষাবর্ষে একাধিক বর্ষের শিক্ষার্থী রাখা যাবে না, ডিগ্রি ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের চলমান বিশেষ পরীক্ষা অতি দ্রুত নিয়ে ১ মাসের মধ্যে ফল প্রকাশ করতে হবে এবং সব মানোন্নয়ন পরীক্ষা অতি দ্রুত নিতে হবে ও ডিগ্রি-স্নাতক-স্নাতকোত্তরসহ সব বর্ষের ফলাফলে শিক্ষার্থীদের গণহারে অকৃতকার্য হওয়ার কারণসহ খাতা পুনঃমূল্যায়ন করতে হবে।
মানববন্ধনে অংশ নেয়া ঢাকা কলেজের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র শাহরিয়ার মাহমুদ বলেন, পরীক্ষার ১১ মাস পর জানতে পারছি, আমরা পরবর্তী বর্ষে প্রমোশন পাইনি। ফলাফলে গণহারে ফেল এসেছে। ইংরেজি বিভাগে পাসের হার ২১ শতাংশ, অর্থনীতিতে ২৯ শতাংশ, বাংলায় ৩১ শতাংশ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানেও অনেক ফেল। সিজিপিএ-২-এর নিয়মের কারণে ৫ বিষয়ে পাস করার পরও আমরা পরবর্তী বর্ষে প্রমোশন পাচ্ছি না। ফেল আসা বিষয়ে পরের বছর পরীক্ষা দিতে গেলে ৮০০ টাকা লাগে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি বাণিজ্য খুলে বসেছে?

তিনি আরো বলেন, আমরা নিজ নিজ কলেজের অধ্যক্ষ, বিভাগ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ডিন কার্যালয়, উপাচার্য ও সহউপাচার্যকে এ বিষয়ে স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু আমরা কোনো জায়গা থেকেই কোনো সাড়া পাইনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে বলে কলেজে যেতে আর কলেজ থেকে বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাও আমরা এখন যাব কার কাছে? এখন রাস্তাই আমাদের ঠিকানা।

প্রসঙ্গত, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর চাপ কমাতে ঢাকার ৭টি সরকারি কলেজকে ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। কলেজগুলো হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ার পর এই কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা প্রথমে আনন্দিত হয়েছিলেন। কিন্তু সেশনজট ও গণহারে অকৃতকার্য হওয়ার কারণে ১ বছর না যেতেই সেই আনন্দ নিরানন্দে পরিণত হয়।

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037198066711426