জাল সনদপত্র দিয়ে চাকরি নেয়ার অভিযোগে মামলা হয়েছে একজন প্রভাষকের বিরুদ্ধে। শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার জাল সনদপত্র দাখিল করে বদরগঞ্জ সরকারি কলেজে চাকরি নিয়েছিলেন রংপুরের বদরগঞ্জের শামীম আল মামুন। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) নির্দেশে গত ২২ সেপ্টেম্বর তার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। শামীম আল মামুন বদরগঞ্জ সরকারি কলেজের বাংলা অনার্স বিভাগের প্রভাষক।
কলেজ ও এনটিআরসিএ এর সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, শামীম আল মামুন বিগত ২০১১ সালের ২৬ জুন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুয়ায়ি বদরগঞ্জ কলেজের বাংলা (অনার্স) বিভাগে অস্থায়ী ভিত্তিতে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ নেন। ওই নিয়োগ পরীক্ষায় তিনি অন্যান্য শিক্ষাসনদের সঙ্গে শিক্ষক নিবন্ধনের একটি সনদপত্র দাখিল করেন। ২০০৭ সালে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় তার রোল নম্বর ১১০৭০০৩৩, রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৭০০৩৪৯৭ উল্লেখ করা হয়। এতে তিনি (শামীম আল মামুন) এনটিআরসিএ এর রোল ও রেজিস্ট্রেশন ব্যবহার করে একটি হুবহু জাল সনদ তৈরি করে নিয়োগ নেন। সম্প্রতি কিছু কলেজের কতিপয় শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষাসনদ জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে শামীম আল মামুনের সনদটি জাল বলে অভিযোগ তোলা হয়। পরে অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায়, তার সনদপত্রটি ভুয়া।
এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ৩০২ বেসরকারি কলেজকে জাতীয়করণ করা হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসিচব মইনুল হাসান শুধুমাত্র শিক্ষক নিবন্ধনধারী প্রভাষকদের সনদপত্র সঠিক কি-না তা যাছাই করে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয় কলেজের অধ্যক্ষদের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। পরে নিজ নিজ কলেজ থেকে শিক্ষক নিবন্ধনধারী শিক্ষকদের সনদপত্র এনটিআরসিএ দপ্তরে পাঠানো হয়। এতে দেখা যায়, বদরগঞ্জ কলেজের প্রভাষক নিরঞ্জন কুমার রায় ও শামীম আল মামুনের দাখিল করা সনদপত্র দুটি জাল ও ভুয়া। পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য এনটিআরসিএ দপ্তরে সনদপত্র পাঠানো হলে যাছাইশেষে দেখা যায় তাদের সনদপত্র দুটি জাল ও ভুয়া।
প্রভাষক নিরঞ্জন কুমার রায় মিলনের বিরুদ্ধে মামলা হলে গত ২৯ সেপ্টেম্বর জেল থেকে জামিনে ছাড়া পান তিনি। এর মধ্যে শামীম আল মামুন যে রোল ও রেজিস্ট্রেশন ব্যবহার করেছে তা অন্য একজন প্রার্থীর। ওই রোলধারীর নাম শফিকুল ইসলাম, পিতা আনসার আলী সিকদার, মাতা মৃত সুফিয়া বেগম। তার বাড়ি রাজবাড়ী জেলায়। তিনি একজন সহকারী শিক্ষক।
গত ২২ সেপ্টেম্বর এনটিআরসিএ এর সহকারী পরিচালক তাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত পত্রে জানা যায়, শামীম আল মামুনের শিক্ষা নিবন্ধনের সনদপত্র সঠিক নয়। এটি জাল ও ভুয়া। তাজুল ইসলামের মন্তব্য- যেহেতু সনদধারী শামীম আল মামুন জাল জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন মর্মে দালিলিকভাবে প্রমাণিত, তাই উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় মামলা করার জন্য বদরগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষকে অনুরোধ করা হয়। পরে বদরগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মু. মাজেদ আলী খান প্রভাষক শামীমের বিরুদ্ধে বদরগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযুক্ত প্রভাষক শামীম আল মামুন বলেন, আমার সকল সনদপত্র সঠিক আছে। যা কয়েকবারের সরকারি অডিটে সঠিক বলে প্রমাণ মিলেছে। আর অধ্যক্ষ সাহেব হিংসার বশবর্তী হয়ে আমাকে ফাঁসানোর জন্য নানাভাবে চেষ্টা চালাচ্ছেন।
বদরগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মু. মাজেদ আলী খান বলেন, ২০১১ সালে শামীম আল মামুন শিক্ষক নিবন্ধনের একটি ভুয়া ও জাল সনদ দাখিল করে চাকরি নিয়েছেন। পরবর্তীতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সকল নিবন্ধনধারী শিক্ষকদের সনদপত্র এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষের দপ্তরে পরীক্ষার জন্য পাঠানোর পর দেখা যায়, মামুনের সনদপত্র জাল ও ভুয়া। এ কারণে তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা দেওয়ার পরামর্শ দেন কর্তৃপক্ষ।
বদরগঞ্জ থানার ওসি হাবিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, কয়েকদিন ছুটিতে ছিলাম। ওই সময় দায়িত্বে ছিলেন পরিদর্শক (তদন্ত) আরিফ আলী। মামলা নথিভুক্ত হয়েছে কি-না তা আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। বক্তব্য জানতে পরিদর্শক (তদন্ত) আরিফ আলির সঙ্গে কয়েকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।