জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস পরিবর্তনের ইঙ্গিত - দৈনিকশিক্ষা

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস পরিবর্তনের ইঙ্গিত

মাছুম বিল্লাহ |

শিক্ষামন্ত্রী অনার্স মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়ে বের হওয়া শিক্ষার্থীরা যাতে চাহিদা অনুযায়ী কাজের যোগ্যতা অর্জন করতে পারে, কাজ পেতে পারে এবং উদ্যোক্তা হতে পারে সেজন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলামে পরিবর্তন আনার কথা আবারও জানিয়েছেন। তিনি প্রায়ই বলে থাকেন , সব কলেজে অনার্স মাস্টার্সের তেমন কোন প্রয়োজন হয়তো নেই। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষিত বেকার তৈরি হচ্ছে। আমরা সেটা চাইনা। আমরা জনসংখ্যাকে দক্ষ জনসম্পদে রূপান্তর করতে চাই। বেসরকারি কলেজ পর্যায়ে পর্যায়ক্রমে অনার্স- মাস্টার্স বন্ধ করে সেখানে ডিগ্রি স্তরে পড়াশুনা চালু রাখার পরিকল্পনা হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা কলেজগুলো থেকে ডিগ্রি পরীক্ষা দেবে, নানা ধরনের শর্ট কোর্স, ডিপ্লোমা কোর্সগুলো করানো হবে। যেগুলো অনেক বেশি কর্মমুর্খী, আত্মকর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা তৈরিতে উপযুক্ত হবে সে ধরনের কোর্স করানো হবে।

জনসংখ্যাকে দক্ষ জনসম্পদে রূপান্তরিত করতেই সরকার এ পরিকল্পনা নিচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বেসরকারি কলেজ পর্যায়ে অনার্স-মাস্টার্স বন্ধ করার বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তারা কাজ শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে কমিটি করে দেয়া হয়েছে। তবে, নানা ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা করে এ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এখনই কলেজগুলোতে অনার্স- মাস্টার্স বন্ধ করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। এ কাজটি একদিনে হঠাৎ বন্ধ করে দিয়ে করা যাবেনা। যারা এখন অনার্স-মাস্টার্সে ভর্তি হচ্ছেন, তাদের শিক্ষাজীবন শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে। যখন থেকে পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া সম্ভব হবে, তখনই তা করা হবে। তবে, শিক্ষামন্ত্রী জানান যে, সব কলেজেই অনার্স- মাস্টার্স বন্ধ হবেনা। শতবর্ষী ১৩টি কলেজ আছে, বেশ কিছু ভালো কলেজ আছে, যেখানে সব ধরনের উপযুক্ত ব্যবস্থা আছে, সেগুলোতে অনার্স- মাস্টার্স চালোনো হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, বেসরকারি অনার্স কলেজে পড়াশুনা করে অনেকেই চাকরি পাননা। প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে বিরাট একটা ব্যবধান তৈরি হয়ে যায়। যারা এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিযে যান, তাদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়। শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যাপক ইকরাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, বেসরকারি কলেজগুলোকে আরও যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। তাহলে শিক্ষার্থীরা আরও বেশি পরিমাণে প্রায়োগিত জ্ঞান পাবেন। যেটা তাদের চাকরি পেতে সহায়ক হবে। দেশও উপকৃত হবে।’ 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ. আ. ম.স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, এখন বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। এজন্য বহুমুখী উদ্যোগ জরুরি। এর মধ্য অন্যতম হচেছ স্কুল-কলেজগুলোতে পাঠ ও কারিকুলামকে কর্মবান্ধব করে তোলা। এজন্য বেসরকারি কলেজগুলোয় কারিগরি শিক্ষা যোগ করা উচিত। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা সনদধারী বেকার তৈরি করতে চাইনা। প্রধানমন্ত্রী জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছেন। কাজেই যারা অনার্স- মাস্টার্স করবেন, তারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই করবেন। ডিগ্রি পাস কোর্সে পাশাপাশি বিভিন্ন শর্টকোর্সও খোলা হবে। 

