চারু-কারুকলা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যোগ্য শিক্ষক চাই - দৈনিকশিক্ষা

চারু-কারুকলা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যোগ্য শিক্ষক চাই

মো. রহমত উল্লাহ্ |

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০২১ প্রকাশের পর থেকেই বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ও ব্যানার-পোস্টারে খুব বেশি চোখে পড়ছে নিম্নরূপ ভর্তির বিজ্ঞপ্তি: 

‘… টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে এক বছর মেয়াদী এডভান্স সার্টিফিকেট ইন ফাইন আর্টস (চারু-কারুকলা) এবং কম্পিউটার টেকনোলজি কোর্সে ভর্তি চলছে। এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চারু ও কারুকলা এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের সহকারী শিক্ষক পদে চাকরি প্রত্যাশী, যে কোন বিষয়ে স্নাতক-ফাজিল-অনার্স বা সমমান পাস শিক্ষার্থী বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এক বছর মেয়াদী এ দুই কোর্সে জানুয়ারি-ডিসেম্বর, ২০২১ এবং জুলাই-জুন ২০২১-২০২২ সেশনে ভর্তি হতে পারবেন।’ 
গত ৮ সেপ্টেম্বর দৈনিক শিক্ষাডটকম-এ প্রকাশিত এই বিজ্ঞপ্তিতে বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, প্রায় নয় মাস আগে থেকে শুরু হওয়া এবং প্রায় তিন মাস আগে থেকে শুরু হওয়া দুটি কোর্সে নিয়মিত শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। এক বছর মেয়াদী কোর্সের প্রায় নয় মাস চলে যাওয়ার পর নিয়মিত শিক্ষার্থী ভর্তি করা কীভাবে সম্ভব তা বোধগম্য নয়! এখন কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি হলে পরবর্তী তিন মাসে তাকে কীভাবে এক বছরের কোর্স করানো সম্ভব তাও বোধগম্য নয়। অবশ্য নয় মাস বিলম্বে ভর্তি করে যদি নয় মাস পরে কোর্স সমাপ্ত করা হয় তো সেটি যুক্তিযুক্ত হতে পারে।  চারু ও কারুকলা এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয় দুটি সম্পূর্ণ ব্যবহারিক। এসব বিষয়ে ক্লাস না করে বা অনলাইনে ক্লাস করে সঠিকভাবে কোর্স সম্পন্ন করা মোটেও সম্ভব নয়। 
অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, যথাযথ লেখাপড়া ও হাতে-কলমে শিক্ষা ছাড়াই সনদ দেয়ার একটা প্রক্রিয়া চলমান! তাই এর বাস্তবিক সত্যতা নিশ্চিত হওয়া জরুরি।


কেননা, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ নিয়ে শিক্ষক হওয়ার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে এই সনদ। তাই চাকরি প্রত্যাশীরা যে করেই হোক এই সনদ সংগ্রহে এখন ব্যতিব্যস্ত। এ দুটি কোর্সে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি সম্বলিত বিপুল সংখ্যক ব্যানার-পোস্টার, বিজ্ঞাপন ও ফোনে আসা এসএমএস দেখে মনে হচ্ছে, দ্রুত গজিয়ে উঠছে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান এবং বিদ্যমান অনেক প্রতিষ্ঠানে তড়িঘড়ি খোলা হচ্ছে এ দুটি কোর্স। এ দুটি কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি করা, পাঠদান করা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করার জন্য নিশ্চয়ই কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদন প্রয়োজন হচ্ছে। তাই কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের দেখা উচিত, প্রায় নয় মাস ও প্রায় তিন মাস চলে যাওয়ার পর কোর্স দুটিতে কীভাবে নিয়মিত শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়! ভর্তির পর বাস্তবে কত মাস শিক্ষা দিয়ে এই শিক্ষার্থীদের এক বছর মেয়াদি কোর্স শেষ করা হয়। 
আলোচিত এ সকল প্রতিষ্ঠানের যোগ্যতা কেমন তাও যাচাই করা প্রয়োজন। উল্লিখিত কোর্স দুটি পড়ানোর মতো পর্যাপ্ত যোগ্য শিক্ষক তাদের আছে কিনা, পাঠদানের উপযোগী অবকাঠামো আছে কিনা, ব্যবহারিক ক্লাস করার উপযোগী যন্ত্রপাতি ও ল্যাব আছে কিনা, যত সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে তত সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি করার অনুমতি আছে কিনা, যে পরিমাণ কোর্স ফি নেওয়া হচ্ছে তা যথাযথ হচ্ছে কিনা, নিয়মিত থিউরিটিক্যাল ও প্রাকটিক্যাল ক্লাস হচ্ছে কিনা, শিক্ষার্থীরা সে সকল ক্লাসে যথাযথভাবে অংশগ্রহণ করে কাঙ্খিত যোগ্যতা ও দক্ষতা অর্জন করছে কিনা ইত্যাদি বিষয় নিশ্চিত হয়ে যথাযথ মূল্যায়নের মাধ্যমে সনদ প্রদান করা উচিত।

 এক বছর মেয়াদী এডভান্স সার্টিফিকেট কোর্স  (থিওরিটিক্যাল ও প্রাকটিক্যাল) যদি তিন মাসে সম্পন্ন করে সনদ দেওয়া হয় তো তারা কেমন শিক্ষিত হবেন? এরপর এমন সনদধারীরা যদি সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পান তো তারা কেমন যোগ্য শিক্ষক হবেন? শিক্ষকতায় যদি আসতে পারেন তো তারা কেমন শিক্ষার্থী তৈরি করবেন? একজন শিক্ষক অযোগ্য হলে তো তিনি সারাজীবনে তৈরি করেন অসংখ্য অযোগ্য নাগরিক-কর্মী! বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০২১ অনুসারে চারু ও কারুকলা এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয় দুটিতে সারাদেশে নিয়োগ হবে বিপুলসংখ্যক শিক্ষক। সম্ভাব্য এই শিক্ষকরা যোগ্য না হলে ব্যাহত হবে সরকারের উদ্দেশ্য। সঠিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। 
যথাযথ যোগ্যতা যাচাই না করে সনদ দেওয়া হলে, প্রায় শতভাগ আবেদনকারী অযোগ্য হলে এবং তাদের মধ্য থেকেই বিপুলসংখ্যক লোক নিয়োগ দিতে হলে, যতই বাছাই করা হোক, কাঙ্ক্ষিত যোগ্য শিক্ষক পাওয়া যাবে কীভাবে? শিক্ষক যোগ্য না হলে কাঙ্খিত শিক্ষা নিশ্চিত হবে কীভাবে? তাই এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সজাগ দৃষ্টি ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ কাম্য।  

লেখক: শিক্ষক ও কলাম লেখক 

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0068449974060059