ঘুষ দিয়ে ফাঁসলেন শিক্ষা অধিদপ্তরের দুই উপপরিচালক - দৈনিকশিক্ষা

ঘুষ দিয়ে ফাঁসলেন শিক্ষা অধিদপ্তরের দুই উপপরিচালক

নিজস্ব প্রতিবেদক |

ঘুষদাতা দু'জনই বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা। দু'জনই মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের দুটি শাখার উপরিচালকের পদে রয়েছেন।  ঘুষদাতা এই দুই উপপরিচালকের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে সরকারি কলেজের প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবং সরকারি হাইস্কুলের শিক্ষক বদলির অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও এসএসসি-এইচএসসির প্রশ্নফাঁস, জিপিএ ফাইভ বিক্রি, মেডিকেলে প্রশ্নফাঁস ও বদলি, শিবির-ছাত্রদলপন্থী শিক্ষা ক্যাডারের জুনিয়র কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে শিক্ষাখাতে অস্থিরতা সৃষ্টি, সরকারি কলেজ শিক্ষকদের পদোন্নতি দেয়ার প্রলোভনে ব্যাচে ব্যাচে ইউনিট তৈরি এবং এমপিওভুক্তি করানোসহ বিভিন্ন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বউ পিটিয়ে জেলখাটার এবং ভাড়াকরা নারী নিয়ে বেইলি রোডের সরকারি বাসায় মাস্তি করারও অভিযোগ রয়েছে। তারা দুজনই কুখ্যাত বাড়ৈ সিন্ডিকেটের সদস্য। এই সিন্ডিকেটের প্রধান উপদেষ্টা সকাল দশটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত বাংলাদেশ সচিবালয়ের ৬ নং ভবনের ১৯ তলায় বসেন। ক্যাডার পরিচয়ে শিক্ষা কিন্তু বর্তমানে তিনি সরকারের উপসচিব। 

দুর্নীতির দূর্গখ্যাত মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরর মহাপরিচালকের দপ্তরকে নিজেদের মতো ব্যবহারের নিকৃষ্টতম উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন নিজেদের ‘মর্যাদাবান’ দাবি করে অহরহ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়া শিক্ষা অধিদপ্তরের এই দুই উপপরিচালক।

যা আছে আবেদনে: মহাপরিচালকর কাছে কয়েকমাস আগে করা আবেদনে একজন উপপরিচালক দাবি করেছেন, ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে তার ভাগ্নিকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে সরকারি মেডিকেলে বদলি করিয়ে দেয়ার জন্য মানিকগঞ্জের ঝিটকা খাজা রহমত আলী কলেজের প্রভাষক মজিবুর রহমান মিন্টুকে ১ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন। কিন্তু বদলি করে দিতে পারেননি মজিবর। টাকা ফেরত দেয়ার কথা বলে গত কয়েকবছর ধরে প্রতারণা করে আসছেন সেই বেসরকারি কলেজের শিক্ষক। 

অপর উপরিচালক তার শ্যালককে চাকরি দেয়ার জন্য মজিবুর রহমানকে আড়াই লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন। কিন্তু চাকরি দিতে পারেননি মুজিবুর। 

ঘুষ দেয়ার সাক্ষী ও মধ্যস্থতাকারী যারা: মানিকগঞ্জের ঝিটকা খাজা রহমত আলী ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মজিবুর রহমানকে ঘুষ দেয়ার সাক্ষী একই কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের প্রদর্শক আতাউর রহমান এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের আব্দুস সাত্তার ডিগ্রি কলেজের জীববিজ্ঞানের সহকারি অধ্যাপক মো: আতিকুর রহমান। 

ঘুষদাতা উপরিচালকদের পরিচয়:

শ্যালকের চাকরির জন্য ঘুষ দেয়া উপপরিচালক দীর্ঘদিন এনসিটিবিতে চাকরি করে বাড়ৈ  সিন্ডিকেটের সদস্য হিসেবে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে আয় করেছেন। মন্ত্রিত্ব রক্ষায় এবং সরকারের উপরিমহলের চাপে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিলে শিক্ষা প্রশাসনের বাড়ৈ সিন্ডিকেটের সদস্যদের ঢাকার বাইরে বদলি করেন স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এরই অংশ হিসেবে রংপুরের পীরগঞ্জে বদলি করা হলেও অতি গোপনে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে বদলি হয়ে শিক্ষা ভবনের ‘বেদরকারি’ উপপরিচালকের পদটিতে যোগ দেন তিনি। যোগদানের কয়েকমাসের মধ্যে নিজের কক্ষটিকে মাস্তিকক্ষ বানিয়ে ফেলেন। শিক্ষা ক্যাডারের ক্যাসিনো ‘পাপিয়াখ্যাত’ তোফার সঙ্গে সন্ধ্যায় আটকা পড়েন শিক্ষা অধিদপ্তরের পাঁচতলার নিজ কক্ষে। সরকারি কলেজের শিক্ষক খালেদ সাইফুল্লাহ তালাভেঙ্গে বের করার পর ঘটনা জানাজনি হয়। ছি: ছি: রব পড়ে যায় গোটা শিক্ষা প্রশাসনে। কিন্তু আজ অব্দি টিকে থেকে দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছেন কথিত সেই সৈয়দ। মাদরাসার জন্য আলাদা অধিদপ্তর থাকলেও শিক্ষা ভবনের এই বেদরকারি শাখায় থেকে নানা অপকর্মে লিপ্ত এই উপপরিচালক। নিজেকে ‘মর্যাদাবান’ দাবি করা শিক্ষা ক্যাডারের এই কর্মকর্তা ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাস থেকে বাড়ৈ সিন্ডিকেটের পুরনো সদস্যদের বাদ দিয়ে নতুনদের  খুশী করে চলছেন। কদিন পরপরই শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির দেয়ার খবর দেখা যায় তার ফেসবুকে। অধচ এমন তথ্য প্রকাশ তার এখতিয়ার বর্হিভূত। ফেসবুকে লেখার পর এই উপপরিচালককে ডেকে কষে ধমক দিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব। তারপর থেকে চুপ এই উপপরিচালক। 

