বৈশ্বিক শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নে অবদান রাখতে জাতিসংঘের আহ্বানে সাড়া দেয়ার প্রতিশ্রুতির কথা পুর্নব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের ফোন কলের জবাবে গত ১৩ এপ্রিল তিনি একথা বলেন। গ্রুপটির উদ্দেশ্য পূরণে উচ্চ পর্যায়ের সংলাপসহ বিভিন্ন বিষয়ে সম্পৃক্ত হতে বাংলাদেশের প্রস্তুতির কথা জানান শেখ হাসিনা। করোনা মহামারির পর চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ খাদ্য, জ্বালানি, অর্থনীতিসহ বিভিন্ন সেক্টরের অবস্থা খারাপের দিকে নিয়ে যাওয়ার কথা ও জাতিসংঘ মহাসচিবকে ব্রিফ করেন প্রধানমন্ত্রী। জাতিসংঘ মহাসচিবকে শেখ হাসিনা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষার ক্ষেত্রগুলোতে শান্তি প্রতিষ্ঠা, টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়ন, জলবায়ু ইস্যু এবং লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অংশীদারিত্বের কথা উল্লেখ করেন ।
‘চ্যাম্পিয়নস গ্রুপ অব গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স’গ্রুপে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে মহাসচিবের এ আহ্বান অত্যন্ত সময়োপযোগী। একই প্লাটফর্মে যোগদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইন্দোনেশিয়া এবং সেনেগালের প্রেসিডেন্ট, বার্বাডোস এবং ডেনমার্কের প্রতি গভীর সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। বাংলাদেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা, নীতি এবং আদেশসহ বেশ কয়েকটি জাতীয় চালিকাশক্তি দ্বারা পরিচালিত হয়। জাতীয় পরিকল্পনায় বিপর্যয়ের ঝুঁকি, পরিণতি ও সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ এবং কাঠামোগত ও অকাঠামোগত ব্যবস্থাগুলোর একীকরণের দিকে যা নজর দেয়। দুর্যোগ প্রতিক্রিয়ার উদাহরণ হলো দুর্যোগত্রাণ, অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন যা প্রশিক্ষিত কর্মীদের কাছ থেকে ঘুম, খাবার এবং মানসিক সমর্থনের জন্য নিরাপদ জায়গা প্রদান করে। জরুরি খাবার ও পানি সরবরাহ, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিতরণ করা, যেমন স্বাস্থ্যবিধির জন্য প্রসাধন সামগ্রী এবং পরিষ্কার করার প্রচেষ্টার জন্য বেলচা, ট্র্যাশ ব্যাগ ইত্যাদি ।
বাংলাদেশে দুর্যোগ প্রতিক্রিয়ায় তিনটি মৌলিক কৌশল প্রয়োগ করতে দেখা যায় যেমন ১. দুর্যোগের এর প্রভাব, ধারণ বা তা প্রশমিত করার সিদ্ধান্ত ও ব্যবস্থার সমষ্টি, বিপর্যয়কর ঘটনা যাতে জীবন ও অথবা সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি রোধ করা যায়, ২. দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় অবিলম্বে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও ৩. স্বাভাবিকতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা…দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা চক্রের দ্বিতীয় পর্যায় হলো দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া। সতর্কতা/উচ্ছেদ, অনুসন্ধান ও উদ্ধার, তাৎক্ষণিক সহায়তা প্রদান, ক্ষতির মূল্যায়ন, অব্যাহত সহায়তা এবং অবিলম্বে পুনরুদ্ধার বা অবকাঠামো নির্মাণ (যেমন অস্থায়ী স্টর্ম ড্রেন বা ডাইভারশন বাঁধ)। জরুরি প্রতিক্রিয়ার লক্ষ্য হল জীবন বজায় রাখতে, স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং ক্ষতিগ্রস্ত জনসংখ্যার মনোবলকে সমর্থন করার জন্য জরুরি সহায়তা প্রদান করা। এ ধরনের সহায়তা নির্দিষ্ট কিন্তু সীমিত সাহায্য প্রদান করা হতে পারে, যেমন অস্থায়ী আশ্রয় এবং খাদ্য দিয়ে ক্যাম্প, শরণার্থীদের পরিবহন এবং অন্যান্য স্থানে আধা স্থায়ী বসতি স্থাপন করা পর্যন্ত। