ঘুষ কেলেঙ্কারি ও শিক্ষকদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারে অভিযুক্ত মো. আনোয়ার হোসেনই মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের বরিশাল আঞ্চলের নতুন ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক (ডিডি) হিসেবে পদায়ন পেয়েছেন। তিনি বরিশালের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাকে বরিশালের আঞ্চলিক উপপরিচালক পদে বদলি করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, বরিশালের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পদে থাকার সময় শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছিল। জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় সম্মানী বাণিজ্যের অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। এছাড়া শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় প্রতিজন প্রার্থীর জন্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তিনটাকা করে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে। এসব বিষয় নিয়ে স্থানীয় শিক্ষকরা অভিযোগ তুলেছিলেন। সেই আনোয়ার হোসেনকেই বরিশাল অঞ্চলের ডিডি পদে পদায়ন দিলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বরিশাল অঞ্চলের শিক্ষকদের অভিযোগ, আনোয়ার হোসেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পদে থাকার সময় শিক্ষকদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছেন। এর প্রতিবাদে শিক্ষকরা তার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনও করেছিলেন।
জানা গেছে, তিনি এতদিন বরিশালের উপপরিচালক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্বে ছিলেন। প্রজ্ঞাপনে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হলো।’
জানা গেছে, ঘুষ কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনকে নিয়ে দৈনিক সমকাল মাত্র পাঁচ মাসের ব্যবধানে সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ জুলাই প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার তথ্য প্রমাণ দেওয়া হয়। কিন্তু মাত্র পাঁচ মাসের ব্যবধানে অভিযুক্ত শিক্ষা কর্মকর্তাকে ফেরেশতা হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন একই প্রতিবেদক।
দৈনিক সমকালে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ জুলাই প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বরিশালের জেলা শিক্ষা অফিসার আনোয়ার হোসেন নিবন্ধন পরীক্ষায় পরীক্ষার্থী প্রতি তিন টাকা করে ঘুষ নিয়েছেন। প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল ‘বরিশালে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা : মাথাপিছু ঘুষ তিন টাকা! প্রতিবেদকের নাম সুমন চৌধুরী। প্রতিবেদনে বলা হয়, শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় পরীক্ষার্থী প্রতি ৩ টাকা করে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বরিশাল জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তিনি এ টাকা নেন। গত এপ্রিলে প্রায় ৩৯ হাজার পরীক্ষার্থী বাবদ তিনি প্রায় সোয়া লাখ টাকা নেন।”
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের উপাধ্যক্ষ ও পরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদ পরীক্ষার্থী প্রতি ৩ টাকা করে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে দেয়ার কথা সমকালের কাছে স্বীকার করেছেন। হারুন অর রশিদ আরও বলেন, পরীক্ষা চলাকালে শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন কেন্দ্র পরিদর্শনে এসে ওই টাকা দেয়ার তাগাদাও দিয়েছেন। গত এপ্রিলে তিন টাকা করে দেওয়ার কথা সমকালকে জানিয়েছিলেন উপাধ্যক্ষ হারুন।
মাত্র পাঁচ মাসের ব্যবধানে এর ঠিক বিপরীত একটা প্রতিবেদন লিখেছেন একই প্রতিবেদক। ৭ ডিসেম্বর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনের সাফাই গেয়ে লেখা প্রতিবেদনে তাকে ফেরেশতা বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষা কর্মকর্তার পক্ষে বরিশালের শিক্ষক সমিতির একজন সাবেক নেতাকে সাক্ষ্য মানা হয়েছে। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ৭ ডিসেম্বর শেষ পাতায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটির শিরোনাম: বরিশাল জেলা শিক্ষা অফিস, ঘুষ বন্ধ তাই অন্যত্র বদলি হয়ে যান তারা।’
৩১ জুলাই সমকাল পত্রিকা শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ ও তথ্য প্রমাণ প্রকাশ করেছে। কিন্তু ৭ ডিসেম্বর একই প্রতিবেদকের লেখা প্রতিবেদনে বলা হয়, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আনোয়ার হোসেন প্রতিষ্ঠানটিতে এসে ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। এতেই ক্ষান্ত নন প্রতিবেদক। প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘বিভিন্ন সূত্র ও সেখানে সেবা নিতে আসা একাধিক প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আনোয়ার হোসেন ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে বরিশালে যোগদানের পর সেখানকার দাপ্তরিক কাজে অনেক স্বচ্ছতা ফিরেছে।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষা ডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।