৩০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতির (ক্লাস্টার সিস্টেম) ভর্তিতে এ বছর সম্মত হয়েছে। মোট ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৯টিতে বর্তমানে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান। বাকিগুলো নতুন। শিক্ষা কার্যক্রম চালু থাকা ৩৯টির মধ্যে ৩০টি গুচ্ছ পদ্ধতিতে এ বছর ভর্তি পরীক্ষা নিতে সম্মত হয়েছে। বাকি ৯টির মধ্যে তিনটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সঙ্গে মিলে গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষা নিতে চায়। এ তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় হলো- বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটি। তারা এখন বুয়েটের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। তবে বুয়েট এ তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়কে সঙ্গে নিয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিতে রাজি নয়। তারা এককভাবে শুধু নিজেদের ভর্তি পরীক্ষা নিতে চায়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকারও চেয়েছিল বুয়েটের নেতৃত্বে টেক্সটাইলসহ বাকি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা একসঙ্গে হোক। তবে বুয়েটের 'একলা চলো নীতি'র কারণে সে উদ্যোগ সফলতার মুখ দেখছে না এ বছরও। অবশ্য দেশের ১৩টি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা এবারও একসঙ্গেই হবে। এর সঙ্গে এই ক্লাস্টারেই পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাও একই সঙ্গে হবে।
বর্তমানে দেশে ৪৬টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও ৩৯টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এরই মধ্যে গুচ্ছ পদ্ধতিতে রাজি হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সঙ্গে নিয়ে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু করেছে ইউজিসি। ৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সরাসরি শিক্ষার্থী ভর্তি করা ৩৯টিতে এ বছর ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে প্রথমবর্ষে আসন রয়েছে প্রায় ৬০ হাজার।
করোনার কারণে এবার পরীক্ষা ছাড়াই এইচএসসির মূল্যায়ন হওয়ায় ১৩ লাখ ৬৫ হাজারের বেশি পরীক্ষার্থীর সবাই পাস করবেন। যাদের অধিকাংশের লক্ষ্যই থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। এর সঙ্গে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ থাকায় গত বছর পাস করা শিক্ষার্থীদের অনেকেই ভর্তি পরীক্ষা দেবেন। ফলে ভর্তিতে বিরাট চাপ পড়বে।
জানা গেছে, ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী পরিচালিত স্বায়ত্তশাসিত চার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর গুচ্ছ পদ্ধতিতে যেতে চায় না। আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) স্বতন্ত্রভাবেই ভর্তি পরীক্ষা নেবে শিক্ষার্থীদের। এ ছাড়া উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) গুচ্ছ পদ্ধতিতে যাওয়ার সুযোগ নেই।
ঠুটো জগন্নাথ হিসেবে পরিচিত ইউজিসি বলছে, কোনো বিশ্ববিদ্যালয় যদি গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় না আসে, তাহলে জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হবে না। এটি তাদের সিদ্ধান্ত। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় তাদের এই পদ্ধতিতে আসার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। অথচ এই ইউজিসিরই দায়িত্ব এসব বিশ্ববিদ্যালয়কে জনগনের কাজে লাগানো।
জানা গেছে, এবার যে ৩০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিতে রাজি হয়েছে, তার মধ্যে সাতটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯টি রয়েছে সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। তা ছাড়া তিনটি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট, রুয়েট ও কুয়েট) যুক্ত হয়েছে।
এর বাইরে ডিপ্লোমা কোর্স থাকায় ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট) নিজেরা স্বতন্ত্রভাবে ভর্তির ব্যবস্থা নেবে। তা ছাড়া ভিন্ন ধরনের হওয়ায় উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ পদ্ধতিতে যাওয়ার সুযোগও নেই।
এ বিষয়ে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় যাচ্ছে। বিশেষায়িত তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ও যেতে চাচ্ছে বুয়েটের সঙ্গে, তবে বুয়েট সম্মত হচ্ছে না। সব প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করা হবে। বুয়েটসহ অন্য তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় রুয়েট, কুয়েট ও চুয়েটকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বুয়েটের চিঠির উত্তর পাওয়ার পর অন্য তিনটির সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।