জনস্বাস্থ্য শিক্ষা বাধ্যতামূলক করুন - দৈনিকশিক্ষা

জনস্বাস্থ্য শিক্ষা বাধ্যতামূলক করুন

দৈনিক শিক্ষা ডেস্ক |

র্দেশনাগুলো গভীরভাবে আলোচনার দাবি রাখে। শুক্রবার (১০ জুলাই) জনকণ্ঠ পত্রিকার এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধনটি লিখেছেন ড. মোঃ তাজউদ্দিন সিকদার।

সবচাইতে কার্যকরী দিক নির্দেশনাগুলো দিয়েছেন গত ২৫ মার্চ রাতে, যেখানে বিশ্বব্যাপী লকডাউন এর পদক্ষেপকে করোনা প্রতিরোধে আমাদের দ্বিতীয় সুযোগ হিসেবে বলেছেন। সত্যিকার অর্থেই তাই। আমরা প্রথম সুযোগ হাতছাড়া করেছি আর এখন দ্বিতীয় সুযোগকে কাজে লাগাতে না পারলে তৃতীয় সুযোগ কত মূল্য দিয়ে পেতে হবে সেই প্রশ্ন অনেক বড় এবং ভয়াবহ। তিনি এই দ্বিতীয় সুযোগকে কার্যকরী করতে ৬টি সুপারিশ করেছেন। 

এক- স্বাস্থ্যসেবা ও জনস্বাস্থ্যে জনবল বাড়ানো ও প্রশিক্ষণ; দুই- প্রতিটি সন্দেহভাজন রোগী শনাক্তে কার্যকর ব্যবস্থা বাস্তবায়ন; তিন- পরীক্ষার সরঞ্জাম উৎপাদন, সক্ষমতা ও সহজলভ্যতা বাড়ানো; চার- আইসোলেশন ও চিকিৎসার জায়গা চিহ্নিত করা ও পর্যাপ্ত প্রয়োজনীয় উপকরণ নিশ্চিতকরণ; পাঁচ- রোগীর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত ও কোয়ারেন্টাইন করা; ছয়- সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ও দমনে সরকারের পুরো ব্যবস্থার পুনরায় মনোযোগী হওয়া। একটু লক্ষ্য করলেই বোঝা যায় পরামর্শগুলো সর্বজনীন। অর্থাৎ প্রতিটি সংক্রামক ব্যাধি সম্পর্কিত স্বাস্থ্যগত দুর্যোগেই এই ছয়টি বিষয় আমাদের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে এবং তা প্রথম সুযোগেই নিশ্চিত ভাবে করবে।

জনস্বাস্থ্যের শিক্ষক হিসেবে আমি শুধু প্রথম পরামর্শের উপরে দৃষ্টিপাত করছি। প্রথমত, এই স্বাস্থ্যসেবা ও জনস্বাস্থ্য সংিশ্লষ্ট জনগণ বলতে আমরা কি বুঝি? এরা কারা? কিভাবে সেবা দেয়? কোথায় এবং কখন দেয়? প্রশ্নগুলোর উত্তর বোঝা খুবই জরুরী। জনবল বাড়ানো এবং প্রশিক্ষণের বিষয়ে পরে আসছি। আলোচ্য পরামর্শটি নিঃসন্দেহে সকল ধরনের জাতীয় ও বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট সঙ্কট এবং দুর্যোগকালীন সময়ে করণীয়র তালিকায় সবসময় এবং সর্বপ্রথম স্থান পাওয়ার যোগ্য।

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বাংলাদেশে এই মুহূর্তে সকল ডাক্তার, নার্স স্বাস্থ্যকর্মীসহ অনেকেই এখন এই জনবলের অন্তর্ভুক্ত যারা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে, প্রশিক্ষণসহ কিংবা প্রশিক্ষণ ছাড়া কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু তারা আদৌ বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা প্রধান কর্তৃক কথিত স্বাস্থ্যসেবা ও জনস্বাস্থ্য জনবল এর আওতায় পড়েন না। তারা পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থার একটি বিশেষ শাখার প্রতিনিধিত্ব করেন। যাকে বলা হয় টারশিয়ারী হেলথ সার্ভিসেস অর্থাৎ হাসপাতাল কেন্দ্রিক স্বাস্থ্যসেবা।