এদিকে অনার্স-মাস্টার্স কলেজগুলোতে ডিপ্লোমা ও শর্ট কোর্স চালু করতে কৌশল নির্ধারণে কাজ করছে ১৪ সদস্যের একটি কমিটি। এ কমিটির কেউ কেউ অনার্স কোর্স বন্ধের পক্ষে নন। বলা হচ্ছে, বন্ধে গুরুত্ব নয়, গুরুত্ব দেয়া হচেছ সংশ্লিষ্ট কলেজে ডিপ্লোমা কোর্স চালুর।  অনার্স- মাস্টার্স কোর্স চালুর পাশাপাশি যদি শর্ট কোর্স ডিপ্লোমা কোর্স চালু হয়, তাহলে বন্ধ হলো কোথায়? কৌশল নির্ধারণী কমিটির সভাপতি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য  বলেন, আমরা অনার্স মাস্টার্স কোর্স বন্ধ করাকে প্রাধান্য দিচ্ছিনা। শর্ট কোর্স বা ডিপ্লোমা চালুর বিষয়টি প্রাধান্য দিচ্ছি। অনার্স কোর্স ধরে রেখে তার গুণমান ধরে রাখা হবে। তবে, অনার্স কোর্স সীমিত করার কথাও বলেন তিনি। 

কমিটির সদস্য ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন ড. মো. নাসির উদ্দিন বলেন, কমিটি ২৭টি ডিসিপ্লিনের মধ্যে থেকে ১০টি ডিসিপ্লিনের ওপর কাজ করছে। বাছাই করা কলেজগুলোতে এসব ডিসিপ্লিনের ওপর ডিপ্লোমা ও শর্ট কোর্স চালু করা হবে। এই কোর্স চালু হবে ডিগ্রি পাস ও অনার্স স্তরের পড়াশুনা শেষে। সংশ্লিষ্ট সেক্টরের বিশেষজ্ঞদের এই কাজে যুক্ত করা হচ্ছে। তাদের নিয়েই সিলেবাস, কারিকুলাম তৈরি হবে। ডিপ্লোমা কোর্স বা শর্ট কোর্স পরিচালনার সামর্থ্য আছে শুধু সে কলেজেই এসব ডিসিপ্লিনের কোর্সগুলো চলবে। কমিটির অন্য এক সদস্য বলেন, গ্রামে অনেক অনার্স-মাস্টার্স কলেজ রয়েছে। যেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা হাতে গোনা। এসব কলেজে অনার্স-মাস্টার্স চালুর প্রয়োজন নেই। কোন কোনে কলেজের মানও নেই। নেই অবকাঠামো সুবিধাও। এসব কলেজগুলো চিহ্নিত করা হচেছ, এসব কলেজে অনার্স-মাস্টার্স বন্ধ করা হবে। 

বেসরকারি কলেজের সংশ্লিষ্ট শিক্ষক যাদের সংখ্যা  প্রায় ছয় হাজার তাদের ও তাদের পরিবারের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেছেন, অনার্স মাস্টার্স কোর্স বন্ধের কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। শিক্ষিত বেকার যাতে তৈরি না হন, শিক্ষার্থীরা যদি উচচশিক্ষা অর্জন করতে চান, অনার্স-মাস্টার্স করতে চান তাদের এই কোর্সের পাশাপাশি অন্যান্য পেশাগত কোর্স করার ওপর জোর দেয়ার কথা আমরা বলছি। 

বেসরকারি কলেজ অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকরা বলছেন, ২৮ বছর ধরে কোর্সগুলো চলছে বন্ধ করার বিষয়ে কোন আলোচনা ছিলনা। কিন্তু আমরা যখনই এমপিওভুক্তির দাবির জন্য সোচ্চার হলাম, তখনই অনার্স-মাস্টার্স কোর্স বন্ধের বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরা হলো। এটা অমানবিক। কলেজে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স চালু রেখে এমপিওভুক্তির দাবি জানান তিনি। 

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, কোনো কোনো কলেজে অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকদের বেতন দেয়া হয়না। যে শিক্ষক বেতন পান না, তিনি ক্লাসে কি পড়াবেন? তখন চিন্তা করা হলো, এভাবে কলেজে অনার্স-মাস্টার্স কোর্সে ভর্তি করে ভাল মানের শিক্ষা যদি দিতে না পারি , তার চেয়ে শিক্ষার্থীরা ডিগ্রি পড়ুক। তারপর কিছু শর্ট কোর্স ও ডিপ্লোমা  কোর্স চালু করে দেব, যাতে চাকরি পাওয়া সহজ হয়।

এমপিওভুক্ত কলেজগুলোতে ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে অনার্স-মাস্টার্স স্তরের অনুমোদন দেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, সারাদেশে এ ধরনের মোট ৩১৫টি সরকার অনুমোদিত বেসরকারি কলেজ রয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ বিধিবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত স্কেলে শিক্ষকদের মূল বেতন দেয়ার শর্তে অনার্স-মাস্টার্সের বিষয় পড়ানোর অনুমোদন নেয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কলেজের টিউশন ফি থেকে শিক্ষকদের বেতন ভাতা দেয়ার নির্দেশনা দেয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে। এসব কলেজে ৬ হাজারের মতো শিক্ষক আছেন। আর শিক্ষার্থী আছে ৭ লাখের বেশি। শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, কেউ চাকরি হারাবেন না। এসব শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা বলেছেন মন্ত্রী। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, এই কমিটির শিক্ষকদের বেতন-ভাতার বিষয়ে কিছু বলা ও সিদ্ধান্ত  নেয়ার কোন এখতিয়ার নেই। তিনি জানান কলেজগুলোতে যখন অনার্স -মাস্টার্স  কোর্স অনুমোদন দেয়া হয় তখন শর্ত দেয়া হয়েছিল যে, এমপিওভুক্তি দাবি করতে পারবে না। বেতন ভাতা দেখার দায়িত্ব জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়। 

ইউজিসি বলছে, মাস্টার্স স্তরের শিক্ষা শুধু বাছাই করা শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রাখা উচিত। এখানেও ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী বছাই করা উচিত। বর্তমানে  স্নাতক শেষে নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায় শিক্ষার্থীরা। ইউজিসির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে, দেশের উচচ স্তরে চার বছর মেয়াদী স্নাতক ডিগ্রিকে প্রান্তিক বা সর্বশেষ ডিগ্রি হিসেবে গণ্য করা হয়। কাজেই মাস্টার্স পর্যায়ে শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম কেবলমাত্র বাছাইকৃত স্নাতকদের জন্য উন্মুক্ত রাখা উচিত। স্নাতক পর্যায়ে ডিগ্রি অর্জনের পর সরাসরি মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তির সুযোগ না রেখে উন্মুক্ত প্রতিযোগতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে ভর্তি প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে হবে। এসব বিষয়ে একটি নীতিমালা প্রণয়নের পক্ষে মত দিয়েছে ইউজিসি। 
তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৫০টি সরকারি ও বেসরকারি ১০৭টি মিলিয়ে মোট ১৫৭টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স কোর্স চালু রয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ লাখ ১৯ হাজার, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫হাজার, ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮৩হাজার শিক্ষার্থী পড়ছে। এই তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় বাদে অন্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে ৫৫হাজার। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স পড়ছে ২৩ হাজার। সব মিলিয়ে মাস্টার্সে পড়ছে ৪ লাখ শিক্ষার্থী। ইউজিসি বলছে, এত শিক্ষার্থীর এই স্তরে পড়ার প্রয়োজন নেই। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় ও অনার্স কলেজগুলোতে মাস্টার্স পর্যায়ে পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত অবকাঠামো সুযোগ-সুবিধা এবং যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক না থাকা সত্ত্বেও মাস্টার্স ডিগ্রি প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে । ফলে, এসব প্রতিষ্ঠানে মানসম্মত শিক্ষাদান সম্ভব হচ্ছেনা। ব্যানবেইসের হিসেবে দেশের ৪ হাজার ৭০০ কলেজের মধ্যে মাস্টার্স কলেজ রয়েছে ১৯১টি। এসব কলেজের মধ্যে বেশির ভাগেই নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক। নেই সুযোগ-সুবিধা। ফলে এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা মানসম্মত শিক্ষা পাচ্ছেনা বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। 

২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত ৪১তম প্রতিবেদনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়র অধীনস্ত কলেজগুলোর শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল ইউজিসি । সেই প্রতিবেদনেও মাস্টার্সে ঢালাও ভর্তির বন্ধ করার সুপারিশ করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল যে, দেশের কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশেষ করে কতিপয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনের কলেজ থেকে পাস করা স্নাতকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ। যদিও উচ্চশিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটছে, তবু শিক্ষার প্রত্যাশিত মান নিশ্চিত করা সম্ভব হচেছনা। তবে ইউজিসির এসব সুপারিশের বিরোধিতা করেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, সবার উচ্চশিক্ষার অধিকার থাকা উচিত। নীতিমালা করে উচচশিক্ষার পথ বন্ধ করা কোনভাবেই কাম্য নয়। শিক্ষার্থীরা সুপারিশ সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন। অবকাঠামোগত সুবিধা নেই বিধায় উচচশিক্ষা বন্ধ করে দেয়া হবে সেটি উচচশিক্ষা সংকোচন,  অনেক শিক্ষক নেতারাও এর বিরোধিতা করছেন। তারা বরং অবকাঠামো তৈরি করার কথা বলছেন, শিক্ষক তৈরি করার কথা বলছেন, আরও বলছেন  সরকার কর্মমুখী শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিচেছ তবে উচচশিক্ষার সংকোচন চায় তার প্রমাণ হচেছ বেসরকারি কলেজগুলোর অনার্স স্তরের শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত না করা। 

এ আলোচনাগুলো, সিদ্ধান্ত নেয়ার পদক্ষেপ এবং বিরোধিতা সবগুলোই অত্যন্ত বাস্তব। আমরা দেখতে পাচ্ছি দেশের কলেজগুলো থেকে যারা অনার্স মাস্টার্স করছেন ব্যতিক্রম ছাড়া তাদের অনেককেই চাকরির বাজারে অনেক বেগ পেতে হয়। তাই তার পাশাপাশি একটি কর্মমুখী শিক্ষার কথা, টেকনিক্যাল এডুকেশনের কথা চিন্তা করা হচ্ছে। আমার মনে আছে আমি যখন বরিশাল সরকারি বি এল কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ি, তখন দেখতাম অনেক বড় ভাইয়েরা সেখানে অনার্স ও মাস্টার্স পড়তেন। তাদের অনেকেই ডিগ্রি হোস্টেলে সিট না পেয়ে আমাদের উচ্চ মাধ্যমিকের হোস্টেলে থাকতেন। সেখানে তাদের বয়স্ক বাবা-মা মাসে মাসে টাকা পাঠাতেন, কেউ কেউ এসে টাকা দিয়ে যেতেন। আমার তখন থেকেই মনে হতো এসব ভাইয়েরা যদি উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি একটি টেকনিক্যাল কাজও শিখতেন পারতেন তাহলে এই বৃদ্ধ বাবা-মায়ের কাছ থেকে অর্থ নিতে হতোনা। অনেকবার পত্রিকায়ও লিখেছি,কয়েকবার বড় ফোরামেও কথা বলেছি। বিষয়টি অত্যন্ত জটিল। একদিকে শিক্ষার অধিকার সবার রয়েছে। 

শিক্ষা গ্রহণে কারোর জন্য কোন ধরনের বাধার সৃষ্টি করা যাবেনা। সুকুমার বৃত্তির চর্চা, মানবিক গুণাবলীর চর্চা ও বিস্তার ঘটাতে হবে শিক্ষার মাধ্যমে, সেটি কলেজে হোক, বিশ্ববিদ্যালয়ে হোক, সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যেখানেই হোক না কেন। কর্মমুখী করার উদ্দেশ্যে শিক্ষাকে যান্ত্রিক করা যাবেনা। একজন মানুষ উপার্জন করতে পারবে এজন্য তাকে মানবিক গুণাবলীর চর্চা না করিয়ে শুধু উপার্জন উপযোগী করে তৈরি করলে সমাজে অর্থনৈতিক উন্নতি কিছুটা হবে হয়তো, কিন্তু মানবিক গুণাবলীর কি হবে? তাই, উচচশিক্ষার সংকোচন নয়। যে যে কাজই করুক না কেন, যে বয়সেরই হোক না কেন কেউ যদি চান যে, তিনি উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করবেন তাকে সেই সুযোগ দিতে হবে। এটি রাষ্ট্রের পবিত্র দায়িত্ব। শিক্ষাকে ধরাবাধা , কঠিন নিয়মের শৃঙ্খলে আটকানো যাবেনা। আবার এটিও দেখতে হবে যে, শুধু চাকরির জন্য উচচশিক্ষা গ্রহণ করে কেউ যাতে পরিবার ও সমাজের প্রতি বোঝা হয়ে  না দাঁড়ায়। 

আমাদের দেশে উচচশিক্ষার তিন-চতুর্থাংশ শিক্ষার্থী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে। বিএ, বিএসসি, বিকম অর্থাৎ ডিগ্রি কোর্স যারা করবে তারা যেন সে কোর্সের মধ্যেই আইসিটি, ভাষা ও উদ্যেক্তা হওয়ার বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে পারে সে ব্যবস্থা করার কথা বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী। দেশে-বিদেশে কর্মক্ষেত্রে সুযোগ করে দেবে তেমন বিষয়গুলোতে যেন ডিপ্লোমা করতে পারে তারও ব্যবস্থা করার কথা বলেন। মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে আমরা একমত। এর দ্রুত বাস্তবায়ন প্রয়োজন। 

লেখক : মাছুম বিল্লাহ, কান্ট্রি ডিরেক্টর, ভলান্টিয়ারস অ্যাসোসিয়েশন ফর বাংলাদেশ (ভাব) এবং প্রেসিডেন্ট- ইংলিশ টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ( ইট্যাব)।

প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের - dainik shiksha পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার - dainik shiksha ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031058788299561