ছাত্রকে সঙ্গে নিয়ে এক নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগে নওগাঁর পোরশার বড় গুন্দইল দাখিল মাদরাসার ইবতেদায়ি মৌলভী তবিবুর রহমানকে (৪০) সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রাক্তন এক শিক্ষার্থীকে সঙ্গে নিয়েই এক দেহ ব্যবসায়ী নারীর সঙ্গে অনৈতিক কর্মকণ্ডের জড়ানোর অভিযোগ ছিলো তার বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে গত ১ সেপ্টেম্বর দৈনিক শিক্ষাডটকমে ‘শিক্ষার্থীকে নিয়ে নারীর সঙ্গে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে শিক্ষক!’ শীরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিলো। এ ঘটনায় পৃথক দুটি অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্তে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। রোববার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে মাদরাসার সুপার।
জানা গেছে, গত ১৮ আগস্ট দিবাগত রাতে প্রাক্তন এক ছাত্রকে সঙ্গে নিয়েই এক দেহ ব্যবসায়ী নারীর সঙ্গে অনৈতিক কর্মকণ্ডের জড়ান বড় গুন্দইল দাখিল মাদরাসার ইবতেদায়ি মৌলভী তবিবুর রহমান। এ ঘটনা গ্রামের কিছু লোক টের পেলে তার বাড়ি পাহারায় বসে। তারা বাড়ি থেকে বের হয়ে এলে সেই নারীসহ শিক্ষক তবিবুরকে হাতেনাতে ধরে ফেলে এলাকাবাসী। লোকজনের উপস্থিতিতে ওই নারীসহ তার স্বীকারোক্তি মৌখিকভাবে শুনে সে রাতে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়। বিষয়টি ২০ আগস্ট এলাকাবাসী ও গত ২১ আগস্ট ওই মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারীরা মাদরাসার সুপার ও সভাপতি বরাবর পৃথক দুটি অভিযোগ দিয়েছিলেন।
এ ঘটনা যাচাইয়ের জন্য অভিভাবক সদস্য মো. মঞ্জুরুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলো মাদরাসা কর্তৃপক্ষ। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, ওই মাদ্রাসার সহকারী সুপার মো. মোদাচ্ছের আলী ও ইবতেদায়ি প্রধান মো. আব্দুল হালিম। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে তদন্ত কমিটিকে।
বরখাস্তের সত্যতা নিশ্চিত করে মাদরাসার সুপার মো. নুরুজ্জামান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে শোকজ করা হলে সে জবাব দেয়। তার দেয়া জবাব গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্তক্রমে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে মাদরাসার সভাপতি মো. সাদেকুর রহমান দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে বলেন, এই শিক্ষক এর আগেও এরকম অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়েছে। এবারে এলাকাবাসী তাকে হাতেনাতে ধরার পরে লিখতভাবে অভিযোগ দিলে তাকে শোকজ করা হয়। তার দেয়া শোকজের জবাব সন্তষজনক না হওয়ায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. ওয়েজেদ আলী মৃধা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ওই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করে আমাকে অনুলিপি দিয়েছে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে এলাকায় গেলে স্থানীয় মো. মহসিন ও মমিনসহ অনেকে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, মাদরাসায় কর্মরত ইবতেদায়ি মৌলভী মো. তবিবুর রহমান গত ১৮ আগস্ট দিবাগত রাতে তার নিজ বাড়িতে এক দেহ ব্যাবসায়ী নারীর সঙ্গে তার প্রাক্তন ছাত্রকে নিয়ে অনৈতিক সম্পর্কে জড়ান। ঘটনাটি জানতে পেরে তার বাড়ি পাহারা দেয়া হয় এবং তারা বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তায় এলে সেই নারীসহ তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলে হয়। এসময় ওই মাদরাসার আরেক শিক্ষক মাসুদুর রহমানের অনুরোধে ও ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাসে লোকজনের উপস্থিতিতে ওই নারীসহ তার স্বীকারোক্তি মৌখিকভাবে শুনে তাদেরকে ছেড়ে দেয়। সে ইতোপূর্বে তার এক ছাত্রীকে মাদরাসার শ্রেণিকক্ষে প্রাইভেট পড়ানোর সময় একা পেয়ে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। সে অবস্থায় গ্রামবাসী তাদের দুইজনকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে তাদের দুজনের বিয়ে দিয়ে দেয়। এছাড়া সে আরও নারী কেলেঙ্কারীর ঘটনা ঘটিয়েছে।
এ ঘটনাটি নিয়ে কথা বললে প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষক মাসুদুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ঘটনার দিন রাত আনুমানিক ৩টার দিকে আমার সহকর্মী তবিবুর রহমান আমাকে ফোন দিয়ে ঘটনাস্থলে যেতে বলে। আমি সেখানে গিয়ে দেখি গ্রামের বেশ কিছু লোকজন তাকে একটি মেয়েসহ আটকে রেখেছে। আমি সেখানে গিয়ে সে এবং তার সঙ্গে থাকা ওই মেয়ের স্বীকারোক্তি নেই। সেসময় আমার সহকর্মীর অনুনয়-বিনয়ে গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে তাকে ছাড়িয়ে আনি।
এ বিষয়ে বরখাস্তকৃত ইবতেদায়ী জুনিয়র মৌলভী মো. তবিবুর রহমানের মুঠোফোনে দৈনিক শিক্ষাডটকমের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ফোন কেটে দেন।