যশোরের মনিরামপুরে একটি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে জাল শিক্ষক নিবন্ধন সনদ নিয়ে ৩ জন শিক্ষকতা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘ ১০ বছর তারা এমপিও বাবাদ সরকারের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এমনটাই অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। এদিকে চাকরি বাঁচাতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন অভিযুক্তরা।
স্থানীয় সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানায়, উপাজেলার সুবলকাটি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে ভুয়া শিক্ষক নিবন্ধন সনদে শিক্ষকতা করছেন কল্যাণ কুমার রায়, সন্ধ্যা মন্ডল, শিমুল রায় নামের তিন শিক্ষক। ভূয়া নিবন্ধনের মাধ্যমে এ তিন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পদে নিয়োগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এমপিও বাবদ লাখ লাখ সরকারি টাকা বেতনভাতা ভোগ করছেন। এ তিনজনের মধ্যে কল্যাণ কুমার রায় ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ১ জুলাই প্রতিষ্ঠানে গণিতের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছেন। কল্যাণ কুমার একই বছর ১ নভেম্বর এমপিওভুক্ত হয়েছেন (ইনডেক্স নং- ১০৫২৯৪০)। প্রতিষ্ঠানের দাখিলকৃত তার নিবন্ধন সনদ নম্বর ৩১২১১৪৫১, পাসের সন ২০০৯।
সন্ধ্যা মন্ডল শরীর চর্চা শিক্ষক হিসেবে প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেছেন ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ১ জুলাই। তিনিও ১ জানুয়ারি থেকে সরকারি বেতন হিসেবে এমপিও ভোগ করছেন। তার নিবন্ধন সনদ নম্বর- ০৬৮১৪৫/২০০৭, পাসের বছর ২০০৭। শিমুল রায় বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক হিসেবে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে ১৬ এপ্রিল যোগদান করেন। তার বেতন (ইনডেক্স নম্বর ১০৬২১৭৮)। তার নিবন্ধন সনদ নম্বর-১০০১৫১৩১/২০০৯, পাসের বছর ২০০৯।
অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠান প্রধান শিক্ষক এবং বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের যোগসাজসে সুবলকাটি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে এ তিনজন ভুয়া শিক্ষক নিবন্ধন সনদ দাখিল করে সরকারি টাকা উত্তোলন করছেন । এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে এসব বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার একবার তদন্তও করেছেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে শেষ পর্যন্ত ধামা-চাপা পড়ে যায় এসব অভিযোগ।
জানা গেছে, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের নিবন্ধন সনদের বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। ২০০৫-২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে নিয়োগ পাওয়া এসব নিবন্ধিত শিক্ষকদের সনদের বিস্তারিত তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের। কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়ার শিক্ষকদের নিবন্ধন সনদের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ ও যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে তা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ নির্দেশনা দিয়ে জারি করা চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে আসা তালিকা ও মহাপরিচালকের দপ্তরের এমপিও শিটের তথ্য মিলিয়ে দেখা হবে। কোন শিক্ষকের তথ্যে গরমিল থাকলে তালিকা পাঠানোর দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করবে এনটিআরসিএ।
এ নির্দেশনার আলোকে প্রতিষ্ঠান প্রধান এবং উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষা কর্মকর্তারা বিষয়টি গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখতে মাঠে নেমেছেন। অভিযোগ উঠেছে, কেবল মনিরামপুরের সুবলকাটি বালিকা বিদ্যালয় নয়, অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভুয়া নিবন্ধনে চাকরি নেয়া শিক্ষকের সংখ্যা একেবারেই কম না। ভুয়া নিবন্ধনকারী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ নেয়া শিক্ষকরা ইতোমধ্যে নিজেদের চাকুরী টিকিয়ে রাখতে বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, এই সুযোগে অনেক প্রতিষ্ঠান প্রধান উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নামে অর্থনৈতিক সুবিধা ভোগ করে চলেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত তাদের চাকুরী আদৌ টিকিয়ে রাখতে পারবেন কি-না সে প্রশ্ন আসছে।
এ ব্যাপারে সুবলকাটি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীপক কুমার ঘোষ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, আমার প্রতিষ্ঠানে আগের প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ এদের নিয়োগ দিয়েছেন। বর্তমানে যে পরিস্থিতি তাতে আমি কারোর বিষয়ে দায়িত্ব নিতে বা লুকোচুরি করতে যাবো না।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ কুমার চন্দ্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ভুয়া নিবন্ধন সনদধারী শিক্ষকদের ব্যাপারে যাচাই-বাচায়ের কাজ চলছে। নিবন্ধন সনদে কোন ত্রুটি পরিলক্ষিত হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন কর্তৃপক্ষ।
যশোর জেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল খালেক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, সব নিবন্ধনধারী শিক্ষকদের তালিকা চাওয়া হয়েছে এবং তা এনটিআরসিএতে পাঠানো হচ্ছে। যদি কোন শিক্ষকের নিবন্ধন সনদ ভুয়া প্রমাণিত হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।