বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নতুন এমপিও নীতিমালায় আগে স্কুল ও দাখিল মাদরাসার সহকারী গ্রন্থাগারিক এবং কলেজ ও আলিম মাদরাসার গ্রন্থাগারিক পদটিকে শিক্ষক পদ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে সরকার। এ পদ দুটির নতুন নাম দেওয়া হয়েছে তথ্য ও গ্রন্থাগারবিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী শিক্ষক ও গ্রন্থাগারবিজ্ঞান প্রভাষক। এন্ট্রি লেভেলের নতুন এ শিক্ষক পদ দুটিতে নিয়োগে শিক্ষক নিবন্ধন প্রক্রিয়া বাধ্যতামূলক করে নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিচালনার দায়িত্ব এনটিআরসিএকে দেওয়া হয়েছে। যদিও এখনো এ পদ দুটিতে শিক্ষক নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। তবে, ইতোমধ্যে গ্রন্থাগার শিক্ষক ও প্রভাষক নিয়োগে সিলেবাস প্রস্তুত করেছে এনটিআরসিএ।
সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সভায় গত ১৯ অক্টোবর গ্রন্থাগার শিক্ষক ও প্রভাষক নিয়োগের সিলেবাস অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ সিলেবাস দুটি এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয় সিলেবাস অনুমোদন করলে আগের নির্দেশনা অনুযায়ী ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি সংশোধন করবে এনটিআরসিএ। নতুন পদে নিবন্ধনের আবেদন গ্রহণের পর ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়া হবে। কর্মকর্তারা বলছেন, ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের পরীক্ষার জন্য প্রার্থীদের বেশ কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে।
যেভাবে গ্রন্থাগার শিক্ষক-প্রভাষক নিয়োগের সিলেবাস :
১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা থেকে গ্রন্থাগার শিক্ষক-প্রভাষক নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সে অনুযায়ী সিলেবাস তৈরি করেছে এনটিআরসিএ। সিলেবাস তৈরির বিষয়টি এনটিআরসিএর সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা দৈনিক আমাদের বার্তাকে নিশ্চিত করেছন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিআরসিএর পাঠ্যসূচি প্রণয়ন শাখার উপপরিচালক মো: রুহুল কুদ্দুস চৌধুরী দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমরা গ্রন্থাগার শিক্ষক ও প্রভাষক নিয়োগের দুটি আলাদা সিলেবাস করেছি। সিলেবাস দুটি আমাদের সিলেবাস প্রণয়ন কমিটি অনুমোদন দিয়েছেন। তা এখন আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো। মন্ত্রণালয় অনুমোদনের পর ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি সংশোধন করা হবে।
তিনি আরও জানান, সেমিনারের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত টিম সিলেবাস করেছে। প্রতিটি বিষয়ের সিলেবাস করার জন্য তিন সদস্যের টিম করা হয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপক, কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ, এনসিটিবি সংশ্লিষ্টরা এ সিলেবাস করেছেন। তারা সেমিনার করে মতামত নিয়ে সিলেবাস জমা দিয়েছেন। আমরা সিলেবাস চূড়ান্ত করেছি।
স্কুল ও মাদরাসায় গ্রন্থাগার শিক্ষক নিয়োগে একই সিলেবাস :
স্কুল ও মাদরাসায় গ্রন্থাগারিক ও সহকারী গ্রন্থাগারিক নিয়োগে শিক্ষাগত যোগ্যতা আলাদা। মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজের সহকারী গ্রন্থাগারিক ও গ্রন্থাগারিক হতে সাধারণ ধারার শিক্ষার্থী ও মাদরাসার শিক্ষার্থীরা উভয়ই আবেদন করতে পারলেও দাখিল ও আলিম মাদরাসায় গ্রন্থাগারিক নিয়োগের জন্য মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বা ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় বা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফাযিল ও গ্রন্থাগার বিজ্ঞান বিষয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীরা শুধু আবেদন করার সুযোগ পেতেন। তবে, দাখিল মাদরাসা ও স্কুলে গ্রন্থাগারবিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের নিবন্ধিত হতে একই সিলেবাসে নিবন্ধন পরীক্ষা দিতে হবে প্রার্থীদের। একইভাবে কলেজ ও আলিম মাদরাসায় গ্রন্থাগার প্রভাষক নিয়োগেও একই সিলেবাস অনুসারে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সেভাবেই সিলেবাস চূড়ান্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে এনটিআরসিএর পাঠ্যসূচি প্রণয়ন শাখার উপপরিচালক দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমরা মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ স্কুল ও দাখিল মাদরাসায় গ্রন্থাগারবিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের নিবন্ধনে একটি সিলেবাস করেছি। আর কলেজ ও আলিম মাদরাসায় গ্রন্থাগারবিজ্ঞান বিষয়ের প্রভাষক নিয়োগের একটি সিলেবাস করেছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিলেবাস অনুমোদন করলে এ দুই সিলেবাস অনুসারে প্রার্থীরা নিবন্ধিত হয়ে শিক্ষক পদে নিয়োগ পেতে জাতীয় মেধাতালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবেন। আমরা নতুন মোট ৮টি বিষয়ের সিলেবাস করে মন্ত্রণালয়ে পাঠাচ্ছি।