মানুষ যখন রোগগ্রস্ত হয় তখন হাসপাতালের দ্বারস্থ হয় আরোগ্য লাভের জন্য। আর রোগগ্রস্ত হয়ে হাসপাতালে যাবার আগেই প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলে মোকাবেলা করাই স্বাস্থ্যসেবা এবং জনস্বাস্থ্যের মূল নীতি। আজ যেই মহান চিকিৎসকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা মোকাবেলায় কাজ করছেন তারা সকলেই এই একই কথা বলবেন। তারা নিশ্চিত বলবেন যে জনস্বাস্থ্যবিষয়ক কাজ আর তাদের কাজ এক নয়। মূল কাজ হচ্ছে কমিউনিটি লেভেলে একটি অবিচ্ছিন্ন সুন্দর স্বাস্থ্য-কাঠামো তৈরি করা যাতে পুরো দেশের জনগণের স্বাস্থ্য ঝুঁকি হ্রাস ও সুস্বাস্থ্যের নির্ভুল ফর্মূলা থাকবে। গেব্রেয়াসুস স্বাস্থ্যসেবা এবং জনস্বাস্থ্য জনবল বলতে এটিই বুঝিয়েছেন।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার পাশাপাশি যে প্রতিষ্ঠানটির তথ্য-উপাত্ত, গবেষণালব্ধ বিশ্লেষণ এবং দিকনির্দেশনা সারা

বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্য তার নাম জন হপকিনস ইউনিভার্সিটির স্কুল অব পাবলিক হেলথ। কোভিড-১৯ মোকাবেলায় এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি নিরলস কাজ করে চলছে। আমাদেরও রয়েছে অনেক ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কেন আমরা বৈশ্বিক দৃষ্টান্তকে উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করব না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রধান তার পরামর্শগুলোর ভিতরে সর্বপ্রথম স্বাস্থ্যসেবা ও জনস্বাস্থ্যের জনবল বাড়ানোর কথা বলেছেন, তাদের প্রশিক্ষণের কথা বলেছেন। উক্ত পরামর্শে প্রাধান্য দিন এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কিছু সুদূরপ্রসারী এবং দূরদর্শীমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।

এক- সকল সরকারী এবং বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিক্যাল কলেজগুলোতে জনস্বাস্থ্য শিক্ষা বাধ্যতামূলক করুন। বিজ্ঞানভিত্তিক সকল সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথ প্রতিষ্ঠা করুন। ইউজিসি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। এখনই সময়, স্বল্প পরিসরে হলেও শুরু করতে হবে।

স্নাতকোত্তর শিক্ষার পাশাপাশি স্নাতক পর্যায়েও কারিকুলাম ডেভেলপ করে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে হবে যা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অত্যন্ত সফলভাবে গত ৯ বছর যাবত করে আসছে। জনস্বাস্থ্য শিক্ষার বিভিন্ন ডিসিপ্লিন এবং বিষয় আছে। সুতরাং, বিষয়ভিত্তিকভাবে এবং সক্ষমতার বিচারে বিশ্বাবিদ্যালয়গুলোকে আলাদা করা যেতে পারে। এজন্য প্রয়োজন একটি টাস্কফোর্স গঠন করা। ইউজিসিকে উদ্যোগী হতে হবে।

সরকারী নির্দেশনার অপেক্ষায় না থেকে ইউজিসিকে কর্তৃত্বপরায়ন হতে হবে। মোট জনসংখ্যার অনুপাতে প্রয়োজনীয় জনস্বাস্থ্য কর্মীর সংখ্যা বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন সংখ্যা বণ্টন করতে হবে। সরকারী কর্মকমিশন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে এ সকল গ্র্যাজুয়েটকে চাকরি নিশ্চিত করতে হবে। ভবিষ্যত রোগ প্রতিরোধে জনস্বাস্থ্য জনবলের বিকল্প এই মুহূর্তে আর কিছুই নেই যা বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা প্রধান অত্যন্ত সুনিপুণভাবে উপলব্ধি করেছেন।

