চারুকলার জন্য ‘বিশেষ’ ব্যবস্থা, ‘ঘ’ ইউনিট নিয়ে শিক্ষকদের মতবিরোধ - দৈনিকশিক্ষা

চারুকলার জন্য ‘বিশেষ’ ব্যবস্থা, ‘ঘ’ ইউনিট নিয়ে শিক্ষকদের মতবিরোধ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় চারুকলা অনুষদের জন্য ‘বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে’, তবে ‘ঘ’ ইউনিট থাকবে কি না, তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষকদের মতবিরোধ তৈরি হয়েছে।

ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের ‘ভোগান্তি লাঘবের জন্য’ ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে ‘ঘ’ ইউনিট ও ‘চ’ ইউনিট বাতিল করে সব মিলিয়ে বিজ্ঞান, কলা ও ব্যবসা শিক্ষা-এই তিন ইউনিটে পরীক্ষা নিতে গত ৮ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমিটির সভায় প্রস্তাব করেন উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান।

সভায় কয়েকজন ডিন সেই প্রস্তাবে সম্মতি দিলে বিভাগ পরিবর্তনের ‘ঘ’ ইউনিট এবং চারুকলার ‘চ’ ইউনিট বাতিলের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটের সভায় তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান উপাচার্য।

তবে সংশ্লিষ্ট অনুষদের শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা না করে এবং সভার আলোচ্যসূচিতে বিষয়টি না রেখে হঠাৎ করে এমন প্রস্তাবে সমালোচনার মুখে পড়েছেন উপাচার্য।

এই প্রস্তাবকে অগ্রহণযোগ্য বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের লেখালেখি, বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের বিরোধিতা ও সংশ্লিষ্ট অনুষদের শিক্ষকদের আপত্তিতে এখন সুর পাল্টাচ্ছেন উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান ।

এখন তিনি বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় চারুকলা অনুষদসহ বিশেষায়িত বিভাগের জন্য ‘বিশেষ পদ্ধতিতে’ পরীক্ষা নেওয়া হবে।

অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বৃহস্পতিবার বলেন, “তিনটা ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা হবে, একথা আমরা কখনও বলিনি। তিনটা ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া যায় কি না, সেটা বলা হয়েছে।

“আর বিশেষায়িত অনুষদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা তো অবশ্যই লাগবে। আমাদের এই সিদ্ধান্তগুলো তো সব সামনে নেওয়া হবে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকে ভর্তির ক্ষেত্রে উচ্চ মাধ্যমিকের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের ‘ক’ ইউনিটে, মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের ‘খ’ ইউনিটে এবং ব্যবসা শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীদের ‘গ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হত।

উচ্চ মাধ্যমিকের বিভাগ পরিবর্তনের জন্য বিজ্ঞান, কলা ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ইউনিটে আবেদনের যোগ্যতাপূরণ সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটে আবেদন করতে পারেন।

অন্যদিকে উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান, কলা ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের যারা চারুকলা ভর্তি হতে চান, তাদেরকে ‘চ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত, নৃত্যকলা এবং থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগে মূলত খ ইউনিটের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। ভর্তি পরীক্ষার বহুনির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা পরে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে তাদের পারদর্শিতা দেখানোর মাধ্যমে বিভাগগুলোতে ভর্তির সুযোগ পান।

উপাচার্য বলেন, “সংগীত, নৃত্যকলা ও নাট্যকলায় আমরা যেভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করি, চারুকলার জন্যও সে ধরনের পদ্ধতিই গ্রহণ করা হবে। এগুলো যেহেতু সৃজনশীল বিশেষায়িত ক্ষেত্র, ফলে এগুলোতে সেভাবেই ব্যবস্থা রাখতে হবে। ডিনরা আলোচনা করে কৌশল বের করবেন।”

এদিকে ডিনস কমিটির সভার ওই প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়ে অনুষদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে আলাদা পরীক্ষা নিতে চান সামাজিক বিজ্ঞান ও চারুকলার অনুষদের শিক্ষকরা। ‘ঘ’ ও ‘চ’ বাতিল হলে বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা যাচাইসহ অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের চাহিদার আলোকে যোগ্য শিক্ষার্থী বাছাইয়ে জটিলতা তৈরি হবে বলে মনে করছেন তারা।

সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, “ঘ ইউনিটের পরীক্ষা বাতিলের বিষয়টি সভার এজেন্ডার মধ্যে ছিল না। সভার শেষের দিকে হুট করে উপাচার্য তিনটি ইউনিটে পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তাব করেন। তখন কলা ও আইন অনুষদের ডিন অত্যন্ত উৎসাহ নিয়ে সম্মতি দেন। কিন্তু আমি এই প্রস্তাবে একমত হইনি। কারণ অনুষদের শিক্ষকদের সাথে পূর্ব আলোচনা ছাড়াইে এধরনের প্রস্তাবে অগ্রহণযোগ্য।

