ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে কয়েক মাস ধরেই বেশ অস্থিরতা বিরাজ করছে। বিভাগটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক কামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে কয়েকজন শিক্ষকের উত্থাপিত অভিযোগকে ঘিরে এ অস্থিরতা। চেয়ারম্যানের বিভিন্ন অনিয়মের তদন্ত দাবি করে গত তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে উপাচার্যের কাছে তিনটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই শিক্ষকরা। কর্তৃপক্ষ অভিযোগ আমলে না নেয়ায় গত রোববার থেকে কর্মবিরতিতে গিয়েছেন অভিযোগকারী শিক্ষকরা।
জানা যায়, গত ২০ জুন মনোবিজ্ঞানের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিভাগটির সাতজন শিক্ষক একটি অভিযোগপত্র জমা দেন। অভিযোগপত্রটি সিন্ডিকেট সভায় উত্থাপনের মাধ্যমে ১২টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের তদন্ত ও প্রতিকার চান শিক্ষকরা। এর দুই মাস পর ১৪ আগস্ট চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত আরো কিছু অভিযোগের হালনাগাদ তথ্য তুলে ধরে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুনরায় অনুরোধ জানিয়ে আরেকটি পত্র দেন শিক্ষকরা। দুটি অভিযোগপত্র দেয়ার পরও কোনো সমাধান পাননি শিক্ষকরা। উল্টো গত সপ্তাহে একাডেমিক কমিটির এক সভায় অভিযোগকারী একজন শিক্ষককে বিভাগের কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এমন পরিস্থিতিতে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে কর্মবিরতিতে গিয়েছেন অভিযোগকারী সব শিক্ষক।
অভিযোগকারী শিক্ষকরা বলছেন, বিভাগের চেয়ারম্যানের দুর্নীতি ও অন্যায় কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে তারা কর্মবিরতিতে যেতে বাধ্য হয়েছেন। গত মঙ্গলবার উপাচার্যকে দেয়া সর্বশেষ চিঠিতে তারা বলেন, আমরা মনোবিজ্ঞান বিভাগের সাতজন শিক্ষক বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিনের দুর্নীতি ও অন্যান্য অন্যায় কর্মকাণ্ড বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কর্তৃক তদন্তপূর্বক বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আপনাকে পরপর দুটি অনুরোধপত্র দিয়েছিলাম। কিন্তু সে অনুযায়ী দৃশ্যত কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় বিভাগের চেয়ারম্যান একের পর এক তার অন্যায় কর্মকাণ্ড চালিয়েই যাচ্ছেন।
এরই অংশ হিসেবে ৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত একাডেমিক কমিটির সভায় তার সঙ্গে সমঝোতা না করার কারণে তিনি মনোবিজ্ঞান বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক অধ্যাপক ড. একেএম রেজাউল করিমকে বিভাগীয় সব একাডেমিক কার্যকলাপ থেকে সাময়িক বিরত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স পরিপন্থী। এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেয়া পর্যন্ত এবং ড. রেজাউল করিমকে বিধিবহির্ভূতভাবে বিভাগীয় একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত অনতিবিলম্বে বাতিল না করা পর্যন্ত আমরা নিম্নস্বাক্ষরকারী শিক্ষকরা বিভাগীয় একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তবে চলমান পরীক্ষা, থিসিস, রিসার্চ প্রজেক্ট ও পরীক্ষাগুলো তত্ত্বাবধান, খাতা মূল্যায়ন ও ফলাফল প্রদান কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে বলে শিক্ষকরা উল্লেখ করেন।
শিক্ষকদের অভিযোগ ও কর্মবিরতি বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকদের মধ্যে আন্তঃসম্পর্কের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। পারস্পরিক কিছু অভিযোগ বিষয়ে আমি জেনেছি। সংশ্লিষ্ট অনুষদের ডিনকে বিষয়টির সমাধানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
ডিন অধ্যাপক একেএম মাহবুব হাসানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা সমস্যাটির সমাধান চাই।
তবে উপাচার্য ও ডিন গৃহীত পদক্ষেপে সন্তুষ্ট নন অভিযোগকারী শিক্ষকরা। এ বিষয়ে একজন অভিযোগকারী শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এটা কারো সঙ্গে কারো মনোমালিন্যের বিষয় নয় যে আলাপ করে সমাধান করা হবে। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তোলা হয়েছে। আমরা সে অভিযোগগুলো সিন্ডিকেটে উত্থাপন করে তদন্তমূলক ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করেছি। কিন্তু আমরা যতদূর জেনেছি, সিন্ডিকেটের কোনো সভায় এ বিষয়টি এজেন্ডা আকারে আনা হয়নি। তার মানে আমাদের উত্থাপিত অভিযোগ আমলেই নেয়া হচ্ছে না। উল্টো অবৈধভাবে একজন শিক্ষককে একাডেমিক কার্যক্রম থেকে সরানো হলো। অর্থাৎ চেয়ারম্যান ভয় দেখিয়ে আমাদের থামাতে চান। আমরা চাই, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ বিষয়ে ন্যায্য পদক্ষেপ গ্রহণ করুক।
অন্যদিকে বিভাগের চেয়ারম্যান দাবি করছেন, গুটিকয়েক শিক্ষক তাদের ব্যক্তিস্বার্থকে বিভাগের ওপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তা মেনে না নেয়ায় তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলছেন। এ প্রসঙ্গে বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, আমাদের বিভাগের একাডেমিক কমিটির সদস্য সংখ্যা ২০। এখন দু-তিনজনের সিদ্ধান্ত ওপরে থাকবে নাকি বাকিদের? আমরা সবাই মিলে যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তা তারা মেনে নিতে না পেরে নানা অভিযোগ তুলছেন। দু-একজন শিক্ষক কী বললেন, তাতে আমাদের কিছু আসে-যায় না। বরং তারাই অনিয়ম করছেন। অনিয়ম করায় একজনকে বিভাগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। উপাচার্যকে সেটা চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে।