কবিতা, গান ও পথনাটকের মত ভিন্নধর্মী আয়োজনের মাধ্যমে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ কাটার প্রতিবাদ জানিয়েছেন কবি, শিল্পী, চলচ্চিত্র নির্মাতাসহ সংস্কৃতি কর্মীরা। শুক্রবার দিনভর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিভিন্ন প্রবেশমুখে পরিবেশবাদীসহ বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করেন তারা।
শিল্পের ভাষায় এসব কর্মসূচিতে গাছ কাটার ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে তা বন্ধের দাবি জানানো হয়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সৌন্দর্য বাড়াতে গণপূর্ত অধিদপ্তরের একটি প্রকল্পে হাঁটার পথ, গাড়ি রাখার স্থান ও রেস্তোরাঁ বানাতে বেশ কিছু গাছ কাটা পড়ছে। কিছু গাছ এরই মধ্যে কাটা হয়ে গেছে, আরো কাটার জন্য কিছু গাছ চিহ্নিত করা হয়েছে।
ঐতিহাসিক এই উদ্যানে ‘আন্তর্জাতিক মানের স্মৃতিকেন্দ্র’ গড়ে তোলার মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ‘কিছু গাছ’কাটা হয়েছে বলে দাবি করছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। সবুজ ধ্বংস করে রেস্টুরেন্ট বা খাবারের দোকান নির্মাণ বন্ধের দাবিতে এদিন সকালে টিএসসি সংলগ্ন উদ্যান গেইটে ছাত্র-যুব সমাবেশ করে পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিন ভয়েস। সমাবেশে সেভ ফিউচার বাংলাদেশ নামের আরেকটি সংগঠনের প্রতিনিধিরাও একাত্মতা প্রকাশ করেন।
সমাবেশ শেষে গ্রিন ভয়েসের প্রধান সমন্বয়ক আলমগীর কবির, গ্রিন সেভারর্সের সভাপতি আহসান রনি, স্থপতি ইকবাল হাবিবসহ আন্দোলনকারীরা উদ্যানের গাছে গাছে বীরশ্রেষ্ঠ, বীর প্রতীকসহ খেতাবপ্রাপ্ত ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম লিখে প্রতিবাদ জানান।
এ সময় স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন," বিজ্ঞ ব্যক্তিরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্পের মহাপরিকল্পনা তৈরি করেছিলেন। তাতে খাবারের দোকান, শৌচাগারসহ এ ধরনের কোনো স্থাপনা বানানোর কথা ছিল না।
আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’
“প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ের নাম দিয়ে দুর্বৃত্তায়ন করে খাবারের দোকানসহ বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করে এ উদ্যানের ঐতিহাসিক সত্যতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হচ্ছে। যারা এই কাজ করেছে, তাদেরকে শাস্তির আওতায় না আনলে আমরা প্রতিবাদ অব্যাহত রাখব।"
বিকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ছবির হাটে বৃক্ষ হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদী সভা করেন কবি, লেখক, শিল্পী, ছোটকাগজ ও সংস্কৃতিকর্মীরা।
প্রতিবাদ কর্মসূচীতে কবিতা পড়েন কবি হাসান ফকরি ও অভিজিৎ রায়।
সভায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জুনায়েদ হালিম বলেন, “বঙ্গবন্ধুর গড়ে তোলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঢাকা শহরের অক্সিজেন ভান্ডার। স্বাধীনতার স্মৃতি বিজড়িত উদ্যানকে ধ্বংস করে কতিপয় মানুষ ব্যবসা বাণিজ্যের আস্তানা বানানোর পাঁয়তারা করছে। আমরা এটা মেনে নিতে পারি না। উদ্যানকে বাজারে রূপান্তরিত করার এই পাঁয়তারা আমরা মানি না। এই প্রক্রিয়া আমরা রুখে দিব।"
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন
গণ সাংস্কৃতিক ফ্রন্টের যুগ্ম আহবায়ক জাকির হোসেন বলেন, “সোহরাওয়ার্দী উদ্যান আমাদের কাছে ফুসফুস আর পুঁজিবাদীদের কাছে তা ব্যবসা। পুঁজিবাদ সমস্ত দিক থেকে পরিবেশকে ধ্বংস করে ফেলছে। পাহাড় কেটে ভবন বানাচ্ছে, গাছ কেটে বানাচ্ছে রেঁস্তোরা। এটা মর্মান্তিক।"
আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ লেখক শিবিরের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল, চারণিক সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুল হক আরিফ, ছাত্রফ্রন্টের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, নোঙর বাংলাদেশের সভাপতি সুমন শামস বক্তব্য দেন।
বিকাল তিনটায় গাছ নিধনের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে পথনাটক পরিবেশন করে নোঙর বাংলাদেশ, স্বাধীনতা উদ্যান সাংস্কৃতিক জোট ও গ্রিন প্যানেট নামে কয়েকটি সংগঠন।
সেখানে তরুণ নির্মাতা সুদীপ সজীব বলেন, “আপনারা এটাকে বলছেন উন্নয়ন। আমরা গাছ কেটে এমন উন্নয়ন চাই না। প্রকৃতি ধ্বংসের এই প্রকল্প বাতিল করা হোক। তা না হলে প্রতিবাদ চলবে।”
এছাড়া বিকালে কবি অনিন্দ্য অমাত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছে উঠে কবিতা আবৃত্তি করে ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ জানান।