“পরে আমরা ফ্যাকাল্টি মিটিং করেছি। আমাদের শিক্ষকরা এতে খুবই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন যে হুট করে, তড়িঘড়ি করে কেন এই সিদ্ধান্ত? ফ্যাকাল্টি মিটিংয়ে সর্বসম্মতিক্রমে আলাদা পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে মতামত দিয়েছেন শিক্ষকরা। সেটা ঘ ইউনিট থাকবে, না অন্য নাম হবে সেটা ভিন্ন বিষয়।তবে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভর্তি পরীক্ষা নেবে এবং কীভাবে নেবে, স্বতন্ত্র ইউনিট হবে কি না, সেটা আমরা পরে বলব।”

‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষা না হলে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে মনে করেন অধ্যাপক সাদেকা হালিম।

তিনি বলেন, “আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ এক বছর চান্স না পেলে পরের বছরও ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারত। এখন যেহেতু সেটা নাই, সেখানে নিজ বিভাগ ছাড়াও সমন্বিতভাবে ঘ ইউনিটে আরও একটা ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারে। এখন সেই ইউনিট যদি তুলে দেওযা হয়, কেউ নিজ ইউনিটের পরীক্ষায় একবার খারাপ করলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার স্বপ্ন তার শেষ হয়ে যাবে।

“তাছাড়া অনেক শিক্ষার্থী এসএসচি ও এইচএসসিতে পড়া আসা বিভাগ পরিবর্তন করে অন্য বিভাগে ট্রান্সফার হতে চায়। শিক্ষার্থীদের এই চয়েজে এন্ড অপশন তো বন্ধ করে দিতে পারি না “

বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক কাবেরী গায়েন ফেইসবুকে লিখেছেন, “ইউনিট থাকা মানে শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয়বারের মতো পরীক্ষায় বসার সুযোগ। কলা, বিজ্ঞান, বাণিজ্য- মোটা দাগে এই তিন অনুষদের বাইরেও অর্থনীতি, সমাজ, রাষ্ট্র, যোগাযোগ, উন্নয়ন, জনপ্রশাসন অর্থাৎ সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার নানা স্তরের পাঠ ও অনুধ্যানের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে পারা। সারা পৃথিবীতে যখন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অন্তর্গত বিষয়গুলোকে অধিকতর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে, এমনকি বিজ্ঞানের অনেক বিষয়কে সামাজিক বিজ্ঞানের সঙ্গে সংযুক্ত করে পড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমিটির এই সিদ্ধান্তে বিস্মিত হয়েছি। ঘ ইউনিটে পরীক্ষা অত্যন্ত পুরনো। হঠাৎ এমন কী ঘটলো যে এক মিটিংয়ে ডিনস কমিটি এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো! বিভাগগুলোর সঙ্গে আলোচনা না করেই এক মিটিংয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়! আশ্চর্য!”

চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, “আমরা ৭২ বছর ধরে চারুকলার জন্য আলাদা পরীক্ষা নিচ্ছি। চ ইউনিট নামে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে মাত্র পাঁচ-ছয় বছর ধরে। ইউনিট না থাকা অবস্থায়ও তো আমাদের আলাদা পরীক্ষা হয়েছে। কিন্তু এখন যদি ইউনিট বাতিল করা হয়, আমাদের তো আলাদা পরীক্ষা নেওয়া ছাড়া শিক্ষার্থী ভর্তি নিতে পারব না।

“আমাদের বিষয়টা সম্পূর্ণ আলাদা। অন্য ইউনিটের সাথে আমাদের পরীক্ষা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এখানে ভর্তির সময় পুঁথিগত বিদ্যার চেয়ে সৃজনশীলতার ওপরই বেশি জোর দেওয়া হয়।”

তবে চারুকলা, নৃত্যকলা, সংগীত নাট্যকলার বিষয়গুলোকে সৃজনশীল উল্লেখ করে এসব বিষয়ে কীভাবে মেধাবীদের মূল্যায়ন করা যায়, তা নিয়ে কৌশল বের করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান তিনি।

“এ বিষয়টা নিয়ে আমি কোনো কথাই বলিনি সভায়। কারণ এবছর তো আর এটা বন্ধ হচ্ছে না। একটা বছর আরও সময় আছে। আমরা সৃজনশীল বিষয়গুলো নিয়ে আলাদা পরীক্ষা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে কথা বলব।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, “আমি ডিনস কমিটির সভায় ছিলাম না। তবে যে প্রস্তাবটা এসেছে,এটা হুট করে নয়। উচ্চ মাধ্যমিকের বিভাগ অনুযায়ী পরীক্ষার বিষয়টি নিয়ে ২০১৮ সাল থেকে আলোচনা চলছিল। এখন প্রস্তাব আকারে এসেছে। এটা নিয়ে আরও আলোচনা-পর্যালোচনা হবে্।”

বিশ্ববিদ্যালয় উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ বলেন,“বিষয়টা নিয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে আলোচনা করে ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।”

হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037689208984375