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর প্রাথমিক মেরামত বা অবকাঠামোর দিক পরিবর্তন জড়িত থাকতে পারে। মানুষকে নিরাপদ রাখা প্রতিক্রিয়া পর্বে ফোকাসপরবর্তী ধাপ দুর্যোগ প্রতিরোধ করা এবং আরো স্থায়ী ও টেকসই সমাধানের পথ খুঁজে বের করা তথা মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা। একটি দুর্যোগে সাড়া দেয়ার দায়িত্ব প্রধান সরকার বা যে অঞ্চলে এ বিপর্যয় ঘটেছে সে অঞ্চলের সরকার সংস্থা গুলোর ওপর। বাংলাদেশে অলাভজনক মানবিক সংস্থাগুলো প্রায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা চক্রের সকল পর্যায়ে দৃঢ়ভাবে উপস্থিত থাকে যেখানে সরকারের প্রয়োজনীয়তার জন্য পর্যাপ্তভাবে সাড়া দেয়ার মতো সংস্থান নেই।
বাংলাদেশে সংকট ব্যবস্থাপনায় শিক্ষা ও গবেষণা অত্যন্ত অপ্রতুল। একথা বললে ভুল হবে না যে, প্রকৃতিই আমাদের শিক্ষক। উন্নত দেশগুলোতে সংকট ব্যবস্থাপনায় তৃণমূল থেকে একটি কর্পোরেট সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। কারণ শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, সঙ্কট যে কোনো মুহূর্তে, যে কোনো সংস্থাকে ও আঘাত করতে পারে। শুধু বিশ্বব্যাপী ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রেই নয়, বরং কর্পোরেট সংকট ছোট ব্যবসার ক্ষেত্রেও অস্তিত্বের হুমকি সৃষ্টি করার সম্ভাবনা থাকে। ইউ এস ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সির মতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৪০ থেকে ৬০ শতাংশের মধ্যে ছোট ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়, এটি একটি ক্রমবর্ধমান সাধারণ ধরনের কর্পোরেট সংকট। সংকট কর্পোরেট জীবনের একটি সত্য, সংস্থাগুলো অনুমান করে যে পর্যাপ্ত পরিকল্পনা করতে ব্যর্থ।
বাংলাদেশে সংকট ব্যবস্থাপনায় শিক্ষা ও গবেষণা অত্যন্ত অপ্রতুল। একথা বললে ভুল হবে না, যে প্রকৃতিই আমাদের সংকট মুহূর্তে শিক্ষক। উন্নত দেশগুলোতে সংকট ব্যবস্থাপনায় তৃণমূল থেকে একটি কর্পোরেট সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। কারণ শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, সঙ্কট যে কোনো মুহূর্তে, যে কোনো সংস্থাকে ও আঘাত করতে পারে। শুধু বিশ্বব্যাপী ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রেই নয়, বরং কর্পোরেট সংকট ছোট ব্যবসার ক্ষেত্রেও অস্তিত্বের হুমকি সৃষ্টি করার সম্ভাবনা থাকে। ইউএস ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সির মতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৪০ থেকে ৬০ শতাংশের মধ্যে ছোট ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়, এটি একটি ক্রমবর্ধমান সাধারণ ধরনের কর্পোরেট সংকট। সঙ্কট কর্পোরেট জীবনের একটি সত্য, সংস্থাগুলো অনুমান করে যে তারা অনাক্রম্য এবং পর্যাপ্ত পরিকল্পনা করতে ব্যর্থতা টেনে আনে চরম বিপর্যয়। বাংলাদেশ যখন উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখে তখন জাতীয় সংকট ব্যবস্থাপনার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও কৌশল থাকা জরুরি, সঙ্কটের সাথে সম্পর্কিত স্পষ্ট ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এখনো অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে। সম্ভাব্য সর্বোত্তম ফলাফলের সাথে একটি সংকট মোকাবেলার জন্য বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় সক্ষমতা অর্জন বা প্রক্রিয়ার আশ্রয় নিতে হবে। দুর্যোগপূর্ণ সময়ে গণমাধ্যম থেকে সমালোচনামূলক ঘটনাগুলোর সাথে সংকট ব্যবস্থাপনাকে একত্রিত করে সামঞ্জস্যপূর্ণ ধীরগতির কারণগুলো চিহ্নিত করে একটি জাতীয় মহাপরিকল্পনা ও কৌশল তৈরি করতে হবে।
বৈশ্বিক শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নে অবদান রাখতে শুধু খাদ্য, শক্তি ও অর্থবিষয়ক গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপে অংশ গ্রহণ নয় বরং বাংলাদেশকে এমনিতর গ্রুপের নেতৃত্ব দিতে হবে।
লেখক : কানাডা প্রবাসী