দুই- এই সরকারের আমলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পঠিত সকল বিষয়ের সঙ্গে বাংলা শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এটি প্রশংসাযোগ্য একটি পদক্ষেপ। পাশাপাশি ইংরেজী এবং কম্পিউটার শিক্ষার একটি বেসিক কোর্স অধিকাংশ বিভাগেই পঠিত হয়। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই তালিকা আরও লম্বা। মূল লক্ষ্য হলো নিজ বিষয়ের বাইরে গিয়ে জীবনমুখী এবং রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ কিছু বিষয়ের শিক্ষা গ্রহণ। এটাকে জেনারেল এডুকেশন (জিইডি) অর্থাৎ সাধারণ শিক্ষা কোর্সও বলা হয়। বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠিত বিষয়গুলোর পাশাপাশি বাধ্যতামূলকভাবে জনস্বাস্থ্য শিক্ষার একটি পূর্ণ কোর্স রাখা যেতে পারে।

তিন- আইইডিসিআরের বিশ্বস্ত সহযোগী হতে পারে অনেক প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে আগ্রহী হতে হবে। সরকারী-বেসরকারীভাবে বাংলাদেশে একশটিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যেখানে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, জিনবিজ্ঞানী, মাইক্রোবায়োলজিস্ট, ভাইরোলজিস্ট রসায়নবিদ, ফার্মাসিস্টসহ শত শত শিক্ষক এবং গবেষক রয়েছে। আমি প্রায় নিশ্চিতভাবে জানি প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রায় প্রত্যেকটিতে এমন গবেষণাগার ও গবেষক রয়েছে যেখানে এবং যারা এই ভাইরাসটি শনাক্তকরণে সমর্থ।

আরটি-পিসিআর প্রায় সব গবেষণাগারে আছে। কিছু প্রাইমার, প্রব এবং গবেষণাগারের বায়োসেফটি লেবেল ৩ হলে এখানে রোগ নির্ণয় সম্ভব। তা সম্ভব না হলেও এই বিশাল জনশক্তি আইইডিসিআরকে রোগ নির্ণয়ে সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী সহযোগিতা করতে পারে। সরকারকে আন্তরিক হতে হবে এবং এই সংক্রান্ত গবেষণায় পারদর্শী গবেষকদের একটি তালিকা করতে হবে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কাজে লাগাতে হবে।

চার- জনগণের সার্বিক সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত না করে একটি জাতির উন্নয়নশীল কিংবা উন্নত হওয়ার বাস্তবতা অনেকটাই অলীক ও অর্থহীন। বিশ্বের অনেক দেশে ১৮-২১ বছর বয়সের সময় কিংবা পরে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক। আমরা ভাগ্যবান যে এই প্রশিক্ষণ আমাদের নিতে হয় না। প্রশিক্ষণ ছাড়াই আমরা এদেশকে নয় মাসে স্বাধীন করেছি। কিন্তু সেখানে শক্র দৃশ্যমান ছিল। অদৃশ্য শক্র রোগ জীবাণু- ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে যুদ্ধটা একটু অন্যরকম।

প্রকৃত জ্ঞান, পরিচ্ছন্ন জীবনাচার, অভিজ্ঞতা এবং করণীয় জানা অত্যন্ত প্রয়োজন এই যুদ্ধে, যার আয়ত্তকরণ নিয়মিত প্রশিক্ষণের মাধ্যমেই সম্ভব। বিপুল জনগোষ্ঠীর এই দেশের সকলকে বয়সভিত্তিকভাবে কিংবা শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে কিংবা জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে বিভিন্ন মেয়াদে স্বাস্থ্যসেবা ও জনস্বাস্থ্যবিষয়ক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করা।

আমি নিশ্চিত, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সারাদেশে এখন সর্বসাধারণের মানসিকতায় আতঙ্কের পাশাপাশি একটা মানসিক দৃঢতাও কাজ করছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের সর্বজনীন ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা রাখতে হবে যাতে ভবিষ্যত যে কোন স্বাস্থ্যঝুঁকি সফলতার সঙ্গে মোকাবেলা করা যায়। এর অংশ হিসবে বাধ্যতামূলক জনস্বাস্থ্য শিক্ষার বিকল্প আর কিছুই নেই।

লেখক : ড. মোঃ তাজউদ্দিন সিকদার, সভাপতি ও সহযোগী অধ্যাপক,

পাবলিক হেলথ এ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.02220606803894