জাতীয়করণের ঘোষণা না পেলে আমরণ অনশন - দৈনিকশিক্ষা

জাতীয়করণের ঘোষণা না পেলে আমরণ অনশন

সাঞ্জাবী খান চৌধুরী |

মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে শিক্ষকদের চলমান আন্দোলন কঠোর থেকে কঠোরতর হচ্ছে। গত ১১ জুলাই জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শুরু হওয়া অবস্থান কর্মসূচি আজ শনিবার ১২তম দিনে গড়াবে। কর্মসূচির ১১তম দিনে গতকাল শুক্রবার দাবি আদায়ে রাজপথে অনড় শিক্ষকরা প্রয়োজনে আমরণ অনশনের ঘোষণা দিয়েছেন। মুখ সামলে কথা বলার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিকে। শিক্ষকদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করবেন বলেও সতর্ক করেছেন। একই সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছেন, সরকারিকরণের দাবি পূরণের ঘোষণা না দিলে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাত না পেলে ক্লাসে ফিরে যাবেন না আন্দোলনকারী শিক্ষকরা।   

আন্দোলনের শুরু থেকেই জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে নিয়মিত বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ। গতকাল তিনি বলেন, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বেসরকারি শিক্ষকদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আমরা তার এ বক্তব্যের ধিক্কার জানাই। তিনি আমাদের অস্তিত্বে আঘাত করেছেন। এর জন্য যদি তার অনুভূতিতে একটুও অনুশোচনা না হয়, মাননীয় মন্ত্রী যদি তার কথাবার্তায় সামাল না হন, তিনি যদি বারবার আমাদের অস্তিত্বে আঘাত করতে থাকেন তাহলে আমরা জাতীয়করণের দাবির সঙ্গে তার পদত্যাগও দাবি করবো। 

গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর প্রেস ক্লাব এলাকায় দৈনিক শিক্ষাডটকমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। 

এ শিক্ষক নেতা আরো বলেন, মাননীয় মন্ত্রী একটি বেসরকারি টিভিতে আমাদের অস্তিত্ব নিয়ে টান দিয়েছেন। তিনি আমাদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন, যারা ক্যাডার হতে পারেননি তারা ননক্যাডার হয়েছেন, যারা ননক্যাডার হতে পারেননি তারা এমপিওভুক্তিতে এসেছেন। তিনি আমাদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তার এ কথার প্রতিবাদ তো জানাচ্ছিই, আমরা তার ওই বক্তব্যের ধিক্কার জানাই। শিক্ষামন্ত্রী আমাদের অভিভাবক, সন্তানদের যোগ্যতা নিয়ে কোনো অভিভাবক করতে পারেন না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক শিক্ষক ভালো ভালো চাকরি পাওয়ার যোগ্য ছিলেন। কিন্তু তাদের স্বপ্ন ছিলো শিক্ষক হওয়ার, তাই তারা শিক্ষকতার মহান পেশায় এসেছেন। শিক্ষকতার মতো মহান ব্রত পালন করতে যেয়ে তারা পেটের চিন্তা করেন না, তারা শুধু একটু মান এবং মর্যাদার চিন্তা করেছেন। যদি কোনো শিক্ষক টাকার চিন্তা করতেন তাহলে অনার্স মাস্টার্স পাস করে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে শিক্ষকতায় আসতেন না, অন্য কিছু করতে পারতেন।   

বিটিএ সাধারণ সম্পাদক বলেন, শিক্ষামন্ত্রী যদি শিক্ষকদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, তাহলে আমি বলবো শিক্ষামন্ত্রী নিজেও যোগ্য নন। যখন এসএসসি পরীক্ষার ফল হয় তখন কয়টি সরকারি প্রতিষ্ঠান আর কয়টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রথম সারির ফল করে। মন্ত্রী মহোদয়ের ভাষায় অযোগ্য শিক্ষকরা যদি এসএসসি ও এইচএসসির ফলে প্রথম সারিতে অবস্থান করে নিতে পারে, তাহলে আমি মনে করি তার গবেষণা সঠিক নয়। তার প্রতি অনুরোধ, আমাদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন না। যদি সে প্রশ্ন তোলেন তাহলে জাতীয়করণের দাবির সঙ্গে আরো এক দফা জুড়ে দেবো, শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ না হলে রাজপথ ছেড়ে যাবো না। 

