সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ছাড়াই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রলীগ।
নতুন কমিটি, ভারপ্রাপ্ত কমিটি ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির একাধিক প্রস্তাব কেন্দ্রে দেয়া হলেও জাবি ছাত্রলীগকে গতিশীল করতে কার্যত কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।এছাড়া দীর্ঘদিন যাবৎ হল কমিটি না থাকায় পরিচয়হীনতা নিয়ে ক্যাম্পাস ছাড়ার আক্ষেপ রয়েছে নেতাকর্মীদের।
২০১৬ সালের ডিসেম্বরে জুয়েল রানাকে সভাপতি এবং আবু সুফিয়ান চঞ্চলকে সাধারণ সম্পাদক করে জাবি ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরের বছর ২৮ এপ্রিল ২১৪ জনকে নিয়ে এক বছর মেয়াদে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। সেই কমিটি সাড়ে তিন বছর পার করে ফেলেছে।দেড় বছরের বেশি সময় আগে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন সাধারণ সম্পাদক।
গত বছরের ২ ফেব্রুয়ারি সাংগঠনিক নানা অনিয়মের অভিযোগে সভাপতি জুয়েল রানাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন নেতাকর্মীরা। এরপর থেকে শীর্ষ নেতাদের ছাড়াই চলছে ছাত্রলীগের জাবি শাখা। বর্তমানে যারা জাবি ছাত্রলীগের হাল ধরেছেন তাদেরও ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে বছর দেড়েক আগে।
ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, কোন ইউনিটের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অবর্তমানে সিনিয়র সহসভাপতি ও সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু জাবি ছাত্রলীগের সিনিয়র নেতাদের অধিকাংশই ক্যাম্পাস ছেড়ে দেয়ায় ভারপ্রাপ্ত কমিটি দেয়াও সম্ভব হয়নি। এখন সভাপতির গ্রুপ ছাড়া ছাত্রলীগের বাকি তিন গ্রুপের নেতারা সমন্বয় করে ছাত্রলীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাবি ছাত্রলীগের সাবেক এক সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত কমিটি দেয়া সম্ভব না হলে কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন করে গঠনের উদ্যোগ নিতে হবে। কিন্তু এভাবে কোনো ইউনিট চলতে পারে না।’
ছাত্রলীগের একাধিক সূত্র জানায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় জাবি ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণায় দেরি হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার এক মাসের মধ্যে কমিটি ঘোষণা হতে পারে।
আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’
বর্তমান কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯ থেকে ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ছিলেন। ৪৫তম ব্যাচ এখন স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত। সেই হিসেবে কমিটির অধিকাংশ সদস্যের ছাত্রত্ব নেই। নতুন কমিটিতে পদ পেতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন পদপ্রত্যাশীরা। তবে তাদের অধিকাংশেরই ছাত্রত্ব নেই। এছাড়া বর্তমান কমিটিতে পদ না থাকায় নেতা হওয়ার দৌঁড়ে পিছিয়ে পড়ছেন ছাত্রত্ব থাকা অনেকে। সিনিয়রদের বাঁধারও সম্মুখিন হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
এদিকে দীর্ঘ আট বছর ধরে কোন হলের কমিটি দিতে পারেনি শাখা ছাত্রলীগ। ফলে হল কমিটির পদপ্রত্যাশীদের অধিকাংশই ছাত্রলীগের কোন পরিচয় ছাড়াই ক্যাম্পাস ছেড়েছেন। সবশেষ গত ডিসেম্বরে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির দাবি তোলেন হল কমিটির পদপ্রত্যাশীরা। কিন্তু নিজেদের মতভেদে তা ভেস্তে যায়।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন
মওলানা ভাসানী হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শাখা ছাত্রলীগের কমিটিতে না থেকে হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হয়েছিলাম। এটি স্বপ্নই থেকে গেল। ইতিমধ্যে পদপ্রত্যাশী অনেকেই কর্মজীবনে কিংবা হতাশ হয়ে রাজনীতি থেকে দূরে সরে গেছেন।’
এসব বিষয়ে মন্তব্যের জন্য ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তারা সাড়া দেননি।