অপর উপপরিচালক শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা হয়েও বিএনপি-জামাত আমলে বিএনপি নেতা ও বেসরকারি শিক্ষক সেলিম ভূইয়ার পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয় দিতেন। সাংবাদিকতার কার্ড ব্যবহার করতেন। বিনা অনুমতিতে এনজিওতে চাকরি করতেন। আজমান আন্দালিব নামে সেলিম ভুইয়াঁর পত্রিকায় লিখতেন। এই নামে একটি বই লিখে তা আবার নারী ও শিশু আদালতে গিয়ে অস্বীকারও করেছেন। অধ্যক্ষ সেলিম ভুইয়ার মামাতো ভাই পরিচয় দিতেন। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকার কবি নজরুল সরকারি কলেজে থাকাকালে প্রথম স্ত্রীকে পিটিয়ে জেলখাটলেও বরখাস্ত এড়িয়ে চলছেন অদ্যাবধি। গত বছর মার্চে তিনি বাড়ৈ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক পদে আসেন। তার বিরুদ্ধে চারটি ফৌজদারি ও যৌতুক মামলা চলমান। বেশিরভাগ সময় আদালতেই থাকেন।  প্রথম ও দ্বিতীয় স্ত্রীকে না  জানিয়ে অপর নারীর সঙ্গে মাস্তি করার সময় হাতেনাতে ধরা পড়েছেন একাধিকবার। বরখাস্ত ও বিভাগীয় দণ্ড পেয়েছেন একাধিকবার। কুমিল্লার নিজ গ্রামে নিজেকে শিক্ষা অধিদপ্তরের সচিব পরিচয় দেন। শিক্ষা ভবনের জামতলার কাছের ছোট একটি ভবনে বসেন তিনি। প্রায় সব সহকর্মী ও কর্মচারী বিরক্ত তার ওপর। প্রথম স্ত্রীকে পেটানো নিয়ে ডজন ডজন প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে গত কয়েকবছরে।     

দুই উপপরিচালক তাদের লিখিত আবেদনে মহাপরিচালকের কাছে দাবি করেছেন ‘ব্যাংক সুদসহ সাড়ে তিনলাখ টাকা ৮ বছরের প্রকৃত ক্ষতি নির্ধারণ করে সমুদয় উদ্ধার করে দিতে হবে।’  

আবেদন অনুযায়ী, একজন পরিচালকের নির্দেশে তদন্ত কমিটি গঠন করার উদ্যোগ নিয়েছেন অধিদপ্তরের বেসরকারি কলেজ শাখার একজন কর্মকর্তা। তিনিও শিক্ষা ক্যাডারেরই সদস্য।  আবেদনটি তার কাছেই আছে। 

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সিনিয়র কর্মকর্তারা দৈনিক শিক্ষাকে বলেছেন, এমন আবেদন পাওয়াামাত্রই দুই উপপরিচালকের বিরুদ্ধে আগে তদন্ত কমিটি করে শাস্তি দেয়া উচিত ছিল। কিন্তু তা না করা মানেই মহাপরিচালক ও কলেজ শাখার পরিচালকের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। 

শিক্ষা অধিদপ্তরেরই একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ঘুষ দেওয়া ও নেওয়া সমান অপরাধ।  

বেসরকারি শিক্ষক মজিবুর রহমান দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই এই দুই পরিচালক আমাকে  হুমকি দিচ্ছেন। কখনো বলেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষা অধিদপ্তর, সবই তাদের, টাকা ফেরত না দিয়ে উপায় নেই।’ 

মজিবুর বলেন, ‘ঘূষ আমি নেইনি, আমাকে এমপিওভুক্ত করার জন্য টাকা দিয়েছিলাম, কিন্তু করাতে না পারায় টাকা ফেরত চেয়েছি। এটাই আমার অপরাধ। এখন তারা তাদের মহাপরিচালক ও পরিচালককে আমার বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে চান। আমার বিরুদ্ধে আনীত ঘুষের অভিযোগ মিথ্যা।’ 

অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের চলতি দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম ফারুককে এ বিষয়ে জানতে চাইলে এড়িয়ে যান।   

হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034291744232178