‘গ্রন্থাগার শিক্ষক নিয়োগের সিলেবাস আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন’ :
এনটিআরসিএর পাঠ্যসূচি প্রণয়ন শাখার উপপরিচালক মো: রুহুল কুদ্দুস চৌধুরী দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, গ্রন্থাগার শিক্ষক ও প্রভাষক নিবন্ধনের সিলেবাস আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করে করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার শিক্ষকরা ও এনসিটিবির বিশেষজ্ঞরা সিলেবাস করেছেন। সেমিনার করে মতামত নিয়ে এ সিলেবাস করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর সিলেবাস প্রকাশ করা হবে। প্রকাশিত সিলেবাস অনুসারে প্রার্থীরা প্রস্তুতি শুরু করতে পারবেন।
নতুন সিলেবাস অনুমোদনের নিবন্ধন পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি সংশোধন :
নতুন সিলেবাস অনুমোদনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাচ্ছে এনটিআরসিএ। সিলেবাস অনুমোদন হলে সে অনুসারে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা নিতে ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি সংশোধন করা হবে। এনটিআরসিএর কর্মকর্তারা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি সংশোধন করে দুটি নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিজ্ঞপ্তি সংশোধনের সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী সিলেবাস তৈরি করা হয়েছে। সিলেবাস অনুমোদনের পর সিলেবাস অনুযায়ী বিজ্ঞপ্তি সংশোধন করা হবে। নতুন পদগুলোতে শিক্ষক নিবন্ধনের জন্য আবেদন নেওয়া হবে।
শিগগির হচ্ছে না ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা :
গত বছর ১৫ ও ১৬ মে ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলিমিনারি এবং ৭ ও ৮ আগস্ট লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ এপ্রিল ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার স্থগিত করা হয়। ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিতে ১১ লাখ ৭২ হাজার প্রার্থী আবেদন করেছেন। প্রার্থীরা অপেক্ষায় আছেন কখন পরীক্ষা নেওয়া হবে।
কিন্তু নতুন নীতিমালা অনুসারে গ্রন্থাগারবিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক ও প্রভাষক নিয়োগে নিবন্ধন পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশনা আসে। সে অনুসারে সিলেবাস তৈরি করা হয়েছে। তবে কবে নাগাদ এ পরীক্ষা নেওয়া হবে সে বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেনি এনটিআরসিএ।
সংস্থাটির সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সিলেবাস তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তা অনুমোদন হয়ে আসতে মাসখানেক সময় লাগবে। সিলেবাস অনুমোদনের পর বিজ্ঞপ্তি সংশোধন করে জারি করা হবে। নতুন পদে অর্থাৎ গ্রন্থাগারবিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক ও প্রভাষকদের নিবন্ধনের আবেদন নেওয়া হবে। তখন পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।
এনটিআরসিএর কর্মকর্তারা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমরা এ মুহুর্তে সিলেবাস অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি। সিলেবাস অনুমোদন হলে সে অনুসারে বিজ্ঞপ্তি সংশোধন হবে। সংশোধিত বিজ্ঞপ্তিতে পরীক্ষার নতুন তারিখ উল্লেখ থাকতে পারে। তবে, সিলেবাস অনুমোদন হয়ে আসতে কিছুটা সময় লাগবে।
২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জানুয়ারি ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেদিন বিকেল ৪টা থেকে আবেদন গ্রহণ শুরু হয়েছিল। এনটিআরসিএর ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে আগ্রহী প্রার্থীরা সে বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আবেদন করতে পেরেছেন। আর ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ফি জমা দিয়ে আবেদন নিশ্চয়নের সুযোগ পেয়েছেন। ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিতে ১১ লাখ ৭২ হাজার প্রার্থী আবেদন করেছিলেন। ইতোমধ্যে আবেদন করা প্রার্থীরা দ্রুত ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা আয়োজনের পক্ষ মত দিয়েছেন।