পুরোনো ঘটনার জেরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও মারামারির ঘটনা ঘটেছে। আজ রোববার বিকেল পাঁচটার দিকে ক্যাম্পাসের শাহজালাল ও শাহ আমানত হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে। বর্তমানে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি থমথমে। তবে এদিনের সংঘর্ষে কেউ আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের সংগঠন চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার (সিএফসি) ও সিক্সটি নাইনের অনুসারীরা এই সংঘর্ষে জড়িয়েছেন। তাঁদের মধ্যে সিএফসির নেতা-কর্মীরা শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী। আর সিক্সটি নাইনের নেতা-কর্মীরা সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী। বর্তমানে সিএফসির নেতৃত্বে আছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক। সিক্সটি নাইনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন।
এবারের বিরোধের সূচনা সিক্সটি নাইনের এক কর্মী ছাত্রী হেনস্তার প্রতিবাদ জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে। ওই পোস্টের জেরে দুই পক্ষের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার রাত পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষের চার কর্মী আহত হন। তাঁদের মধ্যে তিনজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এদিকে আজকের ঘটনায় দুই পক্ষই একে অপরকে দোষারোপ করেছে। সিক্সটি নাইনের নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য সাইদুল ইসলাম বলেন, বিকেল পাঁচটার দিকে তাঁদের এক কর্মীকে সিএফসির কয়েকজন কর্মী ইট দিয়ে আঘাত করেছেন। এরপর তাঁরা সিএফসির নেতা-কর্মীদের প্রতিহত করেছেন। অপর দিকে সিএফসির নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সহসভাপতি আল আমিন রিমন বলেন, পৌনে পাঁচটার দিকে সিক্সটি নাইনের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসের জিলানি হোটেলের সামনে তাঁর ওপর হামলা চালান। ধস্তাধস্তি হয়। পরে তিনি সেখান থেকে সরে যান। শেষে পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিক্সটি নাইনের কর্মী ও বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী শিহাব আরমান বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শহীদ মিনার থেকে গোলচত্বর এলাকায় হেঁটে আসছিলেন। পথে সিএফসির প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের কর্মীরা তাঁকে মারধর করেন। সেখানে ছিলেন আরবি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরীসহ আরও বেশ কয়েকজন। পরে সিক্সটি নাইনের নেতা-কর্মীরা রাতে ক্যাম্পাসের শাহজালাল হলের সামনে এবং সিএফসির নেতা-কর্মীরা শাহ আমানত হলের সামনে জড়ো হন। এ সময় তাঁদের মধ্যে ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি হয়। তবে কেউ আহত হননি।
এ ঘটনার জেরে শুক্রবার দুপুরে আবার দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। পরে পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা গিয়ে দুই পক্ষকেই সরিয়ে দেন। সংঘর্ষকালে নাদিম হায়দার নামের সিক্সটি নাইনের এক কর্মীকে কুপিয়ে জখম করা হয়। আহত হন আরও দুজন। তাঁরা হলেন সিক্সটি নাইনের মাহমুদ রাফি ও সিএফসির আরাফাত রায়হান। তাঁদের তিনজনকেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে
গত ১৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী সিএফসির চার কর্মীর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে হেনস্তার অভিযোগ দেন। লিখিত অভিযোগে বলা হয়, তাঁরা দুজন ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে গেলে সিএফসির ওই চার কর্মী হেনস্তা করেন। এই চারজন হলেন আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. জুনায়েদ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রুবেল হাসান, দর্শন বিভাগের ইমন আহাম্মেদ ও আর এইচ রাজু।
এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে ১৭ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে পোস্ট দেন সিক্সটি নাইনের কর্মী শিহাব আরমান। তিনি শুক্রবার মুঠোফোনে বলেন, দুই ছাত্রীকে হেনস্তার ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন তিনি। এ নিয়ে পোস্টও দেন। মূলত এ ঘটনার জেরেই সিএফসির প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের নেতা-কর্মীরা তাঁকে মারধর করেছেন। এটি থেকেই সংঘর্ষের সূত্রপাত।
তবে সিএফসির নেতা-কর্মীদের দাবি, সিএফসির কর্মী তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বান্ধবীর সঙ্গে শহীদ মিনারে বসে ছিলেন। এ সময় তাঁর বান্ধবীকে শিহাব দুবার উত্ত্যক্ত করেন। পরে তাঁরা শিহাবকে প্রতিহত করেছেন। ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার জন্য তাঁকে মারধর করা হয়নি। জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক বলেন, সংঘর্ষের ঘটনা সমাধানের চেষ্টা চলছে।