তিনি বলেন, মাননীয় মন্ত্রী ডাক্তার হয়েছেন। কিন্তু আমি বলবো তিনি ঘটনাচক্রে ডাক্তার হয়েছেন। তার স্বপ্ন যদি ডাক্তার হওয়াই থাকতো তাহলে তিনি চিকিৎসা সেবায় থাকতেন, কিন্তু তিনি মন্ত্রী হয়েছেন। তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছিলেন, কিন্তু সফল না হওয়ায় উনাকে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা পরের বার কোনো মন্ত্রণালয় না দিয়ে বসিয়ে রেখেছেন। তারপর শিক্ষামন্ত্রী বানিয়েছেন। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে সফলতা কোথায়? আজকে বই ছাপিয়ে তা প্রত্যাহার করতে হয়। নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হয়েছে। কিন্তু শিক্ষকদের যথাসময়ে প্রশিক্ষণ দিতে পারেননি। ভুলে ভরা বই পাঠিয়ে সেটি আবার সংশোধন করতে হয়। 

তিনি আরো বলেন, গ্রীষ্মের ছুটি শীতকালে গেলো কেনো! গ্রীষ্মের ছুটি কখনো শীতকালে যায়? তিনি আমাদের গ্রীষ্মের ছুটি কেনো বাতিল করেছেন তা আমরা বুঝি। তিনি বলতে চাচ্ছেন আগামী নির্বাচন ডিসেম্বরে হবে তাই গ্রীষ্মের ছুটি শীতে নেয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি শিক্ষকদের আন্দোলন দমিয়ে রাখতে ছুটি বাতিল করেছেন। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনও হয়েছিলো ৩০ ডিসেম্বর। কিন্তু তখনতো ছুটি বাতিল করার প্রয়োজন হয়নি।  

শেখ কাওছার আহমেদ আরো বলেন, শিক্ষামন্ত্রী যখন বলেছিলেন কেউ কেউ ঘটনাচক্রে শিক্ষক হয়েছে, সেদিন আমরা বুঝতে পেরেছিলাম একজন ডাক্তার যখন রাজনীতিবিদ হন তখন তিনি ঘটনাচক্রেই হন। কারণ ডাক্তারের স্বপ্ন হওয়া উচিত মানব সেবা করা। ডাক্তারের স্বপ্ন হওয়া উচিত চিকিৎসা করা। ডাক্তার রাজনীতিবিদ হওয়ার স্বপ্ন থাকার কথা না, কিন্তু আপনি ডাক্তারিতে সফল না হওয়ার কারণে আজকে শিক্ষামন্ত্রী হয়েছেন ঘটনাচক্র। তিনি ডাক্তার হয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়ে একটি উপাধি পেয়েছিলেন ‘উড়ন্ত মন্ত্রী’। 
প্রসঙ্গত, মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে কয়েক হাজার শিক্ষক বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির ব্যানারে গত ১১ জুলাই থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। আরো কিছু সংগঠন একাত্মতা প্রকাশ করেছে। গত ১৬ জুলাই থেকে তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তালা ঝোলানোর কর্মসূচি শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত বুধবার বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে সভায় বসেন শিক্ষামন্ত্রী। সভা শেষে মন্ত্রী জাতীয়করণের বিষয়ে গবেষণায় দুটি আলাদা কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন। তবে আন্দোলনরত শিক্ষকরা সে ঘোষণায় সন্তুষ্ট হননি। তারা মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের সুস্পষ্ট ঘোষণা ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ দাবি করে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা বলছেন, জাতীয়করণের সুস্পষ্ট ঘোষণা বা প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ না পেলে তারা ক্লাসে ফিরে যাবেন না।  

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল  SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির বেশি হলে স্থানীয়ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হতে পারে - dainik shiksha তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির বেশি হলে স্থানীয়ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হতে পারে বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষাখাত - dainik shiksha বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষাখাত আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003993034362793